টানা ছয় ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল ঢাকা ডমিনেটর্স।
Published : 24 Jan 2023, 09:59 PM
তাসকিন আহমেদের ফুল লেংথ ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারলেন না অভিষিক্ত নাহিদ রানা। বল লাগল স্টাম্পে, বেলস উড়ে গেল প্রায় সীমানার কাছাকাছি। ওই জিং বেলের চেয়েও যেন দ্রুতগতিতে ছুটলেন তাসকিন। ডাগআউটের কাছাকাছি গিয়ে ডাইভ দিতেই তাকে ঘিরে ধরলেন ঢাকা ডমিনেটর্সের বাকি ফিল্ডাররা।
ঢাকার এমন উদ্দাম উদযাপনের কারণটাও বোধগম্য। টানা ছয় ম্যাচ হারের পর মিলেছে পরম আরাধ্য এই জয়, সেটিও স্রেফ ১০৮ রানের পুঁজি নিয়ে!
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার যে লক্ষ্য মনে হচ্ছিল ছোট ও সহজ, সেই রান তাড়ায়ই ৮৪ রানে গুটিয়ে গেছে খুলনা টাইগার্স।
বিপিএলের এর চেয়ে কম রান করে জয়ের নজির আছে একটি। ২০১৩ সালের আসরে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ৯৯ রান করেও ২ রানে জয় পেয়েছিল দুরন্ত রাজশাহী। এছাড়া ২০১৫ সালে বরিশাল বুলস ঠিক ১০৮ রান করেই ১ রানে হারায় সিলেট সুপারস্টারসকে।
ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা সৌম্য সরকার অবশেষে এ দিন পান রানের দেখা। আগের ৭ ম্যাচে স্রেফ ৪৫ রান করা বাঁহাতি ওপেনার ৪৫ বলে করেন ৫৭ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিফটির স্বাদ পান তিনি ১৭ ইনিংস পর!
তবে বাকিদের ব্যর্থতায় বড় হয়নি ঢাকার সংগ্রহ। স্বল্প সেই পুঁজি নিয়েই খুলনাকে আটকে রাখার কাজটি সারেন তাসকিন, আল-আমিন হোসেন, নাসির হোসেনরা।
স্রেফ ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ঢাকার জয় নিশ্চিত করেন আসরে দারুণ বোলিং করতে থাকা তাসকিন। আসরের ৮ ম্যাচে তার উইকেট হলো ১০টি। এছাড়া দুইটি করে উইকেট নেন নাসির ও আল-আমিন।
খুলনাকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ঢাকা টানা ছয় ম্যাচ হারার পর সেই খুলনার বিপক্ষেই আবার দেখা পেল জয়ের। ষষ্ঠ ম্যাচে খুলনার চতুর্থ পরাজয় এটি।
রান তাড়ায় খুলনার শুরুটা খুব ভালো না হলেও সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিল তারা লক্ষ্য ছোট বলেই। প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৮ রান করে তারা। পরের ১০ ওভারে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে তাদের প্রয়োজন ছিল স্রেফ ৫১ রান। কিন্তু এই পথেই মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের ব্যাটিং।
আসরে প্রথম খেলতে নামা শেই হোপকে দিয়ে শুরু। ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে থাকা দল এই ম্যাচের আগে উড়িয়ে আনে ক্যারিবিয়ান এই ওপেনারকে। কিন্তু দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রথম খেলতে নামা ব্যাটসম্যান আলগা শটে বোল্ড হন তাসকিনের বলে (৮ বলে ৩)।
তিন নম্বরে নামা মাহমুদুল হাসান জয়ও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পাওয়ার প্লে শেষের পরের ওভারে তামিম ইকবাল আউট হন ২৩ বলে ৩০ রান করে। সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন উসমান ঘানি।
সেটিই শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকে খুলনার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
১১তম ওভার থেকে ঢাকার ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। ওই ওভারের প্রথম বলেই বিপজ্জনক আজম খানকে ফেরান তাসকিন। এক ওভার পর সালমান ইরশাদের বলে এলবিডব্লিউ অধিনায়ক ইয়াসির। ২৪ বলে ২১ রান করেন তিনি।
আজম-ইয়াসিরের বিদায়ের পরও খুলনার জয়ের সম্ভাবনা ভালোভাবেই ছিল। কিন্তু ১১ বলের মধ্যে ৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
১৪তম ওভারে আমির হামজা হোতাকের বাঁহাতি স্পিনে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন আমাদ বাট। পরের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন আল-আমিন, ফেরান নাহিদুল ও নাসুমকে।
১৬তম ওভারে ফের হামজাকে আক্রমণে আনার কথা ভাবছিল ঢাকা। শেষ মুহূর্তে তাসকিনকে দেওয়া হয় তার নিজের শেষ ওভার করার জন্য।
প্রথম বলেই দারুণ এক বাউন্সারের জবাব পাননি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। শর্ট মিড উইকেটে দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ নেন হামজা। এক বল পর নাহিদকে বোল্ড করে বাঁধনহারা উল্লাসে মাতেন তিনি।
অথচ ম্যাচের শুরুতে ছিল উল্টো চিত্র। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় সংগ্রহ দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। মিজানুর রহমান ১ রানে আউট হন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি উসমান ঘানি ও মোহাম্মদ মিঠুন।
সৌম্য দীর্ঘক্ষণ আগলে রাখেন একপ্রান্ত। দশম ওভার শেষেও তার রান ছিল ২৯ বলে ২৯। পরে খুলনার পাকিস্তানি পেসার আমাদ বাটের ওভারে দুটি ছক্কা ও এক চারে এগিয়ে যান তিনি ফিফটির দিকে। ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটিতে পৌঁছতে বল খেলেন ৩৮টি। উদযাপনেই ফুটে ওঠে, ইনিংসটি কতটা কাঙ্ক্ষিত ছিল তার।
পঞ্চাশের পর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। বোল্ড হয়ে যান নাসুমের ইয়র্কারে।
সৌম্য ছাড়া ঢাকার পক্ষে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন স্রেফ তাসকিন (৯ বলে ১২) ও আল-আমিন (১১ বলে ১০*)। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৬ রান।
ঢাকার ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখে নাহিদুল ৪ ওভারে দুই মেইডেনসহ স্রেফ ৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। বিপিএলে এক ম্যাচে জোড়া মেইডেনের কৃতিত্ব এতদিন ছিল স্রেফ আরাফাত সানির।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনে ৪ ওভারে ১১ রান খরচায় নাসুমের শিকার ৩ উইকেট।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নাহিদুল-নাসুমের এমন বোলিং বৃথা হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ডমিনেটর্স: ১৯.৪ ওভারে ১০৮ (সৌম্য ৫৭, মিজানুর ১, উসমান ০, মিঠুন ০, ব্লেক ৩, নাসির ৫, আরিফুল ৩, তাসকিন ১২, হামজা ১, আল-আমিন ১০*, সালমান ০; নাসুম ৪-০-১১-৩, নাহিদুল ৪-২-৬-৪, সাইফ উদ্দিন ২.৪-০-১৮-১, নাহিদ ৪-০-২০-১, ওয়াহাব ৩-০-২০-১, আমাদ ২-০-২৫-০)
খুলনা টাইগার্স: ১৫.৩ ওভারে ৮৪ (তামিম ৩০, হোপ ৫, জয় ৪, আজম ৪, ইয়াসির ২১, সাইফ উদ্দিন ২, আমাদ ৭, নাহিদুল ৫, নাসুম ৪, ওয়াহাব ০*, নাহিদ ০; তাসকিন ৩.৩-০-৯-৪, সালমান ৩-০-২৩-১, নাসির ৪-০-৩০-২, আল-আমিন ২-০-১৭-২, হামজা ৩-০-৫-১)
ফল: ঢাকা ডমিনেটর্স ২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাসকিন আহমেদ