শুরুর ম্যাচেই নায়ক মাশরাফি, মাহিদুল-প্রান্তিকের ফিফটি, রিশাদের দারুণ বোলিং

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ রাউন্ডে জয় পেয়েছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 01:48 PM
Updated : 21 March 2024, 01:48 PM

গত বছরের লিগে ১৮ উইকেট, এর আগের বছর ২০টি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ যেন মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রিয় মৃগয়া ক্ষেত্র। এবারের আসরের শুরু থেকে খেলতে না পারলেও প্রথমবার মাঠে নেমেই অভিজ্ঞ পেসারের শিকার ৫ উইকেট। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের জয়ের নায়কও তিনি।

একই দিনে বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সের পর মাহিদুল ইসলাম ও প্রান্তিক নওরোজের ফিফটিতে জিতেছে মোহামেডান। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের জয়ে বল হাতে উজ্জ্বল রিশাদ হোসেন।

গাজী গ্রুপ-লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে বৃহস্পতিবার গাজী গ্রুপকে ৬ উইকেটে হারায় রূপগঞ্জ। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ১৩৭ রানের লক্ষ্য ১৩২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে তারা। 

চার ম্যাচে রূপগঞ্জের চতুর্থ জয় এটি। সমানসংখ্যক ম্যাচে গাজী গ্রুপ পেল প্রথম হার।

রূপগঞ্জের জয়ের নায়ক মাশরাফি। চলতি লিগে প্রথমবার খেলতে নেমে ৮ ওভারে স্রেফ ১৯ রানে ৫ উইকেট নেন অভিজ্ঞ পেসার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে মাশরাফির অষ্টম ৫ উইকেট এটি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ৫ উইকেট আছে কেবল আব্দুর রাজ্জাকের (৯টি)।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে মেহেদি মারুফের উইকেট হারায় গাজী গ্রুপ। দ্বিতীয় উইকেটে চাপ সামাল দিয়ে এগোতে থাকেন আনিসুল ইসলাম ও প্রিতম কুমার। ৪৪ বলে দুজন গড়ে ফেলেন ৪০ রানের জুটি। 

পঞ্চম বোলার হিসেবে একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে ফিরতি ক্যাচে প্রিতমকে ফেরান মাশরাফি। পরে নিহাদউজ্জামানের বলে আউট হন দলের সর্বোচ্চ ৪১ রান করা আনিসুল। এরপর আর কেউই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। 

নিজের চতুর্থ ওভারে মাশরাফি ফেরান সাব্বির হোসেন শিকদার ও ফয়সাল আহমেদকে। পরে মইন খান ও মাহফুজুর রহমানকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন ৪০ বছর বয়সী ক্রিকেটার। 

রান তাড়ায় শুরুতে দ্রুত রান তোলেন তৌফিক খান। ১ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় খেলেন ৩৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। ইমরানউজ্জামান, শুভাগত হোম, আমিনুল ইসলামরা হতাশ করলে কিছুটা চাপে পড়ে রূপগঞ্জ। 

পাল্টা আক্রমণে সব সংশয় দূর করে দলকে জেতান চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শামীম হোসেন। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে স্রেফ ৪০ বলে ৫৮ রান যোগ করেন দুজন। 

৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৪ বলে ৪৭ রান করেন রিজওয়ান। ৪ চার ও ১ ছক্কায় শামীম খেলেন ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৩৫.৪ ওভারে ১৩৬ (১৮, আনিসুল ৪১, প্রিতম ১৪, সাব্বির ৬, আল আমিন ১৭, ফয়সাল ০, মইন ১, মাহফুজুর ৬, পারভেজ ৪, মাসুম ১১*, রুয়েল ৫; আল আমিন ৬-১-৩০-০, হালিম ৫-০-২৪-২, নিহাদউজ্জামান ৫-০-২৪-১, শহিদুল ৬-১-২৩-০, মাশরাফি ৮-০-১৯-৫, শুভাগত ৫.৪-২-১৪-১)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ২৮ ওভারে ১৩৭/৪ (ইমরানউজ্জামান ১৫, তৌফিক ৩৬, রিজওয়ান ৪৭*, শুভাগত ০, আমিনুল ১২, শামীম ২৬*; রুয়েল ৫-০-৩৭-১, মাসুম ৪-২-১৪-০, মাহফুজুর ৭-০-৪১-০, পারভেজ ৭-২-১৭-৩, মইন ৩-০-১৪-০, আল আমিন ২-০-১৪-০)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা

মাহিদুল-প্রান্তিকের ফিফটিতে জয়ে ফিরল মোহামেডান

আগের ম্যাচে ৯৪ রানের ইনিংস খেলেও অন্য প্রান্ত থেকে সহায়তা না পাওয়ায় দলকে জেতাতে পারেননি মাহিদুল ইসলাম। চতুর্থ রাউন্ডে তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন প্রান্তিক নওরোজ। দুজনের ফিফটিতে জয়ে ফিরল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় মোহামেডান। ১৮৮ রানের লক্ষ্য ৪৬ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

চার ম্যাচে তাদের তৃতীয় জয় এটি। সমান ম্যাচে পারটেক্স হারল ৩টি।

চলতি লিগে তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে অপরাজিত ৭০ রান করে মোহামেডানের জয়ের নায়ক মাহিদুল। ৭০ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে তার ২০তম ফিফটি এটি। প্রান্তিকের ব্যাট থেকে আসে ৭ চারে ৭৭ বলে ৬০ রান। 

রান তাড়ায় দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও রনি তালুকদার হতাশ করেন। তৃতীয় উইকেটে ১০৬ রানের জুটি গড়েন মাহিদুল ও প্রান্তিক। আজমির আহমেদের বলে প্রান্তিক ফিরলে ভাঙে এই জুটি।

এরপর অল্পেই ফিরে যান চলতি লিগে প্রথম খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ। আরিফুল ইসলাম ও আরিফুল হকও দ্রুত ফিরলেও একপ্রান্তে অবিচল থাকেন মাহিদুল। ৯৬ বলে ২টি করে চার-ছক্কার ইনিংস খেলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান।

এর আগে পারটেক্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন অধিনায়ক মিজানুর রহমান। ৭০ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কা মারেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে তানবীর হায়দারের সঙ্গে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। তানবীরের ব্যাট থেকে আসে ৮১ বলে ৪১ রান। 

মোহামেডানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন আবু হায়দার। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন কামরুল ইসলাম ও আরিফুল হক। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৭ ওভারে ১৮৭ (মুনিম ০, আজমির ২৪, মিজানুর ৫১, আহরার ০, তানবির ৪১, জাহিদউজ্জামান ১৮, মুক্তার ১৬, রাজিবুল ১১, তুফায়েল ১৪, মোহর ১, রাকিবুল ১*; আবু হায়দার ১০-০-৩২-৩, নাসুম ১০-১-২৯-১, কামরুল ৯-০-৪২-২, আরিফুল হক ২-০-১৮-২, আসিফ ৯-০-৩৬-১, আরিফুল ইসলাম ৭-০-২৭-১)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪২.২ ওভারে ১৮৮/৬ (ইমরুল ৯, রনি ১৬, প্রান্তিক ৬০, মাহিদুল ৭০*, মাহমুদউল্লাহ ২, আরিফুল ইসলাম ৩, আরিফুল হক ১৪, আবু হায়দার ৪*; মোহর ৮.২-০-৩৪-২, তুফায়েল ৭-১-২২-০, মুক্তার ৬-০-২১-০, রাজিবুল ৩-০-২৩-০, রাকিবুল ১০-০-৪৫-০, আহরার ২-০-১৯-০, আজমির ৬-০-২০-৩)

ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম

শাইনপুকুরের সহজ জয়

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিকে ৭৩ রানে হারিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ২২৫ রানের লক্ষ্যে ১৯ বল বাকি থাকতেই ১৫১ রানে গুটিয়ে গেছে গাজী টায়ার্স।

চার ম্যাচে শাইনপুকুরের দ্বিতীয় জয় এটি। এখনও প্রথম জয়ের অপেক্ষায় গাজী টায়ার্স।

ব্যাট হাতে ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলার পর বোলিংয়ে ৬ ওভারে স্রেফ ১২ রানে ২ উইকেট নিয়ে শাইনপুকুরের জয়ের নায়ক রবিউল হক।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ শেষ করে এবারের লিগে প্রথম খেলতে নেমে রিশাদ হোসেন নেন তিন উইকেট। দলবদলের সময় তিনি আবাহনী লিমিটেডে নাম লেখালেও সেখানে ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা না থাকায় তাকে শাইনপুকুর ক্লাবে দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শাইনপুকুরের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের সবাই ২০ স্পর্শ করেন। কিন্তু কেউই ৪০ ছাড়াতে পারেননি। দলের সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন ইরফান শুক্কুর। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ঝলমলে ইনিংস খেলা তানজিদ হাসান এদিন ৪৫ বলে করেন ২৭ রান। একই ম্যাচে ঝড় তোলা রিশাদ এখানে করেন ৭ বলে ৮ রানে।

গাজী টায়ার্সের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন গত জানুয়ারিতে অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে খেলে আসা বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধা।

রান তাড়ায় জয়ের তেমন সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি গাজী টায়ার্স। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতার পর পঞ্চম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন শামিম মিয়া ও গাজী তাহজিবুল ইসলাম। ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন শামিম।

৩১ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় গাজী টায়ার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২২৪ (খালিদ ২৪, তানজিদ ২৭, মেহরব ৩২, ইরফান ৩৮, আকবর ২১, রিশাদ ৮, জাওয়াদ ১০, রবিউল ২১, আরাফাত ৩*, মুকিদুল ০; মারুফ ৯.৪-১-৪১-৪, তৌফিক ৮-০-৫৫-০, ইফতেখার ১০-১-২৭-১, মেহরাব ১০-২-৩৮-২, শামিম ৫-০-১৬-১, আরিদুল ৭-১-৩৯-২)

গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি: ৪৬.৫ ওভারে ১৫১ (আশিকুর ৪, ইফতেখার ১৩, হাফিজুর ৭, আশরাফুল ১৯, শামিম ৪৭, তাহজিবুল ৩০, মেহরাব ১৪*, ইফতেখার ২, আরিদুল ৪, তৌফিক ১, মারুফ ০; রবিউল ৬-১-১২-২, আরাফাত ৯-১-২৬-২, মুকিদুল ৬-০-২৯-১, জাওয়াদ ১০-১-২২-২, রিশাদ ৭.৫-০-২৭-৩, মেহেরব ৮-০-৩৪-০)

ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৭৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রবিউল হক