জাসিয়ার আরেকটি ঝড়ো সেঞ্চুরি, লতার ৬ রানের আক্ষেপ, সালমার ৫ উইকেট

জয়ের ধারা অব্যাহত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া সংঘের। ফের হোঁচট খেল আবাহনী লিমিটেড, প্রথম জয় পেল গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 03:17 PM
Updated : 7 June 2023, 03:17 PM

প্রথম ব্যাটার হিসেবে আসরে দুটি সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান লতা মণ্ডল। তিনি পারেননি অল্পের জন্য। পরের ইনিংসে এই কীর্তি গড়েন জাসিয়া আক্তার৷ দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ের দিনে অফ স্পিনে পার্থক্য গড়ে দিলেন অভিজ্ঞ সালমা খাতুন।  

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার নারী ক্রিকেট লিগের ম্যাচে সালমা-জাসিয়ার নৈপুণ্যে খেলাঘর সমাজকল্যাণ সংঘকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব৷ ২২৫ রানের লক্ষ্য ৫৮ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।

পাঁচ ম্যাচে মোহামেডানের পঞ্চম জয় এটি। সমান ম্যাচে খেলাঘর জিতেছে ৩টি। 

চলতি লিগে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়ে টানা পঞ্চম জয়ের বড় কারিগর সালমা৷ অভিজ্ঞ অফ স্পিনার ১০ ওভারে ৩ মেডেনসহ স্রেফ ৩০ রান খরচ করেন। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার৷

ভারতীয় অলরাউন্ডার জাসিয়া খেলেছেন ৬৯ বলে ১০৫ রানের ইনিংস। ১১ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা মারেন তিনি। এক ম্যাচ আগে সিটি ক্লাবের বিপক্ষে খেলেন ১০৪ বলে ১৪২ রানের ইনিংস। চলতি লিগে দুই সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটার তিনি।

রান তাড়ায় জাসিয়ার সেঞ্চুরির পাশাপাশি দারুণ ইনিংস খেলেন শারমিন সুপ্তা। ৭ চার ও ১ ছয়ে ১০৭ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে স্রেফ ১৯.৫ ওভারে আসে ১৫৪ রান।

জয়ের জন্য ২ রান বাকি থাকতে আউট হন শারমিন।

ম্যাচের প্রথমভাগে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান খেলাঘরের অধিনায়ক লতা। কিন্তু রুমানা আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে৷ ১১৮ বলে ৯৪ রানের ইনিংসে ৯ চার ও ১টি ছয় মারেন তিনি।

সেঞ্চুরি না পেলেও চলতি লিগে ৫ ম্যাচে ৩৪৩ রান করে ফেলেছেন আসন্ন ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব পাওয়া লতা। রান সংগ্রাহকের তালিকায় এখন তিনিই শীর্ষে। 

এছাড়া তাজ নেহার ৩৮ ও স্বর্ণা আক্তার খেলেন ৪৫ রানের ইনিংস। তিন জনের ভালো ব্যাটিংয়ের পরও সালমার দারুণ বোলিংয়ে খেলাঘরকে বেশি বড় স্কোর গড়তে দেয়নি মোহামেডান। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খেলাঘর সমাজকল্যাণ সংঘ:
৪৯.২ ওভারে ২২৪ (মোসাম্মত সানজিদা ১৭, জান্নাতুল ২, লতা ৯৪, তাজ ৩৮, স্বর্ণা ৪৫, ফাহিমা ৮, সুলতানা ৬, সানজিদা মেঘলা ২, পূজা ০, নাজমুন ০, বৃষ্টি ৪*; সোবহানা ০.৩-০-১৩-০, জাসিয়া ৬.৩-০-৩৬-০, সালমা ১০-৩-৩০-৫, খাদিজাতুল ৯.২-০-২৯-১, রুমানা ১০-০-৪৩-২, আয়েশা ৫-০-৩৪-০, শানু ৮-১-৩৯-২)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব:
৪০.২ ওভারে ২২৫/৬ (জাসিয়া ১০৫, শারমিন ৭৭, আয়েশা ১৭, রুমানা ৩, সানজিদা ২, ফাল্গুনি ৮, সোবহানা ০, ফারজানা ১; পূজা ৬.২-০-২৯-২, সুলতানা ১০-০-৪৮-২, সানজিদা মেঘলা ৫-০-৩১-০, বৃষ্টি ৪-০-২৯-০, তাজ ২-০-১০-০, স্বর্ণা ৮-১-৩৪-১, ফাহিমা ৫-০-৪৪-১)

ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: সালমা খাতুন

মুক্তার স্পিনে আবাহনীকে হারাল রূপালী ব্যাংক

আরও একবার রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদকে জয় এনে দিলেন মুক্তা রবিন্দ্র মাগ্রে। তার দারুণ বোলিংয়ে অল্পেই গুটিয়ে যায় আবাহনী লিমিটেড। পরে ব‍্যাটারদের দৃঢ়তায় অনায়াস জয় পায় মুক্তার দল।

বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রূপালী ব্যাংকের জয় ৮ উইকেটে। ১৮৩ রানের লক্ষ্য ৩১.৪ ওভার হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে নিগার সুলতানার নেতৃত্বাধীন দলটি।

৬ ম্যাচে রূপালী ব্যাংকের পঞ্চম জয় এটি। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে অন্যটি। পাঁচ ম্যাচে আবাহনী হারল দ্বিতীয়বার। 

স্রেফ ২৯ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে আবাহনীকে অল্পেই আটকে রাখেন ভারতীয় অফ স্পিনার মুক্তা। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ছোট লক্ষ্যে ঝড়ো শুরু করেন রূপালী ব্যাংকের ওপেনার সাথি রানি বর্মণ। স্রেফ ৩০ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে খেলেন ৩৬ বলে ৭ চার ও ৩ ছয়ে ৫৪ রানের ইনিংস।

অভিজ্ঞ ব্যাটার ফারজানা হক পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৩৬ বলে। এছাড়া ফারজানা আক্তার ২০ ও নিগার খেলেন ১৯* রানের ইনিংস। 

প্রথম ইনিংসে আবাহনীর পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন জাতীয় দলের কিপার-ব্যাটার শামীমা সুলতানা। এছাড়া মুর্শিদা খাতুন ২৭ ও ইশমা তাজিম করেন ২৯ রান। 

ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি আফিয়া আনাম প্রত্যাশা। ১ রানে আউট হন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মারকুটে ব্যাটিংয়ে আলোচনায় আসা ব্যাটার। 


সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী লিমিটেড:
৪২.৩ ওভারে ১৪২ (আফিয়া ১, শামিমা ৪৮, মুর্শিদা ২৭, ইশমা ২৯, শিভানি ১, জাহানারা ২, একা ৫, ফাতেমা আক্তার ৭, ফাতেমা জাহান ৩*, সাবিকুন ০; নাহিদা ৮-২-৩১-০, মুক্তা ৮.৩-০-২৯-৪, রিতু ৮-০-৩৩-১, দীপা ৬-০-২২-২, আশরাফি ৫-১-১০-১, শরিফা ৭-০-১৫-২)

রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ: ১৮.২ ওভারে ১৪৩/২ (সাথি ৫৪, ফারজানা আক্তার ২০, ফারজানা হক ৫০, নিগার ১৯; জাহানারা ৪-০-১৯-০, ফাতেমা জাহান ৪-০-২৯-০, সাবিকুন ৩-০-৩০-০, ফাতেমা ৩.২-০-২৭-০, ইশমা ৩-০-২১-০, একা ১-০-১২-১)

ফল:
রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদ ৮ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: মুক্তা রবিন্দ্র মাগ্রে

শারমিন-ববিতার ব্যাটে জিতল গুলশান

বিকেএসপির এক নম্বর মাঠে সিটি ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। ২১০ রানের লক্ষ্য ৭ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। 

পাঁচ ম্যাচে গুলশানের প্রথম জয় এটি। ছয় ম্যাচের সবকয়টিই হারল সিটি ক্লাব।

বল হাতে ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৪৮ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচ সেরা গুলশানের ববিতা মিনা।

সিটি ক্লাবকে দুইশ ছাড়া সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর ফাতেমা তুজ জোহরা ও সাবিকুন নাহার। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ১২৬ রানের জুটি। ফাতেমা ১৩০ বলে ৭৮ ও সাবিকুন ৭৮ বলে করেন ৪৬ রান। 

গুলশানের পক্ষে স্রেফ ২৪ রানে ৪ উইকেট নেন রুকাইয়া আহমেদ। 

রান তাড়ায় শুরুতে ধাক্কা খেলেও শারমিন সুলতানা, লেকি চাকমা, ববিতাদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নেয় গুলশান। অধিনায়ক শারমিন খেলেন ৫৬ রানের ইনিংস। ববিতা করেন ৪৮ রান। 

এছাড়া ছোট ছোট ইনিংসে অবদান রাখেন লেকি (২৪), তাহিন তাহেরা (২০), শিরিন আক্তাররা (১৯*)।   

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিটি ক্লাব:
৪৯.৪ ওভারে ২০৯ (তমালিকা ৯, ফাতেমা ৭৮, সাবিকুন ৪৬, জান্নাতুল ফেরদৌস ১৯, শিবানি ০, পিংকি ২১, আফসানা ১১, কামরুন ৬*, রুপা ২, কোহিনুর ৫, জান্নাতুল ফেরদৌসি ০; ববিতা ৬-১-২৩-১, ফুয়ারা ১০-২-৪১-২, লেকি ১-০-১০-০, ঝুমুর ৯-০-৩৭-১, রিয়া ২-০-১৮-০, রুকাইয়া ৮.৪-০-২৪-৪, শিরিন ৮-১-২৬-১, তাহিন ২-০-১৪-০, শারমিন ৩-০-১০-১)

গুলশান ইয়ুথ ক্লাব: ৪৮.৫ ওভারে ২১৩/৬ (নিপা ০, শারমিন ৫৬, লেকি ২৪, ববিতা ৪৮, তাহিন ২০ আহত অবসর, রিমি ৫, শিরিন ১৮*, রিয়া ৯, ঝুমুর ৭*; জান্নাতুল ফেরদৌস ১০-১-৩৮-২, কোহিমুর ৫.৫-০-৩১-১, রুপা ১০-২-২৫-২, তমালিকা ৮-০-৪৪-০, জান্নাতুল ফেরদৌসি ৯-০-৪২-০, কামরুন ১-০-৬-০, আফসানা ৫-০-২৫-০)

ফল: গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ববিতা মিনা

কেরানিগঞ্জকে হারিয়ে কলাবাগানের টানা তৃতীয় জয়

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলে ৪ উইকেটে ১২০ রান করেছে কেরানিগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমি। জবাবে ২৪.১ ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র।

প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর এটি তাদের টানা তৃতীয় জয়। একের পর এক হতাশাজনক পারফরম্যান্স করা কেরানিগঞ্জ হারল টানা ছয় ম্যাচ। 

লো স্কোরিং ম্যাচে ৩৫ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন টুম্পা খাতুন। 

কেরানিগঞ্জের পক্ষে ১০৯ বল খেলে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন শাহানাজ পারভীন। শোভা খানম খেলেন ৭৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংস।

রান তাড়ায় টুম্পার ৩৫ ছাড়া রুবাইয়া হায়দার ২৫ ও অচেনা জান্নাত ২৪ রানের ইনিংস খেলেন। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কেরানিগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমি:
৫০ ওভারে ১২০/৪ (জামিলা ২০, রচনা ০, শাহানাজ ৩৭, সুমাইয়া ৩, শোভা ৩৩, শারমিন ১৯; ফারিহা ৭-০-১৭-০, কুলসুমা ৪-১-১৭-১, মেহেরুন ১০-২-২২-১, মুমতা হেনা ১০-২-১৬-০, লাখি ১০-২-১৭-১, আফিয়া ৮-২-১৯-০, টুম্পা ১-০-৭-০)

কলাবাগান ক্রীড়া চক্র: ২৫.৫ ওভারে ১২৩/৪ (রুবাইয়া ২৫, জুয়াইরিয়া ৯, টুম্পা ৩৫, অচেনা ২৪, প্রাথ্যুশা ৮, আফিয়া ৭; কনা ২-০-১৩-০, শাহানাজ ৭.৫-০-২৮-১, ফারিয়া ৩-০-২৪-০, শারমিন ৫-১-১৭-১, টুম্পা ৫-০-২০-০, পূজা ১-০-১০-০, মাকতুবা ২-০-১০-২)

ফল: কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ৬ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: টুম্পা খাতুন