শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৬
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতে ঘুরে দাঁড়ানোর পর এবার সিরিজ নিজেদের করার অভিযানে নামছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে শনিবার দুপুর ৩টায়।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয় ছাড়াও নিজেদের অপরাজিত যাত্রা বজায় রাখার অভিযানও এটি বাংলাদেশের জন্য। এই সংস্করণে ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হারেনি বাংলাদেশ।
এই সময়ের মধ্যে পাঁচ সিরিজের চারটি জিতেছে তারা। ড্র করেছে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষটি। জেতা চার সিরিজের একটি আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৩-০ ব্যবধানে।
তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথমটি হারের পর বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের ঘটনা আছে স্রেফ একটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে প্রথম ম্যাচ ৭ উইকেটে হারলেও পরের দুটি ১২ ও ১৯ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রায় দেড় বছর ধরে সিরিজ না হারার ধারা বজায় রাখতে এবার ফিরিয়ে আনতে হবে ছয় বছর আগেই ওই স্মৃতি।
সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতেও টস জিতলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দুই ম্যাচের মতো এবারও আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে একাদশে ফেরা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বলেছেন, টস জিতলে তিনিও আগে বোলিং নিতেন।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে একই এগারজন নিয়ে খেলছে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস (উইকেটরক্ষক), সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলি, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে একাদশে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কার নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এছাড়া শেষ ম্যাচটিতে সুযোগ পেয়েছেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা ও নুয়ান থুসারা।
আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েছন আভিশকা ফার্নান্দো ও দিলশান মাদুশাঙ্কা। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে নেই মাথিশা পাথিরানা।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (অধিনায়ক) চারিথ আসালাঙ্কা, কুসাল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দাসুন শানাকা, সাদিরা সামারাউইক্রামা, কামিন্দু মেন্ডিস, মাহিশ থিকশানা, নুয়ান থুশারা, বিনুরা ফার্নান্দো।
টি-টোয়েন্টিতে ন্যুনতম তিন ম্যাচের সিরিজে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার একই একাদশ নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথমবার দেখা গেছে এমন ঘটনা। সেবার দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সমতা ফিরিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ ম্যাচ হারায় সিরিজ নিজেদের করতে পারেনি তারা।
অন্তত তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেটার খেলানোর ঘটনা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে খেলেছিলেন ১৮ জন।
শরিফুল ইসলামের চমৎকার বোলিংয়ে উইকেট নেওয়ার আশায় প্রথম ওভারে একটি রিভিউ হারাল বাংলাদেশ।
দারুণ ইন সুইং ডেলিভারিতে ওভারের শেষ তিন বলে ধানাঞ্জয়া ডি সিলভাকে পরাস্ত করেন শরিফুল। এর প্রথম দুটি ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে আঘাত করে প্যাডে। তাই রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ।
শেষ বল সরাসরি প্যাডে লাগায় লম্বা সময় আলোচনার পর রিভিউ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রিপ্লেতে দেখা যায়, বাঁহাতি পেসারের বল চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। তাই বিপদ হয়নি ১ রানে থাকা ধানাঞ্জয়ার।
প্রথম ওভারে ২ রান করেছে শ্রীলঙ্কা।
দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেতে বেশিক্ষণ লাগল না বাংলাদেশের। চতুর্থ ওভারে ধানাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ।
প্রথম তিন ওভারে তেমন সুবিধা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। বেশ কয়েকবার জোরাল আবেদন করেন শরিফুল ইসলাম, তাসকিনরা।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আর আবেদনের দরকার পড়েনি। অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ধানাঞ্জয়ার ব্যাটের ওপরের দিকে লাগে বল। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। ১২ বলে ৮ রান করে ফেরেন ধানাঞ্জয়া।
ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান কামিন্দু মেন্ডিস। ৭ বলে ৭ রানে খেলছেন কুসাল মেন্ডিস।
৩.৫ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১ উইকেটে ২৬ রান।
প্রথম ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কাকে বেশি দূর যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান করেছে সফরকারীরা। ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন ৮ রান করা ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা।
কুসাল মেন্ডিস ১৬ বলে ১৭ ও কামিন্দু মেন্ডিস ৮ বলে ৯ রানে খেলছেন। প্রথম ছয় ওভারে চার বোলার ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে চতুর্থ বলেই সাফল্য পেলেন রিশাদ হোসেন। ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। নিরাপদে ক্যাচ নিয়ে ১২ বলে ১২ রান করা তার বিদায় নিশ্চিত করেন শরিফুল ইসলাম।
ওভারের দ্বিতীয় বলে কুসাল মেন্ডিসের ছক্কায় পঞ্চাশ রান পূর্ণ হয়েছে শ্রীলঙ্কার। ২২ বলে ২৫ রানে খেলছেন কিপার-ব্যাটসম্যান। তাকে সঙ্গ দিতে চার নম্বরে নেমেছেন অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
টি-টোয়েন্টিতে 'প্রিয়' প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও একটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন কুসাল মেন্ডিস। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ বলে মাইলফলক স্পর্শ করলেন শ্রীলঙ্কার কিপার-ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সংস্করণে ৮ ম্যাচে মেন্ডিসের ষষ্ঠ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস এটি। সব মিলিয়ে তার ফিফটি ১৪টি।
কুসালের ব্যাটে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দ্বাদশ ওভারে তারা পূর্ণ করেছে দলের একশ রান।
১২ ওভারে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০১ রান। কুসাল ৩৭ বলে ৫৫ ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১১ বলে ১৪ রানে খেলছেন।
খরুচে বোলিংয়ের পর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মুস্তাফিজুর রহমান। শর্ট ডেলিভারি র্যাম্প শট খেলার চেষ্টায় ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক। ১৩ বলে ১৫ রান করে ফিরলেন তিনি।
হাসারাঙ্গার বিদায়ে ভাঙল ৩১ বলে ৫৯ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। পাঁচ নম্বরে নতুন ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা। পঞ্চাশ পেরিয়ে ৪০ বলে ৬৩ রানে খেলছেন কুসাল মেন্ডিস।
১৩ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১১ রান।
চারিথ আসালাঙ্কাকে বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না শরিফুল ইসলাম। শর্ট ডেলিভারিতে ফাইন লেগে ধরা পড়লেন ৫ বলে ৩ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন কুসাল মেন্ডিস। একই সঙ্গে ছাড়িয়ে যান নিজের আগের সর্বোচ্চ ৭৯ রান।
১৫ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৩৫ রান। কুসাল ৪৭ বলে ৮৩ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১ বলে ১ রানে অপরাজিত।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে আরও বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও পারলেন না কুসাল মেন্ডিস। দারুণ শর্ট ডেলিভারিতে তাকে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ।
পুল করার চেষ্টায় ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে শর্ট মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন লঙ্কান কিপার-ব্যাটসম্যান। ৬টি করে চার-ছক্কায় ৫৫ বলে ৮৬ রান করে ফিরলেন তিনি।
পরপর দুটি দারুণ ওভারে রানের গতিতে কিছুটা বাধ দিয়েছে বাংলাদেশ। ষোড়শ ওভারে স্রেফ ৩ রান দেন রিশাদ হোসেন। পরের ওভারে একটি উইকেটসহ তাসকিনের খরচ ২ রান।
১৭ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪০ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দাসুন শানাকা।
ডেথ ওভারে বোলিংয়ে এসে দুটি বাউন্ডারি হজম করলেও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের উইকেট নিলেন রিশাদ হোসেন। চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে আবারও একই খোঁজে লং অফে ধরা পড়লেন লঙ্কান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৭ বলে ১০ রান করেছেন ম্যাথিউস। নতুন ব্যাটসম্যান সাদিরা সামারাউইক্রামা। ৫ রানে খেলছেন দাসুন শানাকা
১৮ ওভারে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫৩ রান।
ইনিংসের শেষ বলে দারুণ ক্ষিপ্রতায় দাসুন শানাকাকে রান আউট করলেন লিটন কুমার দাস। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৭৪ রানে থামাল বাংলাদেশ।
টস হেরে ব্যাটিং করা সফরকারীদের পক্ষে একাই লড়েছেন কুসাল মেন্ডিস। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ৮৩ রান করেছেন কিপার-ব্যাটসম্যান। ৬টি চারের সঙ্গে তিনি মেরেছেন ৬টি ছক্কা।
লঙ্কানদের আর কোনো ব্যাটসম্যান ২০ রানও করতে পারেননি। শেষ দিকে শানাকা খেলেন ৯ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংস।
বাংলাদেশের পক্ষে ৪ ওভারে স্রেফ ২৫ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনও ধরেন ২ শিকার।
পুরো সিরিজে খরুচে বোলিং করা মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে দেন ৪৭ রান। এবার প্রথম টানা তিন ম্যাচে ৪০ এর বেশি রান দিলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭ (ধানাঞ্জয়া ৮, কুসাল ৮৬, কামিন্দু ১২, হাসারাঙ্গা ১৫, আসালাঙ্কা ৩, ম্যাথিউস ১০, শানাকা ১৯, সামারাউইক্রামা ৭*; শরিফুল ৪-০-২৮-১, তাসকিন ৪-০-২৫-২, মেহেদি ৩-০-২২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৭-১ রিশাদ ৪-০-৩৫-২, সৌম্য ১-০-১১-০)
ইনিংসের প্রথম বলেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত হলেন লিটন কুমার দাস। জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কিছুক্ষণ ভেবে রিভিউ নেয় শ্রীলঙ্কা।
রিপ্লেতে দেখা যায়, বলের পিচিং ও ইমপ্যাক্ট ঠিক আছে। তবে 'উইকেটস' এর বেলায় সেটি আম্পায়ার্স কল। আর মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত 'নট আউট' হওয়ায় কোনো বিপদ ঘটেনি লিটনের।
শুরু থেকেই তাড়াহুড়ো করতে থাকা লিটন কুমার দাস টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। তৃতীয় ওভারে তাকে ড্রেসিং রুমের পথ দেখালেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা।
ওভারের প্রথম বলটি করে সম্ভবত কুচকির টানে মাঠ ছেড়ে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ওভারের বাকি বল করার জন্য আসেন ধানাঞ্জয়া। পুল করতে গিয়ে আগেই ব্যাট চালিয়ে ফেলেন লিটন। স্কয়ার লেগে দারুণ ক্যাচ নেন দাসুন শানাকা।
১১ বলে ৭ রান করেছেন লিটন। তিন নম্বরে নেমেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৫ রান।
অল্পেই বিদায় নিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নুয়ান থুশারার খানিক নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৬ বলে তার সংগ্রহ ১ রান।
চার নম্বরে নেমেছেন তাওহিদ হৃদয়। ৩ বলে ৩ রানে খেলছেন সৌম্য সরকার।
রান তাড়ায় শুরুতেই বিপদে পড়ে গেল বাংলাদেশ। চার ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলেন তিন ব্যাটসম্যান। নাজমুল হোসেন শান্তর পর তাওহিদ হৃদয়কেও বোল্ড করলেন নুয়ান থুশারা।
মিডল স্টাম্প লাইনে পিচ করে দারুণ শেপে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারির জবাব দিতে পারেননি হৃদয়।
স্রেফ ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। থুশারার হ্যাটট্রিক বল খেলতে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ।
সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক করলেন নুয়ান থুশারা। স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের পেসারের কোনো জবাবই দিতে পারলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ।
হ্যাটট্রিক বলটি অফ-মিডল স্টাম্পে পিচ করে সুইং করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে আঘাত করে মাহমুদউল্লাহর প্যাডে। জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন মাহমুদউল্লাহ।
রিপ্লেতে দেখা যায়, ওই বলের 'ইমপ্যাক্ট' ও 'উইকেটস'- দুটিই আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ায় ফিরে যেতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতেন থুশারা।
৪ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৫ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও জাকের আলি।
শ্রীলঙ্কার পঞ্চম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করলেন নুয়ান থুশারা। আগের চারজন- থিসারা পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা (২), আকিলা দানাঞ্জয়া ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এদের মধ্যে মালিঙ্গার প্রথম হ্যাটট্রিকটিও বাংলাদেশের বিপক্ষে।
সব মিলিয়ে এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক এটি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ালেন নুয়ান থুশারা। তার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড ১০ বলে ১১ রান করা সৌম্য সরকার।
স্রেফ ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে বাংলাদেশ। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসান।
উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দারুণ গুগলিতে তিনি ফেরালেন জাকের আলিকে।
রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত হন জাকের। বল প্যাডে লাগতেই আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও কোনো লাভ হয়নি ১৩ বলে ৪ রান করা জাকেরের।
৮.১ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩২ রান। ক্রিজে এখন দুই ব্যাটসম্যান রিশাদ হোসেন ও শেখ মেহেদি হাসান।
নুয়ান থুশারার তোপে রান তাড়ায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। ১০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ মোটে ৪২ রান। বাকি ১০ ওভারে করতে হবে আরও ১৩৩ রান।
৩ ওভারে স্রেফ ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন থুশারা। ড্রেসিং রুমে ফেরা বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু সৌম্য সরকার দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন।
এখন পর্যন্ত ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ রানের জুটি গড়ে খেলছেন শেখ মেহেদি হাসান ও রিশাদ হোসেন।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৭৩, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০২১ বিশ্বকাপে।
অল্পেই ৬ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েছিলেন শেখ মেহেদি হাসান ও রিশাদ হোসেন। তবে এই জুটি বেশি বড় হতে দিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। মেহেদিকে বোল্ড করে ভাঙলেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৩ রানের জুটি।
বড় শটের খোঁজে স্লগ করেন মেহেদি। হাসারাঙ্গার গুগলি তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে। ২ চারে ২০ বলে ১৯ রান করেন মেহেদি।
১৩.২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৭৬ রান। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদ। ১৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত রিশাদ।
পঞ্চদশ ওভারে মাহিশ থিকশানার বলে ৩টি ছক্কা মারলেন রিশাদ হোসেন। ছুঁয়ে ফেললেন বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলার পথে জাকের আলি মেরেছিলেন ৬টি ছক্কা। এক ম্যাচ পর তার পাশে বসলেন রিশাদ। সুযোগ থাকছে জাকেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
তিন ছক্কার ওভারে একশ রানও পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। ১৫ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১০২ রান। ২৪ বলে ৪৫ রানে খেলছেন রিশাদ।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমণে ঝড় তুললেন রিশাদ হোসেন। একে একে ৭ ছক্কায় করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। গড়লেন বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬টি ছক্কা মেরেছিলেন জাকের আলি। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া ছক্কায় স্রেফ ২৬ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন রিশাদ।
আট বা তার নিচে নেমে ফিফটি করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান রিশাদ। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ নম্বরে নেমে ২৬ বলে ৫২ রান করেছিলেন আফিফ হোসেন।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১১৫ রান। ২৭ বলে ৫২ রানে খেলছেন রিশাদ। তাসকিন আহমেদ করেছেন ৭ বলে ১৩ রান।
মাহিশ থিকশানার বলে অন সাইডে বড় শটের চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারলেন না তাসকিন আহমেদ। বল প্যাডে আঘাত করতেই শ্রীলঙ্কার জোরাল আবেদন। আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন তাসকিন।
রিপ্লেতে দেখা যায়, বলের 'পিচিং' ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। তাই বদলে যায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। ১৩ রানে বেঁচে যান তাসকিন।
ছক্কার নেশায় মাতোয়ারা রিশাদ হোসেন আউট হলেন আরেকটি ছক্কার খোঁজে। মাহিশ থিকশানার বলে তিনি ক্যাচ দিলেন লং অফে। তার বিদায়ে ভাঙল ২০ বলে ৪১ রানের জুটি।
ফেরার আগে ৭ ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রান করেছেন রিশাদ। এই সংস্করণে আট বা তার নিচে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে এটিই সর্বোচ্চ ইনিংস।
১৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১২১ রান। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
নিজের কোটার শেষ বলে ৫ উইকেট পূর্ণ করলেন নুয়ান থুশারা। স্লোয়ার ডেলিভারিতে বড় শটের খোঁজে মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন শরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ হারাল নবম উইকেট।
৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন থুশারা। এই সংস্করণে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া শ্রীলঙ্কার তৃতীয় বোলার তিনি। অজান্থা মেন্ডিস ও লাসিথ মালিঙ্গার এই কীর্তি আছে দুবার করে।
লং অন সীমানায় অনেকটা লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। বিদায়ঘণ্টা বাজল ক্যারিয়ার সেরা ৩১ রান করা তাসকিন আহমেদের। ম্যাচ জিতে নিল শ্রীলঙ্কা।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সফরকারীদের জয় ২৮ রানে। ১৭৫ রানের লক্ষ্যে স্রেফ ৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত করে ১৪৬ রান।
নুয়ান থুশারার হ্যাটট্রিকে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে শেষ দিকে লড়াই করেন রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান ও তাসকিন। বাংলাদেশের রেকর্ড ৭ ছক্কায় ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন রিশাদ। মেহেদির ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান।
সপ্তম উইকেটে ৩১ বলে ৪৪ রান যোগ করেন মেহেদি ও রিশাদ। পরে রিশাদ ও তাসকিনের অষ্টম উইকেট জুটিতে আসে ২১ বলে ৪১ রান। তিন জনের শেষের এই চেষ্টা পরাজয়ের ব্যবধানই কমায় শুধু।
আট বা তার নিচে নেমে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ। নয় বা তার নিচে নেমে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন তাসকিন।
তাদের সব কীর্তিই ম্লান থুশারার বোলিংয়ে। নিজের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭ (ধানাঞ্জয়া ৮, কুসাল ৮৬, কামিন্দু ১২, হাসারাঙ্গা ১৫, আসালাঙ্কা ৩, ম্যাথিউস ১০, শানাকা ১৯, সামারাউইক্রামা ৭*; শরিফুল ৪-০-২৮-১, তাসকিন ৪-০-২৫-২, মেহেদি ৩-০-২২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৭-১ রিশাদ ৪-০-৩৫-২, সৌম্য ১-০-১১-০)
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ (লিটন ৭, সৌম্য ১১, শান্ত ১, হৃদয় ০, মাহমুদউল্লাহ ০, জাকের ৪, মেহেদি ১৯, রিশাদ ৫৩, তাসকিন ৩১, শরিফুল ৪, মুস্তাফিজ ৭*; ম্যাথিউস ১.১-০-৫-০, ফার্নান্দো ৪-০-৩৯-০, ধানাঞ্জয়া ০.৫-০-২-১, থুশারা ৪-১-২০-৫, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩২-২, থিকশানা ৪-০-৩৫-১, শানাকা ১.৪-০-১১-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ২৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২-১ ব্যবধানে জয়ী
কুসাল মেন্ডিসের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং ও নুয়ান থুশারার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ছেঁদ পড়ল বাংলাদেশের অপরাজিত যাত্রায়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ সিরিজের একটিও হারেনি বাংলাদেশ।
এই সময়ের মধ্যে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জেতে। ড্র করে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে।
আর ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজ হার ছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে, পাকিস্তানের বিপক্ষে। দুটিই থামলে শ্রীলঙ্কার কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের ফলে।