মন্ত্রী থাকতে কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে দেখা হয়নি: ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দাবি করেছেন, আট বছর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গে কোনো ঠিকাদারের দেখা হয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2019, 09:50 AM
Updated : 8 Oct 2019, 09:50 AM

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মুদ্রাপাচারে জড়িত থানার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমের একার হাতেই গণপূর্তের কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে সাবেক পূর্তমন্ত্রীর এমন মন্তব্য এল।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ সবুজ উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোশাররফ বলেন, “গণপূর্ত বিভাগের অনেক বদনাম, দুর্নাম আছে। সুনামও আছে। এখন যারা এসব করে...। আমি গর্ণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঁচ বছর, আগে ছিলাম তিন বছর, আট বছর।

“কোনো কন্ট্রাকটরের সাথে আমার দেখা হত না। কোনো ঠিকাদারের সাথে দেখা হত না। তারা চেষ্টা করলেও আমার সাথে দেখা করতে পারত না। যে নিয়ম আছে সরকারের, সে অনুযায়ী যে লোয়েস্ট (বিডার) হবে, সেই কাজ পাবে। সে যেই হোক না কেন। এখানে আমার বা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কিছু করার নেই। আমি দেখব, যে আমার কাজটা ঠিক হচ্ছে কি না।”

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, “যখন প্রথম মন্ত্রী হই তখন গণপূর্ত ছয়তলা পর্যন্ত ভবন করত। বললাম- সব দশতলা হবে।

“আবার দ্বিতীয়বার যখন হলাম, তখন বললাম ১৬ কোটি মানুষ দেশে। ২০ তলার নিচে গণপূর্তের কোনো ভবন হবে না। এখন সব ১৮-২০ তলা হচ্ছে।”

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, গণপূর্তের সক্ষমতা এখন অনেক বেড়েছে। রুপপূর পারমাণবিক প্রকল্পে মাত্র ১৩ মাসে ২০ তলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে।

“সুতরাং আমাদের সক্ষমতা আছে। গণপূর্তের এখন সক্ষমতা বাড়ছে। অনেক বড় প্রকল্পও হাতে আছে। আজিমপুর কলোনিতে সব ভবন ২০ তলা হচ্ছে। মতিঝিল কলোনিতেও হচ্ছে।”

তিনি বলেন “উত্তরায় সবগুলো ১৮তলা বিল্ডিং। একটাও তো পড়ে যায়নি। ভূমিকম্পে হয়েছে, সব তো ঠিক আছে। উত্তরায় তৃতীয় পর্বে যে কোনো ভবনে যান, গিয়ে দেখেন কোয়ালিটি কী। একটা কোয়ালিটি যদি খারাপ হয় তাহলে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করব।”

তবে কেউ কেউ যে দুর্নীতি-অনিয়ম করেন, সে কথাও স্বীকার করেন সাবেক এই মন্ত্রী।

“আমাদের মধ্যে অনেক অসাধু আছে। চিহ্নিত করতে হবে। করে এদের থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ক্যাসিনো বন্ধ হয়েছে। সাধুবাদ জানাই। যেন এসব আর না চলে সে পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা একটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই।”

জাসদের সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল অনুষ্ঠানে বলেন, “কারো কাছে দুই হাজার কোটি টাকা পেলে চারবার ক্রসফায়ার করেন, এটাই জনগণ দেখতে চায়। আপনাদের প্ল্যানিং এটিচিউটডকে স্ট্রংলি অপোজ করি। কোনটা আগে করবেন আর কোনটা পরে করবেন, আর কোনটা করলে মানুষ উপকৃত হবে সে বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে।”

এর উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাদল ভাই কিছুক্ষণ আগে বলেছেন, কেন ওদেরকে গুলি করা হবে না? এই সবুজ উদ্যান ১২ কোটি টাকার জায়গায় আট কোটিতে করেছে। চার কোটি ফেরত গেছে।

“আমি বলতে চাই, চার কোটি টাকা এটাও তো আত্মসাৎ করতে পারত। কিন্তু এটা তো ফেরত গেছে। দুর্নাম যেমন আছে, সুনামও আছে।”

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।

গণপূর্ত বিভাগ আট কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় দুই একর জমির ওপর এই সবুজ উদ্যান গড়ে তুলেছে।

চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় এই ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ সাজানো হয়েছে ওয়াক ওয়ে, জলাধার, ফোয়ারা, বাহারি বাতি আর বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায়।