রবিউলের ৪ উইকেটের পর সহজ ম্যাচ কঠিন বানিয়ে জিতল রংপুর

এই পেসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পর মালিকের দায়িত্বশীল ইনিংসে জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু করল রংপুর রাইডার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2023, 05:48 PM
Updated : 13 Jan 2023, 05:48 PM

রানপ্রসবা সাগরিকা হঠাৎই যেন বদলে গেল খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রাইডার্সের জন্য। দিনের প্রথম ম্যাচে যেখানে দুইশ ছাড়াল ফরচুন বরিশাল, একই উইকেটে রান তুলতে প্রবল লড়াই করতে হলো খুলনা ও রংপুরকে। শিশিরভেজা মাঠে ছোট রানের ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল রংপুর। 

বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনে রংপুরের রাইডার্স জিতল ৪ উইকেটে। খুলনা টাইগার্সকে ১৩০ রানে আটকে রেখে তারা লক্ষ্য স্পর্শ করল ৩ বল বাকি রেখে।

তিন ম্যাচে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল রংপুর। সমান ম্যাচে সবকয়টি হেরে সবার নিচে খুলনা। 

রংপুরের এই জয়ে বড় অবদান রবিউল হকের। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে স্রেফ ২২ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন ২৩ বছর বয়সী এই পেসার।

প্রথম ওভারে ১২ রান দিয়ে শুরু করলেও পরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান রবিউল। ইনিংসের মাঝামাঝি ফিরে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে তিনিই চাপে ফেলে দেন খুলনাকে। পরে শেষ দিকে দুই ওভারে নেন আরও দুই উইকেট। এই সংস্করণে প্রথমবার ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।

রান তাড়ায় নড়বড়ে অবস্থা থেকে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন শোয়েব মালিক। শেষ দিকে কঠিন হয়ে আসা সমীকরণ সহজ করে তোলেন তিনি দারুণ কয়েকটি শটে। কিন্তু শেষের আগের ওভারে ফুল টসে সীমানায় ধরা পড়ে দলকে শঙ্কায়ও ফেলে আসেন তিনিই। তবে শেষ ওভারে আর বিপদ হয়নি। ওয়াহাব রিয়াজের বলে বিশাল ছক্কায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন রংপুরের আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমারজাই।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবার খুলনার শুরুটাই হয় বাজে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে হারায় তারা ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শর্ট অব লেংথ বল অন সাইডে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন তামিম ইকবাল।

তরুণ ওপেনার হাবিবুর রহমান সোহান রানের খাতা খুলতে নেন ৮ বল। শেখ মেহেদি হাসানের বল স্লগ করতে গিয়ে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বাউন্ডারি পান তিনি। তবে বেশিক্ষণ টেকা হয়নি তার। রাকিবুল হাসানের নিচু হওয়া আর্ম বলে বোল্ড হওয়ার আগে আর কোনো রান করতে পারেননি হাবিবুর।

দুই ওপেনারের মাঝে ড্রেসিংরুমে ফেরেন শারজিল খান। ওমারজাইয়ের করা চতুর্থ ওভারে ১টি করে চার-ছয় মেরে শেষ বলে বোল্ড হয়ে যান পাকিস্তানি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

চতুর্থ উইকেটে ধাক্কা সামাল দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আজম খান ও অধিনায়ক ইয়াসির আলি। দুজনের ৭ ওভারের জুটিতে আসে ৫৮ রান। প্রাথমিক চাপ সরিয়ে নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে রানের চাকা সচল রাখেন আজম ও ইয়াসির। 

১২তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে ফিরে জুটি ভাঙেন রবিউল। অফ স্টাম্পের ওপর করা লেংথ বলে টাইমিংয়ের গড়বড় করে লং অনে ধরা পড়েন ইয়াসির। ২ ছয়ে ২২ বলে ২৫ রান করেন তিনি। ওই ওভারের শেষ বলে সাব্বির রহমানকেও ফেরান রবিউল। 

পরের ওভারে আরও বড় ধাক্কা হজম করে খুলনা। রকিবুলের বলে ছক্কার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে ওমরজাইয়ের হাতে ক্যাচ দেন আজম। ৪ চার ও ১ ছয়ে ২৩ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। স্রেফ ৮০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফের বিপদে যায় খুলনা।

পরে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও নাহিদুল ইসলাম মিলে দলকে মোটামুটি একটা স্কোর এনে দেন। সাইফ উদ্দিন ২২ ও নাহিদুল করেন ১৫ রান। 

শেষ দিকে আমাদ বাটের পর সাইফ উদ্দিনকেও আউট করে ৫ উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা জাগান রবিউল। তার স্পেলের শেষ বলে অল্পের জন্য আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান নাসুম।

রান তাড়া করতে নেমে রংপুরের শুরুটাও তেমন স্বস্তির ছিল না। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন আগের দুই ম্যাচে ঝড়ো শুরু করা রনি তালুকদার। 

পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য তিনে নামানো হয় শেখ মেহেদি হাসানকে। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো। পঞ্চম ওভারে আউট হন তিনি ১২ বলে ১৪ রান করে। ওই ওভারের শেষ বলে ফেরেন পাকিস্তানি ওপেনার সাইম আইয়ুব। 

মোহাম্মদ নাঈম শেখ চারে নেমে শুরুটা করেন ভালো। কিন্তু সেই গতি ধরে রাখতে পারেননি। শোয়েব মালিকও শুরুতে সময় নেন অনেকটা। তাকে রান-বলের সমীকরণ কঠিন হতে থাকে।

২১ রান করতে নাঈম খেলেন ২২ বল। শেষের ১০ ওভারে রংপুরের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৭৩ রান। 

অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। উল্টো ১৮ বলে ১০ রানের ইনিংসে দলের ওপর চাপ বাড়িয়ে আউট হন তিনি।

শিশিরভেজা মাঠে খুলনার দুই স্পিনার নাহিদুল ও নাসুম আহমেদ দারুণ বোলিং করেন। নাহিদুল উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেন স্রেফ ১৭ রান। নাসুম ২ উইকেট পান ২১ রান দিয়ে।

শেষ ৩ ওভারে ৩৫ রানের সমীকরণে এমনিতে হয়তো এগিয়ে ছিল খুলনা। তবে রংপুরের ভরসা হয়ে তখনও টিকে মালিক, এই ধরনের পরিস্থিতিতে যার জুড়ি মেলা ভার।

শেষের দাবি মেটানোর কাজটা শুরু করেন যদিও শামীম হোসেন। ১৫ বলে যখন প্রয়োজন ৩৩ রান, আমাদ বাটের বলে টানা তিন বাউন্ডারিতে সমীকরণ নাগালেন আনেন শামীম। প্রথম দুটি ভালো মটে, শেষটি ইয়র্কারে ব্যাটের কানায় লেগে।

এরপর শোয়েব মালিকের পালা। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই তিনি চার মারেন সাইফ উদ্দিনকে। পরেরটিতে মারেন ছক্কা। সেই বলটি ছিল ‘নো’, মানে এক বলের ১১ রান!

নাটকীয়তা তখনই শেষ নয়। ৮ বলে যখন প্রয়োজন ৮ রান, সাইফের লেগ স্টাম্পে থাকা ফুল টসে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন মালিক। এই সংস্করণে রান তাড়ায় ৬৮ বার দলকে জিতিয়ে অপরাজিত থাকার রেকর্ড তার, কিন্তু এ দিন ফিরে যান ৩৫ বলে ৪৪ রান করে।

শেষ ৫ বলে স্রেফ ৩ রান দিয়ে শেষ ওভারের জন্য ৭ রান রাখেন সাইফ উদ্দিন। 

ওয়াহাব রিয়াজের করা শেষ ওভারের প্রথম বল ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হন ওমারজাই। দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে উত্তেজনা শেষ করে দেন তিনি। পরের বলে সেরে ফেলেন জয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

খুলনা টাইগার্স: ১৯.৪ ওভারে ১৩০ (হাবিবুর ৪, তামিম ১, শারজিল ১২, আজম ৩৪, ইয়াসির ২৫, সাব্বির ১, আমাদ ৪, সাইফ উদ্দিন ২২, নাহিদুল ১৫, ওয়াহাব ৫*, নাসুম ১; শেখ মেহেদি ৪-০-২১-০, ওমরজাই ৪-০-৪১-২, রাকিবুল ৪-১-২২-২, হাসান ৩.৪-০-২২-২, রবিউল ৪-০-২২-৪)

রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৩১/৬ (রনি ১, আইয়ুব ১০, শেখ মেহেদি ১৪, নাঈম ২১, মালিক ৪৪, নুরুল ১০, শামীম ১৬*, ওমরজাই ৮*; নাহিদুল ৪-০-১৭-০, সাইফ উদ্দিন ৪-০-৩৫-২, ওয়াহাব ৩.৩-০-২৪-২, আমাদ ৪-০-৩১-০, নাসুম ৪-০-২১-২) 

ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রবিউল হক