কোনো কোনো কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের চেয়ে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। অনেক কেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তা এবং এজেন্টরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
Published : 30 Jul 2023, 01:44 PM
চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট শুরুর পর প্রথম তিন ঘণ্টায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে একেবারেই কম।
রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে কোথাও ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। দুয়েকজন করে ভোটার কিছুক্ষণ পরপর আসছেন, তাদের লাইন ধরতে হচ্ছে না।
বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কারও নির্বাচনী এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের চেয়ে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। অনেক কেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তা এবং এজেন্টরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
রোববার সকাল ৮টায় পৌনে পাঁচ লাখ ভোটারের এ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে। এ আসনের ১৫৬টি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলছে।
নিউ টাইগার পাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ১১৫টি । সেখানে নাছির নামের এক ভোটার বলেন, "লাইন নেই। ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি।"
টাইগার পাস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ৪৫৭৯ জন। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার টিটু কুমার শীল জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রের ১০টি কক্ষে মোট ১৬৯ ভোট পড়েছে।
আমবাগান বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারীদের চারটি এবং পুরুষদের চারটি ভোট কক্ষ রয়েছে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৩৪৬ জন। বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মোট ৪২৪টি।
এ কেন্দ্রে নারীদের ভোট কক্ষে ১২-১৪ জনের লাইন দেখা যায়। একজন ভোটার ইভিএমে কোন বোতাম টিপে ভোট দিতে হবে না বুঝতে পারছিলেন না। তাই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তাকে বলে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন কীভাবে ভোট দিতে হবে।
এ কেন্দ্রে লাইনে থাকা পারভিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "লাইনে ধরেছি প্রায় ৩০ মিনিট। আস্তে আস্তে ভোট হচ্ছে। আশা করি ভোট দিতে পারব। আমি আগে ভোট দিয়েছি। মেশিনে ভোট কীভাবে দিতে হয় তা জানি।"
প্রিজাইডিং অফিসার মো. ইকরামুল হক বললেন, “এখানে শুধু নৌকার এজেন্ট আছে। অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই।"
সকালে লালখান বাজার শহীদনগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাইরে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি দেখা গেলেও ভোটার ছিল কম। এ স্কুলে তিনটি কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে দুইটি নারীদের এবং একটি পুরুষ কেন্দ্র।
৯২ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আতিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ১৯৮ জন। বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৩৫টি ভোট পড়েছে।
৯৪ নম্বর কেন্দ্রে ভোটার দুই হাজার ২৫২ জন, সবাই নারী। বেলা ১১টা পর্যন্ত ৬০টি ভোট পড়েছে। সমান ভোট পড়েছে একই স্কুলের ৯৩ নম্বর কেন্দ্রেও।
শহীদ নগর স্কুলে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর তিনজন এজেন্ট সকালে এসে এজেন্ট কার্ড নিলেও পরে চলে যান বলে জানান প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান।
লালখান বাজার মাদ্রাসায় মোট ভোটার দুই হাজার ৩৬২ জন। সেখানে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৩৮টি ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার সাহেদ আহমদ তপাদার।
এ কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর ৬ জন এবং লাঙল প্রতীকের একজন এজেন্ট দেখা গেছে।
বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি, সেখানে ভোটার উপস্থিতিও বেশি।
পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট মোট ৩ হাজার ১৮২টি। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৭২৪ জন এবং নারী ভোটার ১হাজার ৪৬২ জন।
এ কেন্দ্রে ১১টা পর্যন্ত ৪০২টি ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার মোজাম্মেল হক।
উত্তর কাট্টলী বাসন্তি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১০টি কক্ষে মোট ভোট ২১৯০টি। সেখানে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১১০ ভোট পড়েছে।
স্কুলটির আরেক ভবনে সাতটি ভোট কক্ষ নিয়ে আরেকটি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৪৮৭ জন। সেখানে সকাল ১০টা পর্যন্ত একশর কিছু বেশি ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার মো. ওসমান।
এ আসনের এমপি ছিলেন ডা. আফছারুল আমীন, যার মৃত্যুতে উপ নির্বাচন হচ্ছে। তার এলাকা উত্তর কাট্টলীর ডা. ফজলুল হাজেরা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩১৪৭ জন। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে ১৪৭টি ভোট পড়েছে।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ভোট শুরুর ১০ মিনিট পরই একটি ইভিএম মেশিনে ব্যালট কানেকশন সমস্যা হয়। পাশের কেন্দ্র থেকে কন্ট্রোল মেশিন এনে চালু করতে হয়েছে৷ এখন আরেকটি ইভিএম মেশিনে সমস্যা করছে।"
নিচতলার একটি বুথে দেখা যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কার্ড ঝোলানো খোকন দেবনাথ নামের এক ব্যক্তিসহ দুজন গোপন কক্ষে ব্যালট মেশিন চাপাচাপি করছে।
জানতে চাইলে খোকন দেবনাথ বলেন, "সকাল থেকে এই ইভিএম সমস্যা করছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। প্রিজাইডিং অফিসারকে বলেছি। তারপরও ঠিক হয়নি। আমরা কিছু করিনি। মেশিন ঠিক করছেন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজন।"
পাশের ডা. ফজলুল হাজেরা ডিগ্রি কলেজ একাডেমি মহিলা কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩০৬৮ জন। বেলা ১১ টায় এর নিচতলার ৩ নম্বর বুথে ৩৮৪ ভোটের মধ্যে ৬ ভোট, পাশের ২ নম্বর বুথে ১৫ ভোট, বুথ ৭ এ ৩৮৪ ভোটের এর মধ্যে ৫ ভোট, বুথ ৮ এ ৩৮০ ভোটের মধ্যে ৯ ভোট পড়েছে।
ওই সময় ১ নম্বর বুথে দেখা যায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা বসে বসে মোবাইল দেখছেন। নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট টেবিল মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ৩৮০ ভোটের মধ্যে মোট ৩০ ভোট পড়েছে। বুথে কোনো ভোটার নেই।
এই কেন্দ্রের দোতলা থেকে ভোট দিয়ে নেমে আসছিলেন ভোটার সীমা দাশ। তিনি বলেন, “সহজে ভোট দিতে পেরেছি। কোনো সমস্যা হয়নি।”
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. রবিউল হোসেন জানান, বেলা ১০টা ৪৫ পর্যন্ত মোট ৮৫ ভোট পড়েছে।
নগরীর রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস হাই স্কুলে দুটি কেন্দ্র রয়েছে দুটি। নারী কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার অনীক বড়ুয়া জানান, তার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩৮৯৬। বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩২০টি।
এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সুবর্ণা আক্তার বলেন, “নিম্ন আয়ের মানুষজন যেসব এলাকায় বেশি থাকে, সেখানে প্রার্থী ও তার দলের লোকজন বেশি করে গণসংযোগ করে, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। সে কারণে ভোটার উপস্থিতিও ওইসব এলাকায় বেশি হয়।”
বছরখানেক ধরে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপি এ উপ নির্বাচনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি। দুজন স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী হয়েছেন মোট ছয়জন।
জাতীয় নির্বাচনের মাস পাঁচেক আগে এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই যে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, বিশ্লেষকরা তা আগে থেকেই বলে আসছেন।
ভোটের লড়াইয়ে থাকা ছয় প্রার্থী হলেন– আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মো. শামসুল আলম (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া (ছড়ি), স্বতন্ত্র মনজুরুল ইসলাম ভুঁইয়া (রকেট) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আরমান আলী (বেলুন)।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটারদের বলছি কেন্দ্রে যেতে। ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা অনীহা আছে। তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।"
আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার স্ত্রী হালিশহর এ ব্লকে আলোর ঝুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছে। সেখানে আমি গিয়েছিলাম। কেন্দ্রে কোনো লাইন নেই। ভোটার উপস্থিতি কম।
"ভোটাররা ভয় পান কেন্দ্রে গেলে তাদের বের করে দেবে কিনা। তাই কম যান। দেখি কি হয়। ভোট সুন্দরভাবে হচ্ছে। ইভিএম মেশিন ভালোভাবে কাজ করছে বলে জেনেছি এখন পর্যন্ত।"
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। ভোটাররা ভোট দিয়ে সুন্দর ভাবে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
"সকালের দিকে হয়ত ভোটার একটু কম। বেলা বাড়ার সাথে ভোটার বাড়বে আশা করি। কোনো প্রার্থী এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি।”