মিতু হত্যার ২ সন্দেহভাজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

চট্টগ্রামে এসপিপত্নী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন দুইজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2016, 06:51 AM
Updated : 5 July 2016, 01:37 PM

মঙ্গলবার সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠাণ্ডাছড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবিরের ভাষ্য।

নুরুল ইসলাম ওরফে রাশেদ (২৭) ও নুরুন্নবী (২৮) নামের ওই দুইজনসহ সন্দেহভাজন মোট পাঁচজনের দেশ ছাড়ায় এ আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওসি বলেন, “ঠাণ্ডাছড়ি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাটি ঘটেছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাশেদ ও নবীকে ধরতে রাতে রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঠাণ্ডাছড়ি এলাকায় অভিযানে যায়।

“তাদের সাথে থাকা সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয়পক্ষের গোলাগুলির পর রাশেদ ও নবীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।”

পরে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান।  

গোলাগুলিতে গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্য- এসআই মো. সিকান্দর, এএসআই মো. আজাহার ও এএসআই ইমাম হোসেন আহত হন বলে দাবি করেছেন সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত রাশেদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ পাঁচটি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।

গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। পরদিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মাহমুদা আক্তার মিতু

ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও গত ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনের গ্রেপ্তারের খবর জানায় পুলিশ।

এরপর ২৮ জুন নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকা থেকে এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেন নামের দুইজনকে দুটি অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, আদালতে জবানবন্দিতে ওয়াসিম ও আনোয়ার বলেছেন, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা নামের একজনের ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। ওই জবানবন্দিতেই রাশেদ, কালু, শাহজাহান ও নবীর নাম আসে।

পরে ওই পাঁচজনের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর পুলিশ ১ জুলাই শাহজাহান এবং মুছার ছোট ভাই সাইদুল ওরফে সাকুকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

তবে গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের বাবা আহাম্মদ হোসেন দাবি করেছিলেন, ২৩ জুন সকালেই তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাশেদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন বলেও দাবি করেন তিনি।

“আমার ছেলে কোনো ঘটনায় জড়িত নয়। দোষী হলে তাকে আদালতে দিক। তা না হলে আমার ছেলেকে আমাকে ফিরিয়ে দিক।”

মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন মুছাকেও গত ২২ জুন বন্দর থানা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তার স্ত্রী।

তিনি বলেন, বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম ও নগর পুলিশের পরির্দশক নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মুছাকে আটক করে নিয়ে আসে।

তবে মুছাকে আটকের কথা অস্বীকার করেন এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ওয়াসিম ও আনোয়ার বলেছে, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে থেকে তারা এটি নিয়ে পরিকল্পনা করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের দিন সকালে জিইসি মোড়ের কাছে ফলের দোকানের সামনে মুছা, কালু, রাশেদ এবং মিতুর বাসার কাছে রাস্তার পাশে নবী ও বিপরীতে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির পাশের রাস্তার মুখে ওয়াসিম অবস্থান নেয়।

হত্যাকাণ্ডের আগে কেউই মিতুকে চিনত না দাবি করে জবানবন্দিতে তারা বলেন, মিতু বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নবী তার পেছনে হেঁটে এসে পেছন থেকে ছুরি মারে।

ওয়াসিম জানায়, নবীর ছুরিকাঘাতের পর মিতু দৌঁড়ে পালাতে চাইলে কালু তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ছুরিকাঘাত করে।

পরে মিতুকে মাথায় গুলি করা হয় বলেও জবানবন্দিতে জানায় ওয়াসিম ও আনোয়ার।