জাতীয় লিগকে পিকনিক লিগ বললে কষ্ট পান বাংলাদেশ টেস্ট দলে প্রথমবার ডাক পাওয়া জাকের আলি।
Published : 13 Sep 2024, 05:09 PM
একসময় জাতীয় ক্রিকেট লিগকে বলা হতো 'পিকনিক লিগ'। ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব, নিচু মান, কখনও কখনও ক্রিকেটারদের নিবেদনে ঘাটতি- সব মিলিয়েই এই পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিল সবচেয়ে বড় প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট। সেই চিত্র বদলে গেছে অনেক দিন আগেই। তার পরও যারা অতীতে পড়ে আছেন, তাদের কথায় কষ্ট পান জাকের আলি। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বদলে যাওয়া সময়ের স্বাক্ষী যে তিনি নিজেই।
ভারত সফরের বাংলাদেশ টেস্ট দলে একমাত্র নতুন মুখ এই জাকের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট রাঙিয়েই এই সুযোগ তিনি পেয়েছেন।
বাংলাদেশের হয়ে ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা জাকের ওই বছরের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করেন স্বীকৃত ক্রিকেটে। জাতীয় লিগে নিজ বিভাগ সিলেটের হয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাড়ে ৭ বছরের বেশি সময় পার করে দেওয়ার পর এবার টেস্টে যাত্রা শুরুর খুব কাছে ২৬ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ অবশ্য গত বছর পেয়ে গেছেন জাকের। এরই মধ্যে তিনি খেলে ফেলেছেন ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সে দফায় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণের পর এবার সাদা পোশাকে বড় মঞ্চে খেলার স্বপ্নে বুদ তিনি।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলছে ভারত সফরের আগে অনুশীলন ক্যাম্প। সেই প্রস্তুতি পর্বে ঘাম ঝরিয়ে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে জাকের শোনালেন টেস্ট ক্রিকেটের সুবাস পাওয়ার রোমাঞ্চের কথা।
“খুব ভালো অনুভূতি। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। সেটার জন্য স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। ২০১৭ সাল (২০১৬ সালের ডিসেম্বর) থেকে আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছি। যে সংস্করণই হোক, ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি ভালো করার চেষ্টা করি। ওই প্রক্রিয়াতেই এগোই।”
টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে জাকের লাল বলের রেকর্ড বেশি উজ্জ্বল। বিশেষ করে গত ৩-৪ বছরে নিজেকে ছাড়িয়ে নতুন মাত্রা যোগ করছেন তিনি। ২০২২ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরি করে টেস্ট দলে ঢোকার দাবি জোরাল করেছিলেন জাকের।
তবে সেবার চোটে পড়ায় মেলেনি সুযোগ। গত মাসে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে ক্যারিয়ার সেরা ১৭২ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট দলের দুয়ার খুলল তার সামনে।
২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৮ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি ও ১৩ ফিফটিতে ৪৬.৭৯ গড়ে জাকেরের সংগ্রহ ১ হাজার ৯৬৫ রান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটা সময় তিনি ভুগেছেন অনেক। পরে উন্নতির পথ ধরে পারফর্ম করেছেন। গুরুত্বটা তাই খুব ভালো করে জানেন তিনি।
“প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার খুবই কষ্ট লাগে, অনেকে বলে যে, পিকনিক ক্রিকেট। এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগে। আমরা জানি, আমরা কতটা কষ্ট করে খেলি ক্রিকেটার হিসেবে। তাই দয়া করে এই কথাগুলো বলবেন না। আমি এই কথায় খুব দুঃখ পাই।”
“আমি ২০১৭ সাল থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি। আমি জানি, আমার কতটা কষ্ট হয়। একেকটা রান করতে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে... ক্রিকেটার হিসেবে আমরা অনেক কষ্ট করি। আরও কষ্ট করব। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে। আরও হবে।”
স্কোয়াডে সুযোগ পেলেও মূল একাদশে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম জাকেরের। মিডল-অর্ডারের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে জাকেরকে স্কোয়াডে নেওয়ার কথা বলেছেন নির্বাচক হান্নান সরকার। কেউ চোটাঘাত না পেলে মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসকে নিয়ে সাজানো মিডল-অর্ডারে জাকেরের জায়গা আপাতত নেই।
তবে সেটি নিয়ে বেশি ভাবতে চান না জাকের। সুযোগ পেলে ভালো করতে নিজের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখছেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
“লক্ষ্য... (একাদশে) সুযোগ পেলে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করা, দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা। প্রথমে আমি টি-টোয়েন্টি দলের অনুশীলনে ছিলাম। পরে তো সংস্করণ আলাদা হলো। দুই সংস্করণের জন্যই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন শুধু সংস্করণ অনুযায়ী মানসিকতা বদলাতে হবে।”
“স্কোয়াডে নির্বাচিত যেহেতু হয়েছি, তারা (নির্বাচকরা) প্রস্তুত মনে করেছেন বলেই নিয়েছেন। এখন আমার দায়িত্ব, নিজের সেরা পারফরম্যান্স। তাদের (ভারতীয় বোলার) নিয়ে অবশ্যই পরিকল্পনা হচ্ছে। নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে রান করা গেলে আমার মনে হয় অনেক ভালো কিছু হবে।”
এই সিরিজ খেলতে রোববার ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ দল।