বর্ষসেরা টেস্ট দলে অস্ট্রেলিয়ার ৪, নেই ‘বিগ ফোরের’ কেউ

টানা দ্বিতীয়বারের মতো আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট দলের কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন ভারতের রিশাভ পান্ত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2023, 11:50 AM
Updated : 24 Jan 2023, 11:50 AM

২০১৪ সাল থেকে ব্যাপারটি ছিল নিয়মিত। বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও জো রুটের কেউ না কেউ প্রতিবারই (২০২০ সালে দেওয়া হয়নি) ছিলেন আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট দলে। এবার সেই ধারায় ছেদ পড়ল। ‘বিগ ফোর’ বা ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ নামে পরিচিত সময়ের সেরা চার ব্যাটসম্যানের কারও জায়গা হলো না সেরা একাদশে।

২০২২ সালের বর্ষসেরা টেস্ট দল মঙ্গলবার ঘোষণা করে আইসিসি। সর্বোচ্চ চার জন আছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। ইংল্যান্ডের আছে তিন জন। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন করে।

দুই ওপেনারের একজন উসমান খাওয়াজা। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান আড়াই বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন গত বছরের শুরুতে। ফেরার ম্যাচেই তিনি জোড়া সেঞ্চুরি করেন অ্যাশেজের সিডনি টেস্টে।

এরপর পাকিস্তান সফরে তিনি ৪৯৬ রান করেন ১৬৫.৩৩ গড়ে। যেখানে দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ছিল দুটি নম্বই ছোঁয়া ইনিংস।  

বছরের বাকি সময়ে সাদা পোশাকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফিফটি করেন আরও তিনটি। বছর শেষ করেন ৬৭.৫০ গড়ে ১ হাজার ৮০ রান করে।

একাদশের আরেক ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট গত বছরের মার্চে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে বড় অবদান রাখেন। সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেলেন ১৬০ রানের ম্যারাথন ইনিংস। সঙ্গে সিরিজে ফিফটি করেন দুটি।

এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে দুই টেস্টে জয়ে তিনি খেলেন ৯৪ ও ৫১ রানের দুটি ইনিংস। বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে পার্থ টেস্টে একটি ১১০ রানের ইনিংসসহ করেন মোট ১৭৪ রান।

গত বছর মোট ১৪ ইনিংসে ৬২.৪৫ গড়ে তার রান ৬৮৭।

টপঅর্ডারের তিন নম্বরে আছেন মার্নাস লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান পাকিস্তান সফরে প্রথম টেস্টে খেলেন ৯০ রানের ইনিংস। পরে তার ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি আসে শ্রীলঙ্কা সফরে।

রানের জোয়ার বইয়ে দেন তিনি ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে। চার ইনিংসের তিনটিতেই করেন সেঞ্চুরি, যার একটি ডাবল।

সব মিলিয়ে বছরে ৫৬.২৯ গড়ে লাবুশেন করেন ৯৫৭ রান। 

২০২২ সালে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন বাবর আজম। পাকিস্তান অধিনায়ক গত বছর চারটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি করেন সাতটি।

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তিনি করেন ৩৯০ রান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৩৪৮। মার্চে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ১৯৬ রানের ইনিংস তার ক্যারিয়ার সেরা।

বছরে ৯ ম্যাচে ৬৯.৯৪ গড়ে তিনি করেন ১ হাজার ১৮৪ রান। যে চার দলের বিপক্ষে খেলেছেন, প্রত্যেকের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট থেকে।

টেস্ট ক্রিকেটে গত বছরটা স্বপ্নের মতো কাটিয়ে অনুমিতভাবে সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন জনি বেয়ারস্টো। ইংলিশ ব্যাটসম্যান বছর শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে সেঞ্চুরি করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিজের প্রথম ইনিংসে করেন ১৪০ রান।    

এরপর রানের বন্যা বইয়ে দেন তিনি ইংলিশ গ্রীষ্মে। নিউ জিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে মিলিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে তার রান ছিল ১৩৬, ১৬২, ৭১* ১০৬ ও ১১৪*। ম্যাচে ইনিংসগুলির প্রভাব ছিল দারুণ।

ট্রেন্ট ব্রিজে ম্যাচ জয়ী ১৩৬ রানের ইনিংসটি তিনি খেলেন স্রেফ ৯২ বলে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়ায় শেষ দিনে। লিডসে দলের ৬ উইকেটে ৫৫ রানের ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৬২ রানের ইনিংস খেলেন ১৫৭ বলে। ওই ম্যাচেই চতুর্থ ইনিংসে আরেকটি সফল রান তাড়ায় অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস খেলেন মাত্র ৪৪ বলে। ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে জো রুটের সঙ্গে তার ২৬৯ রানের জুটিতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের নতুন রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। 

বছরে ১০ ইনিংসে ৬ সেঞ্চুরিতে ৬৬.৩১ গড়ে বেয়ারস্টো করেন ১ হাজার ৬১ রান।

দলের অধিনায়ক হিসেবে আছেন বেন স্টোকস। তার নেতৃত্বেই ২০২২ সালে টেস্ট ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক মানসিকতার নতুন যুগের সূচনা করে ইংল্যান্ড। ইংলিশ গ্রীষ্মের শুরুতে দায়িত্ব পেয়ে তিনি দলকে জিতিয়েছেন ৯ টেস্ট।   

এই অলরাউন্ডার ব্যাট-বল হাতেও রাখেন অবদান। ছয় নম্বরে নেমে দুই সেঞ্চুরিতে ৩৬.২৫ গড়ে রান করেন ৮৭০। পেস বোলিংয়ে উইকেট নেন ২৬টি।

আরেকটি দুর্দান্ত বছর কাটিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো একাদশের কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন ভারতের রিশাভ পান্ত। বছরে ১২ ইনিংসে ৬১.৮১ গড় আর ৯০.৯০ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ৬৮০ রান। দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি আছে চারটি।

বছরে তিনি ছক্কা মারেন ২১টি। উইকেটের পেছনে স্টাম্পিং করেন ৬টি, ক্যাচ নেন ২৩টি।

একাদশে তিন বিশেষজ্ঞ পেসারের একজন প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বছরে ১০ টেস্টে ২১.৮৩ গড়ে উইকেট নেন ৩৬টি।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের সেরা অস্ত্র কাগিসো রাবাদাও জায়গা পেয়েছেন একাদশে। গত বছর ৯ টেস্টে তিনি উইকেট নেন ৪৭টি। যে চার দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছেন, সবার সঙ্গেই নিয়েছেন অন্তত ১০ উইকেট।

একাদশের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার ন্যাথান লায়ন। অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার গত বছর ১১ টেস্টে নেন ৪৭ উইকেট।

২০২২ সালে ৪০ বছর বয়সে পা রাখলেও বল হাতে আলো ছড়িয়ে একাদশে জায়গা পেয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসন। ইংলিশ পেসার গত বছর ৯ টেস্টে উইকেট নেন ৩৬টি।

২০২২ সালের বর্ষসেরা টেস্ট দল:

উসমান খাওয়াজা (অস্ট্রেলিয়া), ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), মার্নাস লাবুশেন (অস্ট্রেলিয়া), বাবর আজম (পাকিস্তান), জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড), বেন স্টোকস (অধিনায়ক, ইংল্যান্ড), রিশাভ পান্ত (উইকেটরক্ষক, ভারত), প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া), কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা), ন্যাথান লায়ন (অস্ট্রেলিয়া), জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)