দেশ এখন ‘দোযখের’ সমতুল্য: জি এম কাদের

মেগা প্রজেক্টগুলোতে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 02:49 PM
Updated : 24 Sept 2022, 02:49 PM

আওয়ামী লীগের শাসনে দেশ এখন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

তিনি বলেছেন, “সাধারণ মানুষ যারা পরপারে চলে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে নিকটাত্মীয়রা হয়ত শোকাহত হই। কিন্তু আমার বিশ্বাস, যারা ওপরে চলে যান, তারা মোটামুটি এদেশে থাকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এটি আমরা ধারণা করতে পারি।

“কারণ এ দেশটা এখন কিছুটা হলেও দোযখের সমতুল্য হয়ে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে এটা একটা দোযখের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। মানুষ খেতে পারে না, চলতে পারে না, আয় নেই। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।”

কোথাও কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “নিত্য পণ্যের জন্য টিসিবির লাইনে দুই আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাচ্ছে না। মানুষের এ দেশে থাকা আর দোযখে থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য মনে হচ্ছে না।”

শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর এস এস খালেদ সড়কে দলের এক সভায় একথা বলেন জি এম কাদের।

চলমান মেগা প্রজেক্টগুলোতে কোনো জবাবদিহিতা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এগুলোতে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি হয়েছে বলে সন্দেহের অবকাশ আছে। যখন এখানে মেগা প্রজেক্ট হয় তখন আমরা দেখি সুইস ব্যাংকে এক বছরে চার লক্ষ কোটি টাকা জমা হয়। এ টাকা কোথা থেকে আসে। সাধারণ ব্যবসা থেকে তো আসে না।

“এই দেনার ভার বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে বইতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত হয়ত বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।”

কাদের বলেন, “এই মেগা প্রজেক্টগুলোর ফিজিবিলিটি নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। যখন শুরু করি আর যখন শেষ করি… অনেক দেরীতে। এস্টিমেটের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি খরচ হয়। তখন এটা সম্ভাব্যহীনতা প্রজেক্টে পরিণত হয়। এগুলোতে যত আয় হবে তার চেয়ে দেনার দায় হবে বেশি। বাংলাদেশের জনগণ এই দেনার ভার সহ্য করতে পারবে না।”

দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, “তিন জোটের একটা রূপরেখা ছিল। তাতে আওয়ামী লীগ ছিল, তাদের সঙ্গে জামায়াতও ছিল। তারা সবাই মিলে আমাদের নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। উনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন।

“তখন দাবি ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। আজকে ৩২ বছর পরে বলতে বাধ্য হচ্ছি বাংলাদেশে আজকে যে শাসন ব্যবস্থা চলছে এটাতে উল্টোটাই সফলতা লাভ করেছে। সেটা হলো- ‘স্বৈরতন্ত্র মুক্তি পাক, গণতন্ত্র নিপাত যাক’। এখন দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।”

জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “সবচেয়ে বড় উদ্বেগজনক ঘটনা, এই স্বৈরতন্ত্রকে বৈধ এবং ভালো হিসেবে দেখিয়ে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মী আমাদের সাথে এখন আলাপ করছেন।

“যে কিনা, দেশের জন্য স্বৈরতন্ত্র দরকার। এতে দেশের উন্নয়ন হয়, স্বৈরতন্ত্র হলে দেশের মানুষ ভালো থাকে। এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। গণতন্ত্রের জন্য এদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আজ আপনার ক্ষমতায় গিয়ে বলছেন গণতন্ত্র দরকার নেই, স্বৈরতন্ত্র অনেক ভালো!”

তিনি বলেন, “কী রকম উন্নয়ন হয়? গণতন্ত্র বিহীন উন্নয়ন হলো জবাবদিহিতাহীন কিছু কাঠামো তৈরি করা হয়। যেগুলো জনগণের পক্ষে যায় না। জনগণের বোঝা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। এই যেমন মেগা প্রজেক্টগুলো হচ্ছে।”

দলের প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম উত্তরের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির, রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, জিয়াউদ্দিন বাবলুর ছেলে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদ, বাবলুর স্ত্রী ড. মেহেজেবুন্নেসা, সাবেক সংসদ সদস্য মো ইলিয়াস, সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম, নগর কমিটির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ উপস্থিত ছিলেন।