চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলছেন, শুক্রবার ভোর রাতে নগরী থেকে শাহজাহান (২৮)ও রাঙ্গুনিয়া থেকে সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাকু মাইজ্যা (৪৫)নামে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এঘটনায় আগে গ্রেপ্তার ওয়াসিম ও আনোয়ার ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল শাহজাহান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন।
“আর সাইদুল এ মামলায় অন্যতম সন্দেহভাজন মুছার ছোট ভাই। মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কিনতে তিনি সহায়তা করেছিলেন।”
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওয়াসিম জবানবন্দিতে বলেছে হত্যাকাণ্ডের সময় শাহজাহান নিরিবিলি হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণে ছিল।
নবী, কালু, মুছার সঙ্গে ওয়াসিম নিজেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা জনিয়ে জবানবন্দিতে বলেছে, নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করে ও সে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
মুছা ও শাহজাহানকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদের কয়েকজন আগে থেকেই পুলিশের হাতে রয়েছে বলে তাদের স্বজনরা সন্দেহ করলেও সিএমপি কমিশনার তাদের গ্রেপ্তারের খবর অস্বীকার করেন।
গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী।
ঘটনার পরদিন ভোরে গোয়েন্দা পুলিশ নগরীর পাঁচলাইশ থানার বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে, মোটরসাইকেলটি বোয়ালখালী উপজেলা থেকে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে গত ৮ মে চুরি হয় বলে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মোটরসাইকেল চুরির সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাটহাজারী থানার নতুনপাড়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন চোর রনিকে ও পটিয়া থেকে তার সহযোগী আরিফকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবর বের হয়।
এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আট জনকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গত ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ।
তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ওই হামলার ‘অস্ত্র জোগানদাতা’ এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরুতে জঙ্গিদের দায়ী মনে করলেও তদন্তকারীরা এখন বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পেশাদার অপরাধী।
পুলিশ বলছে, তাদের মধ্যে সাইদুলের ভাই কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম শিকদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতির অন্তত আটটি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুছার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে রাঙ্গুনিয়ায় সরকারি বন কর্মচারিদের ওপর হামলা করে গাছ ছিনতাইয়ের দুটি মামলা রয়েছে। একই থানায় ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি ডাকাতি, একটি অস্ত্র ও একটি হত্যা মামলা হয়। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে ইমারত বিধিমালা আইনেও একটি মামলা হয়।
শাহজাহান একই উপজেলার ঘাগড়া কুল রানীর হাটের বাসিন্দা কবির আহমদের ছেলে।