বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই ম্যাচ পরই বদলে গেছে তার পরিচয়! খালেদ মাহমুদ অন্তত তেমনটিই মনে করেন। বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টরের মতে, ভারত সিরিজের পারফরম্যান্সের পর এখন মিরাজকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মিরাজ ব্যাটে-বলে ছিলেন প্রায় সমানে সমান। দুটিতেই ছিলেন বিশেষজ্ঞ। তবে বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সের পর তিনি একরকম বোলারই হয়ে যান। গত দেড়-দুই বছরে অবশ্য ব্যাট হাতে মোটামুটি ধারাবাহিক হওয়ায় বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তবে ভারতের বিপক্ষে চলতি ওয়ানডে সিরিজে শুধু তার সেই ব্যাটসম্যানম্যান সত্ত্বাই ফুটে ওঠেনি, ব্যাটিংয়ে নিজেকে যেন নতুন করে চেনান তিনি। প্রথম ওয়ানডেতে শেষ জুটিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গী করে অবিশ্বাস্যভাবে ৫১ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে এনে দেন জয়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বুধবার ৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে গিয়ে খেলেন ৮৩ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস। আট নম্বরে নেমে যা ওয়ানডে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এই দুই ম্যাচে বল হাতেও খুব খারাপ করেননি মিরাজ। প্রথম ম্যাচে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পাশাপাশি বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। সেঞ্চুরির ম্যাচেও শিকার করেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তবে তার ব্যাটিং সাফল্যে আড়াল হয়ে গেছে আর সবকিছুই।
ব্যাট হাতে মিরাজকে এই রূপে দেখে মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন খালেদ মাহমুদ। এমনিতে টিম ডিরেক্টর হলেও এই সিরিজ থেকে তিনি বিরতি নিয়েছেন। তবে মাঠে এসে খেলা দেখছেন নিয়মিতই। বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি সিরিজ জয়ের আনন্দের পাশাপাশি বললেন মিরাজকে নিয়ে ভাবনা বদলের কথাও।
“এক কথায় দারুণ। এই সংস্করণে যে আমরা শক্তিশালী বা জিততে জানি, কিংবা ভারতের বিপক্ষে আগের সিরিজটাও ঘরের মাঠে আমরা জিতেছিলাম ২০১৫ সালে। ওই সুখস্মৃতি তো ছিলই। তবে দুটি ম্যাচেই আমরা যেভাবে জিতলাম, এতে আমাদের ‘ক্যারেকটার’ ফুটে ওঠে। মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ দুর্দান্ত, কালকে মুস্তাফিজ ছিল অসাধারণ।”
“প্রথম ম্যাচে শেষ জুটিতে পঞ্চাশের বেশি করে জয়… কালকে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আমরা কেউ আশা করিনি বা বাংলাদেশের কেউ হয়তো আশা করেনি যে এত রান করতে পারব। ভেবেছিলাম ২২০-২৩০ করতে পারলেও অনেক ভালো হবে। সেখান থেকে ২৭১ করতে পারা আমাদের দারুণ চরিত্রই ফুটিয়ে তোলে। মিরাজ অনেক পরিণত হয়েছে। আমরা সবসময় মিরাজকে বোলিং অলরাউন্ডার চিন্তা করি, এখন ওকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার ভাবতে হবে সত্যি কথা বলতে।”
টিম ডিরেক্টরের পদে থাকলেও এই সিরিজে দলের সঙ্গে খালেদ মাহমুদের না থাকাটা জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্ন ও কৌতূহলের। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সিরিজ শুরুর আগে শুধু বলেছিলেন, খালেদ মাহমুদ নিজে থেকে বিরতি নিচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ তিনি জানাননি।
এবার খালেদ মাহমুদ নিজেও বললেন একই ধরনের কথা।
“এমন কোনো কারণ নেই। অনেক ব্যস্ততা ছিল। সত্যি কথা বলতে, নিজেরও তো কাজ আছে। সময় তো আসলে পাওয়া যায় না। সামনে অনেক খেলা আছে। এই সময়টা আমার জন্য জরুরি ছিল। এজন্যই একটা বিরতি নেওয়া আসলে। আগেই নেওয়ার কথা ছিল। এবার ঘরের মাঠে সিরিজ। দেশের বাইরে সিরিজে বেশি দরকার হয়। এখানে তো আমরা সবাই আছি কাছাকাছিই। ড্রেসিং রুমে যাওয়ার অনুমতি না থাকলেও ড্রেসিং রুমের ওপরেই আছি। কাছাকাছিই আছি বলে এই সিরিজ করিনি।”