বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
প্রায় একবছর পরে হওয়া পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মান্নান বলেন, চট্টগ্রাম শহর ও শহরতলীতে যেসব পাহাড় আছে সেগুলোর পাদদেশে বা তলায় যেসব মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে তারাই প্রতিবার দুর্যোগের মুখে পড়েছে।
“পাহাড়ধসে প্রাণহানি যাতে না ঘটে সেজন্য বর্ষা মৌসুমের আগেই ব্যবস্থা নিতে আমরা সভায় মিলিত হয়েছি।’’
আবদুল মান্নান বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে যারা অবৈধভাবে বাস করছে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতে, পানি সরবরাহ না করতে এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে যারা বাস করছে তারা অবৈধভাবে থাকছে। তারা পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাসের বৈধ সংযোগ কোনোভাবে পেতে পারে না। তারা কিভাবে এসব সংযোগ পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হবে উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “পাদদেশ থেকে দূরে সরানোর পর অন্যত্র কোথাও সরানো যায় কি না তা ভাবতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
এছাড়া অবৈধ বসবাসকারীরা যেন গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ না পায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।
ভবিষ্যতে যাতে কোনো জীবনহানি না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পূর্বে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো শৈথিল্য প্রকাশ করলে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ না করলে সরকারকে অবহিত করা হবে।”
প্রতিবছরই চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও কিভাবে তা পুনরায় হচ্ছে জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, “আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করব এবং অতীতের চেয়ে কিছুটা ইফেকটিভ হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন সভায় বলেন, প্রতি বছরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপুর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরে তারা এসে বসতি করছে।
যাদের উচ্ছেদ করা হয় তাদের অধিকাংশই ভাড়াটিয়া উল্লেখ করে তিনি এর স্থায়ী সমাধান দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে নেওয়া পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সমস্যার সমাধান হবে মত দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এর জন্য পাহাড়ের মূল মালিকদের এগিয়ে আসা দরকার। কিন্তু কেউ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে না।
সভার শুরুতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন গত সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন। গত বছরের ১০ জুলাই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সভার শুরুতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৮৪টি পরিবার বসবাস করছে। এসব পাহাড়ের অধিকাংশের মালিক রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বনবিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর আলোকে গত ১১ ও ১২ এপ্রিল নগরীর দুটি স্থানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে শতাধিক স্থাপনা ধ্বংস করে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
বুধবারের সভায় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ওমর ফারুক, প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।