চট্টগ্রাম নগরী নিয়ে শঙ্কা মেয়রের, ‘পরিত্যক্ত’ থেকে রক্ষা করতে চান

“পলিথিন, প্লাস্টিকের কারণে কর্ণফুলী নদী মৃত্যুর মুখে; কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে না,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2023, 02:30 PM
Updated : 30 April 2023, 02:30 PM

দখল-দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চট্টগ্রামের নাগরিকদের জীবনমান ও ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “বন-পাহাড়-নদী-সমুদ্র নিয়ে প্রকৃতির রানি চট্টগ্রাম। তবে আমরাই সুন্দর চট্টগ্রামকে হীন স্বার্থে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছি।

“আমরা শুধু বস্তুগত উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি, কিন্তু নাগরিকদের জীবনমান বিশেষ করে অবসর বিনোদন আর পরিবেশের ভারসাম্যের কথা ভাবছি না।”

রোববার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ পরিষদের ২৭তম সাধারণ সভায় বক্তৃতাকালে এসব সংকট নিরসনে বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা চান মেয়র।

ওয়াসা লবণাক্ত পানি সরবরাহের ফলে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সবাই ওয়াসার সামর্থ্যের ঘাটতির কথা বলছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ সময়ের অনাবৃষ্টি, কাপ্তাই লেকে পানি শুকিয়ে গিয়ে শ্যাওলার জন্ম আর কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে নোনা পানির প্রবেশের কারণেই যে ওয়াসার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে- তা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই।

 “পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছেন। কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, সাধারণ মানুষকেও কিন্তু চট্টগ্রামকে পরিত্যক্ত নগরী হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করতে হবে।”

প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “পলিথিন, প্লাস্টিকের কারণে কর্ণফুলী নদী মৃত্যুর মুখে। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে না।

“তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করব। আর নদী অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্দখল রোধেও পদক্ষেপ নিব।”

তিনি নগরীতে খেলার মাঠ ও পার্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে তার পরিকল্পনাও জানান।

রেলওয়ের সহায়তা না পাওয়ায় নগরীতে দুটি উন্মুক্ত স্থানের সৌন্দর্য বর্ধনের ‍উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, “মেয়রের পদে বসেই আমি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগ্রাবাদ ঢেবা ও পাহাড়তলি জোড় ঢেবার সৌন্দর্য বর্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দিতে বলি। তবে রেল কর্তৃপক্ষ সহায়তা না করায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।”

রানির দিঘীকে দখলের হাত থেকে বাঁচানো গেলেও, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অতীতে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে চট্টগ্রামের ক্ষতি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিপ্লব উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে দোকান বসিয়ে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ইজারাদাররা সেখানে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও বছরে মাত্র লাখ টাকার জন্য এই মহামূল্যবান স্থান ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।”

নাগরিক সেবা গতিশীল রাখতে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আন্দরকিল্লায় পুরাতন ভবনের স্থলেই ২১তলা ভবন নির্মাণের কাজ মে মাসেই শুরু করা হবে বলে জানান মেয়র।

সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করতে মেয়রের পরিবেশ নিয়ে জানানো উদ্বেগের সমাধানে কাজ করব। মেয়রের সহযোগিতায় আমি পলিথিনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করব।”

তিনি বলেন, “একদিকে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালাবে, অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া ভূমিতে পার্ক-খেলার মাঠ আর রাস্তা বানাবে সিটি করপোরেশন।”

সভায় নগর সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।