কয়েক দিন ধরে চলা পারিশ্রমিক নিয়ে শঙ্কা দূর হওয়ার পর মাঠের পারফরম্যান্সে দলের নামের স্বার্থকতাই প্রমাণ করল দুর্বার রাজশাহী।
Published : 17 Jan 2025, 05:58 PM
‘রাজশাহী খেলবে তো?’- টিকেট হাতে এক দর্শকের সন্দিগ্ধ প্রশ্ন। খেলা শুরু হতে তখনও বাকি দেড় ঘণ্টার বেশি। কিছুক্ষণ পর দুর্বার রাজশাহীর বাস জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেখেই উত্তর পেয়ে গেলেন ওই দর্শক। গত কয়েক দিনে রাজশাহীর ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে নানান নেতিবাচক খবরে তার প্রশ্ন অবশ্য অমূলক ছিল না।
তবে সব শঙ্কা ছাপিয়ে পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশের নিশ্চয়তা পেয়ে খেলতে নামে রাজশাহী। তাদের পারফরম্যান্সেও পড়ল বদলের ছাপ। দাপুটে ব্যাটিং-বোলিংয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে গুঁড়িয়ে জয়ে ফিরল তারা।
অসাধারণ কোনো পারফরম্যান্স নেই রাজশাহীর কারও। তবে সম্মিলিত পারফরম্যান্সে জিতে গেল তারা ৬৫ রানে।
ব্যাটিংয়ে দলের সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন রায়ান বার্ল। দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন আরও ছয় ব্যাটসম্যান। বল হাতে সানজামুল ইসলাম নেন ৩ উইকেট। তাসকিন আহমেদ, আফতাব আলম ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির শিকার ২টি করে।
১৮৫ রানের লক্ষ্যে ১৫ বল বাকি থাকতে মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট। মৌসুমের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে ম্যাচ-সেরা সানজামুল।
অথচ পারিশ্রমিক না পাওয়ায় এই ম্যাচ বয়কট করার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছিলেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। কোনো টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রাম এসে প্রথম দিন বিশ্রামে কাটিয়ে পরদিন অনুশীলন করেনি তারা।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের পর আশ্বস্ত হয়ে ম্যাচের আগের দিন শুধু অনুশীলন করে তারা। তবু সবার পারিশ্রমিকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত। নগদ ২৫ শতাংশের পাশাপাশি আরও ২৫ শতাংশ টাকার চেক পেয়ে খেলতে নামে রাজশাহী।
সাত ম্যাচে তৃতীয় জয়ে পয়েন্ট টেবিলের চারে উঠে গেছে তারা। সমান ম্যাচে সিলেটের এটি পঞ্চম পরাজয়।
দুই ছক্কা মেরে শেষ হারিস
টস জিতে ব্যাটিং নেমে দ্বিতীয় বলে ওয়াইড থেকে চার পায় রাজশাহী। রিস টপলির চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন মোহাম্মদ হারিস। পরের ওভারে নাহিদুল ইসলামের বলও ছক্কায় ওড়ান তিনি। দুই ওভারে ২৪ রান করে ফেলে রাজশাহী।
চতুর্থ ওভারে নাহিদুলের বলে আবারও ছক্কা মারার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন হারিস।
মন্থর পাওয়ার প্লে
শুরুর দুই ওভারের পর পাওয়ার প্লেতে রাজশাহীর রানের গতিতে লাগাম টেনে ধরে সিলেট। পরের ৪ ওভারে আর মাত্র ১৪ রান করতে পারে রাজশাহী। প্রথম ১৩ বলে মাত্র ৬ রান করতে পারেন জিসান আলম।
সপ্তম ওভারে নিহাদ উজ জামানের বলে দুটি ছক্কা মেরে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান ঘোচান তরুণ ওপেনার। পরের ওভারে নাহিদুলের বলে বড় শটের খোঁজে সীমানায় ধরা পড়েন জিসান। ডিপ মিড উইকেটে চমৎকার ক্যাচ নেন রনি তালুকদার।
জীবন পেয়েও ব্যর্থ এনামুল
শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা এনামুল হকের ক্যাচ ছেড়ে দেন নাহিদুল। নবম ওভারে আক্রমণে আসা পল স্টার্লিংয়ের প্রথম বলই উড়িয়ে মারেন রাজশাহী অধিনায়ক। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তো নিতেই পারেননি, উল্টো চার দিয়ে দেন নাহিদুল।
৯ রানে জীবন পেয়ে ওই ওভারেই দুটি ছক্কা মেরে স্টার্লিংয়ের হতাশ বাড়ান এনামুল। তবে দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। পরের ওভারে দারুণ ডেলিভারিতে তাকে কট বিহাইন্ড করেন রুয়েল মিয়া।
দপ করেই শেষ ইয়াসির, বার্লের ৪ ছক্কার ঝড়
দশম ওভারে ক্রিজে গিয়ে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মারেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। পরে নিহাদ উজ জামানের বল ওড়ান ছক্কায়। কিন্তু দারুণ শুরু টেনে নিতে পারেননি। নিহাদ উজ জামানের শর্ট বলে লং অন সীমানায় ধরা পড়েন এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সফলতম ব্যাটসম্যান।
আরিফুল হক বোলিংয়ে এলে ঝড় তোলেন রায়ান বার্ল। ত্রয়োদশ ওভারে চারের পর ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সিলেট অধিনায়কের পরের ওভারে টানা তিনটি ছক্কা মারেন তিনি।
বার্লকেও থামান নিহাদ উজ জামান। ছক্কার খোঁজে লং অফে ক্যাচ দেন বার্ল। ১ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় ২৭ বলে করেন ৪১ রান।
শুরুর মতো শেষেও নীরব রাজশাহী
বার্লের বিদায়ের পর শেষটা প্রত্যাশামতো করতে পারেনি রাজশাহী। বাকি থাকা ২৫ বলে মাত্র ৩১ রান করে তারা। ছয় নম্বরে নেমে ১৪ রান করতে ১৫ বল খেলেন আকবর আলি। একটি মাত্র বাউন্ডারি মারতে পারেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। রুুয়েল মিয়ার করা শেষ ওভারের প্রথম চার বলে কোনো রান নিতে পারেননি।
রাজশাহীর ১৮০ ছাড়ানো পুঁজিতে বড় সহায়ক সিলেটের এলোমেলো বোলিং। ওয়াইড থেকে ১৮সহ সব মিলিয়ে ২০ রান অতিরিক্ত খরচ করে সিলেটের বোলাররা।
কিপটে নাহিদুল, রুয়েলের ৩ উইকেট
দুই ওপেনারের উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান খরচ করেন নাহিদুল। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন রুয়েল।
সানজামুলের শিকার দুই ওপেনার
রান তাড়ায় শুরুতেই সানজামুলের স্পিন পরীক্ষায় পড়ে সিলেট। প্রথম ওভারের বড় শটের খোঁজে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন স্টার্লিং। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে ক্রিজ ছেড়ে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হন রনি তালুকদার।
মাত্র ১৩ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় সিলেট।
জীবন পেয়ে জাকিরের পাল্টা আক্রমণ
চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসে সিলেটকে আরও চেপে ধরার সুযোগ তৈরি করেন জিসান। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে জাকির হাসানের ক্যাচ ছেড়ে দেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। মাত্র ৩ রানে জীবন পেয়ে জিসানের বোলিংয়েই পাল্টা আক্রমণ করেন জাকির।
জিসানের পরের ওভারে লং অন দিয়ে দুটি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অফ স্পিনারের পরের ওভারে জাকির মারেন দুটি চার।
দশম ওভারে জাকিরকে থামান এই ম্যাচের আগেই দলে যোগ দেওয়া মার্ক ডেয়াল। থার্ড ম্যান থেকে কিছুটা এগিয়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন এনামুল।
পরের ওভারে ফিরতি ক্যাচে জর্জ মানজিকে আউট করেন ডেয়ালের মতোই এই ম্যাচের আগে আসা আফতাব।
শেষে ভেঙে পড়া
জাকিরের বিদায়ের পর থেকেই ধীরে ধীরে পেছাতে থাকে সিলেট। সব মিলিয়ে মাত্র ৪৮ রানে শেষের ৮ উইকেট হারায় তারা। ছয় নম্বরে নেমে জাকের আলির ৩ ছক্কায় ৩১ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমায় শুধু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দুর্বার রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৮৪/৭ (হারিস ১৯, জিসান ২০, এনামুল ৩২, বার্ল ৪১, ইয়াসির ১৯, আকবর ১৪*, ডেয়াল ৭, মৃত্যুঞ্জয় ১২; টপলি ৪-০-৩৯-০, নাহিদুল ৪-০-২০-২, রুয়েল ৪-০-৩২-৩, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৩৭-২, স্টারলিং ১-০-১৯-০, আরিফুল ৩-০-৩৫-০)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৭.৩ ওভারে ১১৯ (রনি ৪, স্টারলিং ২, জাকির ৩৯, মানজি ২০, জোন্স ৫, জাকের ৩১, নাহিদুল ১, আরিফুল ৬, নিহাদ উজ জামান ০, রুয়েল ৩*, টপলি ০; সানজামুল ৪-০-২৫-৩, তাসকিন ৩.৩-০-১৪-২, জিসান ৩-০-৩১-০, মৃত্যুঞ্জয় ৩-০-১৬-২, আফতাব ৩-০-২৪-২, ডেয়াল ১-০-৫-১)
ফল: দুর্বার রাজশাহী ৬৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সানজামুল ইসলাম।