টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
উইকেট ও কন্ডিশন বুঝে পেসার একজন কমিয়ে স্পিনার বাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই স্পিনার তাব্রেইজ শামসিই দারুণ বোলিংয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে অবদান রাখেন দলকে সেমি-ফাইনালে তুলে নেওয়ায়।
Published : 24 Jun 2024, 02:02 PM
“আমি মাঠেই নামিনি, অথচ এখনও ঘামছি…”, ম্যাচ শেষে হাসিমুখে বলছিলেন তাব্রেইজ শামসি। ব্যাট হাতে এ দিন মাঠে নামার প্রয়োজন পড়েনি তার। তবে শেষ সময়ের স্নায়ুর চাপ এতটাই ছিল যে, বাইরে থেকেও দরদর করে ঘামছিলেন তিনি। উত্তেজনার প্রহর প্রেরিয়ে শেষ পর্যন্ত শুধু ঘামেই নয়, তিনি এবং তারা সিক্ত হয়েছে জয়ের আনন্দ ফোঁটায়। সেই জয়ে বড় অবদান একাদশে ফেরা এই শামসিরই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচ টসের সময় দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করাম জানান, একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছেন তারা। পেসার ওটনিল বার্টমানের জায়গা আনা হয়েছে শামসিকে।
সিদ্ধান্তটি নিয়ে ভ্রু কুচকে যাওয়ার কারণ ছিল যথেষ্টই। গত বুধবার এই মাঠেই তো যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তুলাধুনা হয়েছিলেন শামসি। দল জিতলেও বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার সেদিন চার ওভারে রান দেওয়ার হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন। খেসারত দিতে হয় পরের ম্যাচেই।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশের বাইরে রাখা হয় তাকে।
এবার সেই অ্যান্টিগাতেই আবার এই ম্যাচের জন্য একাদশে ফেরানো হয় তাকে। পেসারের বদলে যখন স্পিনার আনা হয়, উইকেট ও কন্ডিশনের সম্ভাব্য ধারণা পাওয়া যায় সেখান থেকেই। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছাপও তাতে থাকে। তেমনি ওই ক্রিকেটারের দায় থাকে সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করার।
চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে তিন উইকেট, ম্যাচ সেরা হয়ে ঝলমলে হাসি, শামসি সেটা প্রমাণ করেই দিলেন।
উইকেটে স্পিনারদের সহায়তা ছিল বেশ। শামসি তা কজে লাগান দারুণভাবে। শুরুতেই দুই ওভারে দুটি উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় কাইল মেয়ার্স ও রোস্টন চেইসের জুটিতে। শামসিকেও চাপে ফেলার চেষ্টা করছিলেন দুজন। দ্বাদশ ওভারে তাকে চার মারেন মেয়ার্স, ছক্কা মারেন চেইস।
তবে শামসি শুধু এই জুটিই ভাঙেননি, ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের মূল শক্তিই ভেঙে দেন দ্রুত। চার-ছক্কা হজমের ওভারেই মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৮১ রানের জুটি ভাঙেন তিনি বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে।
পরের ওভারে তিনি বিদায় করেন বিপজ্জনক শেরফেন রাদারফোর্ডকে। শেষ নয় সেখানেই। ৩৯ বলে ফিফটি করে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল বাধা হয়ে থাকা চেইসকেও ৫২ রানে থামান তিনিই।
সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ ওভারে তারা আটকে যায় ১৩৫ রানে। পরে উত্তেজনাপূর্ণ রান তাড়ায় জিতে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যায় শামসিরা।
ম্যাচ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক মার্করাম বললেন, এমন কিছুর আশা থেকেই তারা শামসিকে একাদশে ফিরিয়েছিলেন।
“আমরা শামসিকে বেছে নিয়েছি এ দিন। আজকে একজন রহস্য স্পিনারকে দলে রাখতে চেয়েছি আমরা। মনে হয়েছে, তাকে নিলে আমাদের ভালো সুযোগ থাকবে। পাওয়ার প্লেতেই দেখেছি, বল টার্ন করছে। এরপর যত বেশি সম্ভব স্পিনারদের দিয়েই বল করাতে চেয়েছি। কেজি (রাবাদা) মাত্র দুই ওভার বোলিং করেছে, এতেই বোঝা যাচ্ছে উইকেটের আচরণ কেমন ছিল। শামসি দারুণ বোলিং করেছে।”
শামসি নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন আগের ম্যাচের ব্যর্থতা পেছনে ফেলতে। ভরসা রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি কোচিং স্টাফকে। তার মতে, দলীয় একতার ভেলায় এই টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
“সবশেষ এই মাঠে খেলার সময় ৫০ রান দিয়েছিলাম আমি। আজকে নিজের পরিকল্পনায় আস্থা রেখেছি। কোচিং স্টাফকেও পাশে পেয়েছি এবং খুবই খুশি যে নিজের দায়িত্ব এখানে পালন করতে পেরেছি। আমার আগে যারা বোলিং করেছে, ওরাই মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে।”
“একদম প্রথম ম্যাচ থেকেই আমরা দল হিসেবে খেলে জিতেছি। কোনো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে নয়। ম্যাচ জেতানোর মতো ক্রিকেটার এত বেশি আছে আমাদের… দলের সবারই ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে। এখান থেকে সেখান থেকে একটু-আধটু অবদান মিলিয়েই আমরা বারবার জয়ের ঠিকানা পাচ্ছি, কোনো চাপ নেই।”
টানা সাত জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের প্রতিপক্ষ ঠিক হবে অন্য গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের ফলাফল থেকে।