‘প্রেমের ফাঁদ’: মা, ছেলে, পুত্রবধূর প্রতারণা চক্র

অপহৃত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে এ চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 04:56 PM
Updated : 7 Oct 2022, 04:56 PM

‘প্রেমের ফাঁদে’ ফেলে টাকা আদায় করার অভিযোগে চট্টগ্রামে তিনজনকে ধরে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার পুত্রবধূ, ছেলে ও তার মা আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে চক্রটি গড়ে তুলেছিল।

দক্ষিণ পতেঙ্গা মুসলিমাবাদ এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার ভোরে ফটিকছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকা লেলাং থেকে এক ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ছখিনা বেগম (৪৬), তার ছেলে  মো. শাহজাহান ওরফে জয় (৩০) ও পুত্রবধূ কণা বেগম (৩০) ।

বুধবার চট্টগ্রামের এক ট্রলার মালিক কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করেন, তার ট্রলারের মাঝি কামরুল হোসেনকে পুরাতন ফিশারিঘাট এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে।

ওই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি জাহেদুল কবির।

যেভাবে অপহরণ

অভিযানে থাকা কোতোয়ালি থানার এসআই মোমিনুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ চক্রের হোতা ছখিনা বেগম। তিনিই মোবাইল ফোনে ‘প্রেমের অভিনয় করে’ কৌশলে নিয়ে ভুক্তভোগীকে আটকে রাখেন। পরে তার ছেলে জয়, ছেলের বৌ কণা এবং তাদের তিন সহযোগী টিপ্পন, নাহিদ, জাবেদ মিলে টাকা আদায় করেন।

“ছখিনা ১৫ দিন ধরে ফোনে কামরুলের সঙ্গে কথা বলে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। বুধবার তাকে ফিশারিঘাট থেকে কৌশলে দক্ষিণ পতেঙ্গা মুসলিমাবাদ এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়।

“সেখানে কামরুলের সাথে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি তোলে। সেখানে তার সহযোগী টিপ্পন, নাহিদ ও জাবেদ গিয়ে হাজির হয়ে তাদের ধরে ফেলার নাটক সাজায়। পরে ছেলে জয় পুলিশ পরিচয় দিয়ে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেয়।”

বুধবারই কামরুলকে ছখিনার বাসা থেকে টিপ্পন, জাবেদ ও নাহিদ ফটিকছড়ির দুর্গম এলাকা লেলাংয়ের পাহাড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়।

চক্রটি বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকজনকে এভাবে আটকে রেখে টাকা আদায় করেছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোমিনুল বলেন, ছখিনা আগেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। বেশিরভাগ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নিজেদের সম্মানের কথা চিন্তা করে টাকা পরিশোধ করলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন না।

“ছখিনা এ কাজে পেশাদার। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন নাম বলেন। কখনও নিজেকে মর্জিনা, কখন শফিনা বলে পরিচয় দেন। বৃহস্পতিবার তাদের আটকের পরও ভিকটিম কামরুলকে উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

“এক পর্যায়ে তিনি কামরুলকে ফটিকছড়িতে রাখার তথ্য জানালে ভোর রাতে কামরুলকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার সাথে থাকা টিপ্পন, নাহিদ ও জাবেদ পালিয়ে যায়।“

টাকা আদায়ে মোবাইল ব্যাংকিং

ওই চক্রটি আটকে রাখা ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য মোবাইল ফোনের আর্থিক সেবা ব্যবহার করে আসছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এসআই মোমিনুল জানান, ছখিনার ছেলে জয় দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় এমএফএস এজেন্টের কাজ করেন। তার দোকানের দুটি এবং তার ও ছখিনার ব্যক্তিগত নম্বরের মাধ্যমে টাকাগুলো নেন। এজেন্ট নম্বরে সংগ্রহ করা টাকাগুলো তারা অপর একটি মার্চেন্ট নম্বরে স্থানান্তর করে ফেলেন।

“চারটি নম্বরের মধ্যে দুটি নম্বর অ্যাপের মাধ্যমে হওয়ায় সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। পরে এজেন্ট নম্বরের সূত্র ধরে পতেঙ্গা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”