সাকিব-ইবাদতের ছোবলে ১৮৬ রানেই শেষ ভারত

ভারতের বিপক্ষে নিজের সেরা বোলিংয়ে সাকিবের শিকার ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে ইবাদতের উইকেট ৪টি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 09:47 AM
Updated : 4 Dec 2022, 09:47 AM

খেলা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই স্টেডিয়ামের গেটের সামনে দর্শকের লম্বা লাইন। ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার মধ্যেও ক্রিকেট মাঠে দর্শকের ঢল। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ বলে কথা! প্রথম ইনিংসের মাঝামাঝি নাগাদ গ্যালারি প্রায় পরিপূর্ণ। মাঠে আসা সেই দর্শকদের বিনোদনের কমতি রাখলেন সাকিব আল হাসান ও ইবাদত হোসেন। পেস-স্পিনের যৌথ আক্রমণে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ থমকে গেল দুইশর নিচেই। 

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতকে ১৮৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে অনেক আগেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সাকিব আরও একবার চেনালেন নিজের জাত। ৮ মাসের বেশি সময় পর ওয়ানডে খেলতে নেমে তার শিকার ৩৬ রানে ৫ উইকেট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই স্বাদ পেলেন তিনি চতুর্থবার। ভারতর বিপক্ষে আগে ৪ উইকেটও ছিল না তার। 

টেস্ট দলের নিয়মিত পেসার ইবাদত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমেই দেখা পেলেন ৪ উইকেটের। 

ভারতের টপ ও মিডল অর্ডারের অন্যদের ব্যর্থতাই একাই লড়াই করেন লোকেশ রাহুল। এমনিতে ওপেনার হলেও এ দিন পাঁচে নেমে তিনি ৭৩ করেন ৭০ বলে। 

মিরপুরের উইকেট যে খুব ভয়ঙ্কর, তা নয়। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য খুব দারুণও নয়। এই মাঠের প্রথাগত উইকেটের মতোই মন্থর, বল থমকে এসেছে ব্যাটে। স্পিনাররা কিছুটা টার্ন ও গ্রিপ পেয়েছেন শুরু থেকেই। 

ওয়ানডে নেতৃত্বের অভিষেকে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান লিটন দাস। নতুন বলে মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ শুরু করলেও তৃতীয় ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। প্রথম সাফল্যও আসে তার হাত ধরে। 

কিছুটা ধীরগতির শুরুর পর পঞ্চম ওভারে মিরাজকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন শিখর ধাওয়ান (১৭ বলে ৭)। 

পরের ওভারে হাসানকে ছক্কা মেরে পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দেন রোহিত শর্মা। পরের তিন ওভারেও বাউন্ডারি আসে ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাট থেকে। তাতে শুরুর ধাক্কা অনেকটাই সামাল দেয় ভারত। কিন্তু বল হাতে নিয়েই আবার চিত্র পাল্টে দেন সাকিব। প্রথম ওভারেই বিদায় করে দেন তিনি রোহিত ও বিরাট কোহলিকে! 

প্রথমটি অসাধারণ ডেলিভারিতে, পরেরটি লিটনের চোখধাঁধানো ক্যাচে। রোহিত (৩১ বলে ২৭) বুঝতেই পারেননি সাকিবের আর্ম ডেলিভারি। স্পিন করবে ভেবে ব্যাট পেতে দেন তিনি, সাকিবের স্লাইডার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। 

এক বল পরই আরেক জোর ধাক্কা ভারতের। সাকিবের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত কোহলি (১৫ বলে ৯) টাইমিং করতে পারেনি ঠিকমতো। শর্ট কাভারে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন লিটন। 

এরপর ইনিংস মেরামতের পালা। শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে সেই চেষ্টা চালিয়ে যান রাহুল। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সাবলিল। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই সুইপে ছক্কা মারেন সাকিবকে। 

শ্রেয়াসের জন্য পরিকল্পনা ছিল শর্ট বল। একের পর এক শর্ট বল করে যান ইবাদত। তাতে সফলও হন এক পর্যায়ে। মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন এ বছর ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান। ৩৯ বলে ২৪ রান করে তার বিদায়ে ভাঙে ৪৩ রানের জুটি। 

ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি এরপরই পায় ভারত। পঞ্চম উইকেটে ৬০ রান যোগ করেন রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দর। এই জুটি অবশ্য থামতে পারত আরও আগেই। কিন্তু ১২ রানের মিরাজের বলে ওয়াশিংটনের ক্যাচ ছাড়েন ইবাদত। 

নতুন স্পেলে ফিরে সেই জুটি ভাঙেন সাকিব। রিভার্স সুইপ কলে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৯ রান করা ওয়াশিংটন। 

এরপর শাহবাজ আহমেদ রানের খাতা খুলতে দেননি ইবাদত। সাকিব এক ওভারে শার্দুল ঠাকুর ও দিপক চাহারকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। 

স্রোতের বিপরীতে তবু লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন রাহুল। তার ৫ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস শেষ পর্যন্ত থামান ইবাদত। শেষ উইকেটও নেন এই পেসারই। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৫২ বল আগেই। 

ওয়ানডেতে মাত্র দ্বিতীয়বার একই ম্যাচে বাংলাদেশের এক বোলার পেলেন ৫ উইকেট, আরেকজন ৪টি। এবারের আগে ছিল ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেবার আব্দুর রাজ্জাক দিয়েছিলেন ৫ উইকেট, সাকিব ৪টি। 

সেই ম্যাচে ১৯২ রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতেছিল বেশ সহজেই। সাকিবদের অপেক্ষা এবার সেটিরই পুনরাবৃত্তির। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৪১.২ ওভারে ১৮৬ (রোহিত ২৭, ধাওয়ান ৭, কোহলি ৯, শ্রেয়াস ২৪, রাহুল ৭৩, ওয়াশিংটন ১৯, শাহবাজ ০, শার্দুল ২, চাহার ০, সিরাজ ৯, কুলদিপ ২*; মুস্তাফিজ ৭-১-১০-০, হাসান ৭-১-৪০-০, মিরাজ ৯-১-৪৩-১, সাকিব ১০-২-৩৬-৫, ইবাদত ৮.৪-০-৪৭-৪)।