ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৮০ রানেই অল আউট সৌম্য-সাব্বির-মিঠুনরা

সেই রান তাড়ায় বেশ ভোগান্তির পর শেষ পর্যন্ত জিতে আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 04:23 PM
Updated : 16 August 2022, 06:24 PM

উইন্ডিজ ক্রিকেটের ইউটিউব চ্যানেলের ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘হরর ব্যাটিং।’ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ব্যাটিংয়ের অবস্থা বোঝাতে এর চেয়ে ভালো বিশেষণ আর বুঝি হয় না। ভুতুড়ে ব্যাটিংই বটে! তবে রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ’ দলের ব্যাটিংও খুব জুতসই হলো না। ব্যাটিং বিভীষিকার ম্যাচে অবশ‍্য শেষ পর্যন্ত জয় তাদেরই।

সেন্ট লুসিয়ায় আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল জিতেছে ৪ উইকেটে।

ম্যাচের মূল চিত্র ফুটে ওঠে দুই দলের স্কোরে। ১০০ ওভারের ম্যাচে খেলা হয়নি অর্ধেকও। বাংলাদেশ ‘এ’ ২৩.২ ওভারে গুটিয়ে যায় স্রেফ ৮০ রানে। সেই রান তাড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবিয়ানরা জয় পায় ঠিক ২৩.২ ওভারেই।

ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘাসের ছোঁয়া ছিল। তবে বাউন্স ছিল বেশ। সেটাই কাল হয় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য। ব্যাটসম্যানদের কেউ শট খেলতে গিয়ে কাটা পড়েন বাড়তি বাউন্সের কারণে। কেউ খাবি খান বাউন্স সামলাতে। সব মিলিয়ে চরম দুর্দশা।

অথচে কাগজে-কলমের শক্তিতে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। একাদশের ৭ জনেরই আছে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ মিঠুনরা তো অনেক অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু উইকেটে টিকতেই পারেননি কেউ।

অনভিজ্ঞ ক্যারিবিয়ান পেসাররাই বাংলাদেশের জন্য হয়ে ওঠেন বিভীষিকা। ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাদের সেরা বোলার জাস্টিন গ্রিভস।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের দুর্দাশার শুরু ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই। অ্যান্ডারসন ফিলিপের অনেক বাইরের বলে কাট করে স্লিপে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নাঈম শেখ (৫ বলে ০)। অথচ বলটি ছিল চার মারার মতো।

দারুণ একটি ড্রাইভে চার মেরেই প্রথম রানের দেখা পান সৌম্য সরকার। পরে ফিলিপের বলে দৃষ্টিনন্দন দুটি চার মারেন তিনি। একটি পুল শটে, আরেকটি কাট করে।

কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি তিনি সেই পথচলা (২০ বলে ১৫)। ফিলিপের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করে ক্যাচ তুলে দেন। ফাইন লেগে অনেকটা দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তেজনারাইন চন্দরপল।

তিনে নামা সাইফ হাসান অবশ্য বিদায় নেন সৌম্যর আগেই। শার্মন লুইসের অফ স্টাম্প ঘেষা দারুণ ডেলিভারির জবাব জানা ছিল না তার (৫ বলে ৬)।

দলকে সেই বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। বরং সবচেয়ে বাজে শট খেলেছেন অধিনায়কই। জাস্টিন গ্রিভসের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে দৃষ্টিকটূভাবে জায়গায় দাড়িয়ে পুল খেলে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি ২০ বলে ১২ রান করে।

এই গ্রিভস পরে আরও ধসিয়ে দেন বাংলাদেশর ব্যাটিং। এক ওভারেই ফেরান তিনি সাব্বির রহমান (৬ বলে ৩) ও মাহমুদুল হাসান জয়কে (১৫ বলে ৪)। অফ স্টাম্পের বাইরে বাড়তি লাফানো লেংথ বলে খোঁচা দিয়ে দুজনই আউট হন প্রায় একইভাবে।

এরপর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি ও নাঈম হাসান যখন আউট হলেন শূন্য রানে, বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান তখন ৮ উইকেটে ৫০!

সাতে নামা জাকের আলি অনিক সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিছুটা। রকিবুল হাসান ও মুকিদুল ইসলামকে নিয়ে এই কিপার-ব্যাটসম্যান শেষ দুই জুটিতে যোগ করেন ৩০ রান।

শেষ জুটিতে গ্রিভসকে এক ওভারেই পুল করে চার ও ছক্কা মারেন জাকের। ইনিংস শেষ হয় তার আউটেই। শার্মন লুইসের বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন টেভিন ইমলাক। দলের সর্বোচ্চ ৪১ বলে ২৫ রান আসে জাকেরের ব্যাট থেকে।

রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা হয় বেশ ভালো। উদ্বোধনী জুটিতে তেজনারাইন চন্দরপল ও জশুয়া দা সিলভা গড়েন ৩৫ রানের জুটি।

এরপর তাদের ব্যাটিং লাইন আপ নাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের নতুন বলের দুই বোলার। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি এক ওভারে ফেরান জশুয়া ও টেডি বিশপকে। এক প্রান্ত আগলে রাখা চন্দরপলকে (৩৯ বলে ২৩) বিদায় করেন মুকিদুল ইসলাম। পরে এই পেসারের শিকার টেভিন ইমলাকও।

পেসারদের দিনে দারুণ বোলিং করেন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান। এক ওভার হাত ঘুরিয়ে উইকেটের স্বাদ পান সৌম্য।

তবে শেষ পর্যন্ত অভাবনীয় কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দল। তেমন কিছুর পুঁজিই যে ছিল না!

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টি বৃহস্পতিবার, একই মাঠে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ দল : ২৩.২ ওভারে ৮০ (নাঈম শেখ ০, সৌম্য ১৫, সাইফ ৬, মিঠুন ১২, জয় ৪, সাব্বির ৩, জাকের ২৫, মৃত্যুঞ্জয় ০, নাঈম ০, রকিবুল ৫, মুকিদুল ১*; ফিলিপ ৫-২-১৫-২, লুইস ৪.২-০-২৪-২, গ্রিভস ৭-০-২৫-৪, ম্যাকসুইন ৪-০-১০-১, স্প্রিঙ্গার ৩-০-৪-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল: ২৩.২ ওভারে ৮১/৬ (চন্দরপল ২৩, জশুয়া ১৭, বিশপ ০, ইমলাক ৫, আথানেজ ১৯, স্প্রিঙ্গার ৩, গ্রিভস ৬*, চার্লস ৩*; মুকিদুল ৭.২-০-৩৩-২, মৃত্যুঞ্জয় ৭-০-২৪-২, রকিবুল ৬-০-১৬-১, নাঈম ২-০-৬-০, সৌম্য ১-০-২-১)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ৪ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: জাস্টিন গ্রিভস।