দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের প্রথম দিনে ভালো করতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
Published : 23 May 2023, 08:43 PM
আগের ম্যাচের মতোই উইকেটে তরতাজা সবুজ ঘাস। তবে খেলা শুরুর আগের দিনই কোচ জেমি সিডন্স রায় দিয়ে রেখেছেন, টস জিতে আগে ব্যাট করার উপযুক্ত পিচ। বাংলাদেশ আগে ব্যাটিংয়ের সেই সুযোগটা পেল টস হেরে। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে কোচের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ জাকির হাসান, সাইফ হাসান, আফিফ হোসেনরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান ৫ উইকেটে ১৭৫।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠে মঙ্গলবার বৃষ্টির কারণে খেলা হতে পারেনি প্রথম সেশনে। দুপুর ১টার দিকে খেলা শুরুর সময় ঠিক করা হয়, বাকি সময়টায় খেলা হবে ৭৩ ওভার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতে পারে স্রেফ ৪৯ ওভার। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভালো কিছু করতে পারেনি এই সময়ে।
ইতিবাচক শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি জাকির, সাইফ, আফিফরা। আগের ম্যাচের মতো আকিম জর্ডান, জেইর ম্যাকঅ্যালিস্টারের গতি ও বাউন্সের সামনে নড়বড়ে ছিলেন প্রায় সবাই। আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের সবাই দুঅঙ্ক ছু্ঁলেও কেউ যেতে পারেনি ৪০ পর্যন্তও৷ একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে দিন শেষে অপরাজিত আছেন শাহাদাত হোসেন।
বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল অস্বস্তির। ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন জাকির। বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে একটুর জন্য নাগাল পাননি কিপার জশুয়া দা সিলভা, অল্পের জন্য তা পৌঁছায়নি স্লিপের হাতে।
দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট পেসার অ্যান্ডারসন ফিলিপকে টানা ৪টি চার মারেন জাকির। পুল শটে প্রথম চারের পর দ্বিতীয়টি আসে বাইরের কানায় লেগে। অল্পের জন্য তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ হয়নি সেটি। তবে ফ্লিক ও দারুণ কভার ড্রাইভে পরের দুই চারে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া।
কিন্তু এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। জর্ডানের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ৪ চারে ১৩ বলে করেন ১৮ রান।
আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামের শুরুটা ছিল সাবধানী। নতুন বলে কঠিন সময়টা দেখেশুনে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম ঘণ্টা পেরোনোর পরপর ম্যাকঅ্যালিস্টারের লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি ছোবল দেয় তার হাতে। ৩৬ বলে ১১ রান করে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। সারাদিনে আর মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি।
সাদমান ফিরে গেলে চার নম্বরে নামানো হয় মোহাম্মদ নাঈম শেখকে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের পর প্রথমবার লাল বলে খেলতে নেমে তার শুরুটাও ছিল সাবধানী। প্রথম রান করতে খেলেন তিনি ১১ বল। এরপরও খুব স্বস্তিতে খেলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আউট হন আলগা শটে। অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ারের বল টেনে আনেন তিনি স্টাম্পে (৩১ বলে ৫)।
আগের ম্যাচে ৭১ বলে ৯৫ রানের ইনিংস খেলা সাইফ হাসান এবারও তিনে নেমে শুরুটা করেন আগ্রাসী। চতুর্থ বলে স্কয়ার ড্রাইভে মারেন বাউন্ডারি। পরের বল বাইরের কানায় লেগে পান আরেকটি চার। ওই ওভারে স্কয়ার কাটে বাউন্ডারি পান আরও একটি।
এরপর নিজেকে কিছুটা সংবরণ করেন। কিন্তু এবার আর ইনিংস বড় করতে পারেননি। সিনক্লেয়ারের নিরীহ ডেলিভারি পুরোপুরি ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন তিনি (৫১ বলে ৩১)।
৭৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হয়ে ক্রিজে নেমে আগের ম্যাচের মতোই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন আফিফ। সিনক্লেয়ারকে সুইপ শটে চার মেরে রানের খাতা খোলেন অধিনায়ক। পরের ওভারে বাইরের কানায় লেগে পেয়ে যান দ্বিতীয় বাউন্ডারি।
অন ড্রাইভ ও অফ ড্রাইভে সিনক্লেয়ারকে মারেন জোড়া চার। পরের ওভারে ফিলিপকেও দুইবার পাঠান সীমানায়। আফিফের মারমুখী ব্যাটিংয়ে শাহাদাতের সঙ্গে জুটিতে ৭০ বলে আসে ৫০ রান।
এরপর আক্রমণে এসে জুটি ভাঙেন জর্ডান। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন আফিফ। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চারে ৩৪ বলে ৩৭ রান।
জাকের আলির চোটে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ইরফান শুক্কুর। শুরুটা ভালো করে ইনিংস এগিয়ে নিতে ব্যর্থ তিনিও। দিনের খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ ওভার বাকি থাকতে ফিলিপের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে হকচিয়ে যান ২১ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান। মিড অফে দারুণ ক্যাচ নেন জর্ডান।
পরে আর বিপদ ঘটতে দেননি শাহাদাত ও নাঈম হাসান। শেষ ভাগে ২৯ বল থেকে ১৬ রান যোগ করেন দুজন। শাহাদাত ৭৭ বলে ২৮ ও নাঈম ২০ বলে ১২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ 'এ' দল ১ম ইনিংস: ৪৯ ওভারে ১৭৫/৫ (জাকির ১৮, সাদমান (আহত অবসর) ১৮, সাইফ ৩১, নাঈম শেখ ৫, শাহাদাত ২৮*, আফিফ ৩৭, ইরফান ২১, নাঈম হাসান ১২*; জর্ডান ১১-২-২৪-২, ফিলিপ ১১-০-৬০-১, ম্যাকঅ্যালিস্টার ৯-০-৩১-০, রিফার ৭-২-১৫-০, সিনক্লেয়ার ১১-৩-৩৭-২)