জাতীয় দলের রসদ বাড়াতে চান এইচপির নতুন কোচ

মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসে পরদিন কাজে নেমে পড়েছেন এইচপির নতুন প্রধান কোচ ডেভিড হেম্প।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 01:24 PM
Updated : 24 May 2023, 01:24 PM

সকাল থেকে চলল স্থানীয় কোচদের আলোচনা পর্ব। দুপুর গড়াতে যোগ দিলেন ডেভিড হেম্প। মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি একাডেমি ভবনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিতি পর্ব সেরে নিলেন হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের নতুন কোচ। সেই বৈঠকের ফাঁকে সেখানে এলেন বিসিবি কর্তারাও। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হেম্প জানালেন, এইচপির ক্রিকেটারদের ঘষে-মেজে জাতীয় দল ও ‘এ’ দলে খেলার উপযোগী করে তুলতে চান তিনি। 

 

এইচপির ক্যাম্পের প্রথম দিনে বুধবার তেমন কিছু করেননি ক্রিকেটাররা। দুই দফায় হয় আলোচনা ও পরিচয় পর্ব। বৃহস্পতিবার ইয়ো ইয়ো টেস্ট দিয়ে শুরু হবে ফিটনেস ট্রেনিং। 

দুই বছরের চুক্তিতে এইচপির দায়িত্ব নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন হেম্প। পরদিনই তিনি নেমে পড়েছেন কাজে। দুপুরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে চলে তার আলোচনা পর্ব। 

বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন, এইচপি ইউনিটের প্রধান নাইমুর রহমান, জাতীয় দলের দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারও ছিলেন ওই পর্বে। 

আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন হেম্প। এইচপি, বাংলাদেশ টাইগার্স বা 'এ' দল করা হয় মূলত জাতীয় দলের জন্য ক্রিকেটার তৈরি করতে। হেম্পও সেটিকে নিজের মূল লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে এগোতে চান।

“বাংলাদেশ ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য এটি (এইচপির প্রধান কোচ) খুব গুরুত্বপূর্ণ পদ। আমরা চেষ্টা করছি ক্রিকেটারদের লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে, যেটা মূলত জাতীয় দলের হয়ে খেলা। আমরা একটা মঞ্চ দিতে চাচ্ছি, যেখানে ক্রিকেটাররা শিখবে ও বেড়ে উঠবে এবং পরের ধাপ- 'এ' দলে যাবে। সেখান থেকে তারা জাতীয় দলে যেতে পারে।”

“আমরা এটি কীভাবে বুঝতে পারব? আমার মনে হয়, এই প্রোগ্রাম থেকে কতজন ক্রিকেটার পরবর্তী ধাপে গেল, তা দেখে সাফল্য বোঝা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারা যেন এসব দলের আশপাশেই থাকে এবং হারিয়ে না যায়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্তি ক্রমেই বাড়তে তাকে। এই প্রোগ্রামের ফলে ক্রিকেটার বাছাইয়ের গভীরতা বাড়বে।” 

সাম্প্রতিক সময়ে সাদা বলের ক্রিকেটে দারুণ উন্নতি করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। সে তুলনায় লাল বলের সংস্করণে এখনও নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি পেসাররা। জাতীয় দল থেকে বেশ কয়েকবারই বলা হয়েছে, বিদেশের কন্ডিশনে ভালো করার জন্য ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টের পেসারদের তৈরি করার কথা। 

এইচপির ক্যাম্পেও আছেন ৭ জন পেসার। সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ছিলেন মুশফিক হাসান, রিপন মণ্ডল। দ্বিতীয়টিতে নেওয়া হয়েছে তানজিম হাসানকে। নাহিদ রানা, আশিকুর জামান, আসাদুল্লাহ হিল গালিবরা ঘরোয়া ক্রিকেটে রেখেছেন সম্ভাবনার ছাপ। 

এসব সম্ভাবনাময় পেসারদের বিভিন্ন কন্ডিশনের জন্য প্রস্তুত করতে জাতীয় দলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার বার্তা দিলেন হেম্প।

“আমরা বসে ঠিক করতে পারি কীভাবে ক্রিকেটারদের তৈরি করব। বিভিন্ন কন্ডিশনের জন্য আমরা যথাযথ উইকেট বানিয়ে নিতে পারি। ক্রিকেটাররা কী চায়, তাদের স্কিল সেটের ঘাটতি কোথায় এসব বিষয়ে কাজের ক্ষেত্রে চান্দিকা (হাথুরুসিংহে) ও জাতীয় দলের চাহিদার সঙ্গে সমান্তরালে থাকতে চাই আমরা।” 

“ক্রিকেটারদের এসব বিষয়ে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ কারণেই তাদের এখানে রাখা হয়েছে। তাদেরকে নিজের সেরাটা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারি আমরা। বাংলাদেশে আমরা এমন ক্রিকেটার তৈরি করতে পারি, যারা বিশ্বজুড়ে যে কোনো কন্ডিশনে খেলতে পারে।”

মৃত্যুঞ্জয়, মুশফিকরা ছাড়াও জাতীয় দল, 'এ' দলে খেলা ক্রিকেটার আছেন এবারের এইচপি ক্যাম্পে। এমনকি সবশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা আইচ মোল্লা, প্রান্তিক নওরোজরাও আছেন। পাশাপাশি স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক না হওয়া দুই স্পিনার আরিদুল ইসলাম আকাশ ও নাঈম হোসেন সাকিবকেও রাখা হয়েছে দলে। 

বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটারদের সম্মিলন ঘটায় তাদের রয়েছে বয়সেরও পার্থক্য। কিছুটা চ্যালেঞ্জ হলেও, এটিকে সুযোগ হিসেবেই দেখছেন হেম্প। তরুণ ক্রিকেটারদের যথাযথভাবে তৈরি করে জাতীয় দলের জন্য নির্বাচকদের হাতে বেশি বিকল্পতু লে দিতে চান ৫২ বছর বয়সী কোচ।

“এখানে অনেক সংমিশ্রণ আছে। এই দলের কয়েকজন ক্রিকেটার আরও উঁচু পর্যায়ে খেলেছে। 'এ' দলের সঙ্গে আমাদের ৭-৮ জন (৬ জন) ক্রিকেটার আছে। মূল পার্থক্যটা হলো বয়সে। আমরা তুলনামূলক তরুণ দল পেয়েছি।” 

“দ্রুততম সময়ে তাদেরকে পরবর্তী ধাপে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা। সম্ভব হলে জাতীয় দলটি তরুণ ক্রিকেটার দিয়ে ভরা থাকুক। অথবা যদি প্রয়োজন পড়ে, নির্বাচকদের অন্তত বেশিসংখ্যক ক্রিকেটার দেখার সুযোগ করে দিতে চাই।”

জাতীয় দলের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে কিংবা 'এ' দলের দায়িত্বে থাকা জেমি সিডন্সের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার কথা বললেও, মূল কাজ যে ক্রিকেটারদেরই করতে হবে, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন হেম্প।

“কয়েক মাস আগে চান্দিকার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জেমির সঙ্গে কথা হয়নি। শিগগিরই কথা বলব। তবে এটি কোচদের কিছু নয়। খেলোয়াড় ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিষয়। এখানে দেখার বিষয়, আমরা কীভাবে এটি নিশ্চিত করতে পারি যে তারা বড় ট্রফির জন্য লড়তে পারে, তিন সংস্করণে র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে ওঠা এবং র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে কত জন ক্রিকেটার থাকে। এটি একটি সার্বিক প্যাকেজ যার মাধ্যমে সবকিছু ঠিক রাখা নিশ্চিত করতে হবে।”

নতুন প্রধান কোচ এইচপি ক্যাম্পের ব্যাপারে আশার কথা শোনালেও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির কথা স্বীকার করেন বিসিবির এই বিভাগের প্রধান নাঈমুর। এছাড়া ব্যস্ত সূচির কারণে ক্যাম্পের জন্য ভালো সময় না পাওয়া নিয়েও আক্ষেপ এই বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়কের কণ্ঠে।

“বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো সব (সুযোগ-সুবিধা) দিতে পারিনি। অবকাঠামোগত কিছু ঘাটতি আছে। যেমন মাঠ, ইনডোর, জিম। বৃষ্টির মৌসুমে আমাদের অনেক ভুগতে হয়। এইচপির প্রোগ্রামটা আমাদের বৃষ্টির মৌসুমেই করতে হয়। অন্য সময় খেলোয়াড়েরা ব্যস্ত থাকে। জাতীয় লিগ, বিপিএল, ডিপিএল অনেক কিছু খেলতে হয়। ওই সময় আমরা প্রোগ্রামগুলো করতে পারি না। বিশেষ করে স্কিল ট্রেনিং করা যায় না। যে কারণে এই বৃষ্টির মৌসুমেই করতে হয়। এ কারণে আমার মনে হয়, আমাদের আরও কিছু অবকাঠামোগত উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ইনডোর, জিম।”

এইচপি ক্যাম্পে এবার নতুন কোচের পাশাপাশি ক্রীড়া মনোবিদ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড. ডেভিড স্কটকে। তবে ক্যাম্পের প্রথম ধাপে তাকে পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তার।