ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করার পর শুক্রবার বিকালে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তারা।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে।
করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর ছাত্রাবাস থেকে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলে যান। গত মাস থেকে হাসপাতালের কাজে যোগ দেওয়া ইন্টার্ন ডাক্তাররাই শুধু ছাত্রাবাসে ছিলেন।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মেডিকেল ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতাকর্মীরা ওই ছাত্রাবাসে গেলে তাদের সঙ্গে ইন্টার্ন ডাক্তারদের বাক-বিতণ্ডা হয়।
“এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে এবং তাদের বের করে দেয়। রাত ১১টার পর ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় অভিযোগ জানিয়ে ফেরার পথে আমাদের আহ্বায়ক ডা. ওসমান গণি এবং ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক সানি হাসনাইন প্রান্তিকের ওপর হামলা চালানো হয়।”
তাজওয়ার রহমান খান বলেন, তারা রিকশায় ছিলেন। কাচের বোতল দিয়ে তাদের মাথা ও পেটে আঘাত করে হামলাকারীরা।
“বিকালে আসা ওই ২০-২৫ জন হামলায় অংশ নেয়। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করে আনি। তারা এখন নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।”
এ ঘটনায় রাতেই ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন ইন্টার্ন ডাক্তার এম এ আউয়াল রাফি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘদিন ধরে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের হাতে ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের অন্য অংশটি ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
নওফেল ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী গত ১৪ জুলাই দুটি নাজাল ক্যানুলা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হওয়ার পর রাতেই অভিযান চালিয়ে নগরীর জয়নগর এলাকা থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
চকবাজার থানার ওসি মো. রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডা. এম এ আউয়াল রাফি বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন, তাতে ২১ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছাত্রাবাসের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নওফেলের অনুসারী রিয়াজুল ইসলাম জয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহামারীর কারণে অনেকদিন হোস্টেলে না গেলেও সেখানে তাদের জিনিসপত্র রয়ে গেছে। সেজন্যই তারা তারা কয়েকজন বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়েছিলেন।
“তখন তারা আমাদের উপর হামলা চালায় এতে আমাদের চারজন আহত হয়। পুলিশ এসে বলে, শুধু ইন্টার্ন এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থাকবে। তবে রাতে কী হয়েছে সেটা জানি না। বিকালের ঘটনার সাথে রাতের ঘটনাকে জড়িয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে।”
এই পক্ষের আরেকজন মেডিকেল শিক্ষার্থী বলেন, “বিকালের ঘটনায় আমরাও থানায় অভিযোগ করেছি। বিনা উসকানিতে হামলা করা হয়েছিল। রাতে গুলজার মোড়ে কী হয়েছে সেটা আমরা জানি না।
“জয়নগরে এক বন্ধুর বাসায় ছিল আমাদের সহপাঠীরা। সেখান থেকে পুলিশ তাদের গভীর রাতে ধরে নিয়ে যায়।”
এদিকে হামলার ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার কর্মবিরতি চলাকালে তারা মেডিকেল ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। পরে পুলিশ সেগুলো সরিয়ে নেয়।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইন্টার্ন ডাক্তাররা হোস্টেলে ছিল, আপাতত অন্যরা সেখানে থাকার কথা নয়। তাদের মধ্যে কিছু সমস্যা হয়েছে। সন্ধ্যায় ইন্টার্ন ডাক্তারদের আসতে বলেছি। বিভাগীয় প্রধানরাও থাকবেন। আশা করি সমাধান হবে।”
কর্মবিরতির কারণে রোগীদের সেবায় কোনো ‘সমস্যা হচ্ছে না’ দাবি করে তিনি বলেন, “করোনার শুরুর তিন মাস তো উনারা ছিলেন না। তখন সেবা প্রদানে কোনো সমস্যা হয়নি, এখনও হবে না।
“দরিদ্র রোগীদের সেবা এবং হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম আগে। সেটা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করব। কাউকে হাসপাতাল জিম্মি করতে দেওয়া হবে না।
“তাদের বিরোধে দরিদ্র মানুষের সেবা যেন বিঘ্নিত না হয়। কেউ অবরোধ করতে চাইলে করুক। কিন্তু জোর করে হাসপাতালের কাজে কেউ বাধা দিতে পারবেন না।”