২৫ বছর দুই চাকরি থেকে নিয়েছেন সরকারি টাকা, অতঃপর ধরা

তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2022, 04:05 PM
Updated : 11 Sept 2022, 04:05 PM

একদিকে ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের সরকারি চাকরি, আরেকদিকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি একটি কলেজে শিক্ষকতা; তথ্য গোপন করে টানা ২৫ বছর একসঙ্গে চালিয়ে গেছেন চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি। উভয় প্রতিষ্ঠান থেকেই সরকারি বেতন নিয়েছেন।

ওই ব্যক্তির নাম কানু কুমার নাথ (৫৯)। বর্তমানে তিনি হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।

জেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষের আলাদা তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রোববার মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম ২ এর উপ পরিচালক আতিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কানু নাথ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব হিসেবে কর্মরত থাকার তথ্য গোপন করে ফটিকছড়ির হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি এমপিওভুক্ত হন এবং কলেজে পদোন্নতিও পান। এভাবে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানে ২৫ বছর ধরে চাকরি করেছেন।

সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দুটি পদে কর্মরত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৫০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯ ধারায় ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, যোগ করেন দুদকের ওই কর্মকর্তা।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের, চট্টগ্রাম ২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কানু কুমার ১৯৯১ সালে হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের সচিব হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আগের চাকরির তথ্য গোপন করে ফটিকছড়ির হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। পরের বছর তিনি কলেজের এমপিওভুক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছিলেন। তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়মিত কলেজের বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।

বিষয়টি নজরে আসার পর ২০২১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টির সত্যতা পেয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। যেখানে তিনি ১৯৯৫ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার থেকে কলেজের চাকরি বাবদ ৫০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এরপর একসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আলাদা একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিও বিষয়টির সত্যতা পায় এবং যা সরকারি চাকরি বিধিমালা, ২০১১ এর লঙ্ঘন বলে মতামত দেয়।

পাশাপাশি কানু নাথের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে তার বেতন স্কেল অবনমন করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাতীয় তথ্য বাতায়নে মির্জাপুর ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে দেওয়া কানু কুমারের নম্বরে ফোন করা হলে এক নারী ধরে বলনে, রঙ নম্বর। তিনি কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।