মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ১১০ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
হ্যামিল্টনে সোমবার ভারত দুর্দান্ত শুরু পেলেও বাংলাদেশের বোলাররা ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদেরকে আটকে রাখে ২২৯ রানে। কিন্তু রান তাড়ায় বাংলাদেশ জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি কোনোরকম। ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারে ১১৯ রান।
রানের হিসেবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে বাজে হার এটি।
বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ভারতের এটি তৃতীয় জয়, পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ হার।
এই নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৫ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ হারল সবকটিতেই।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত শক্ত ভিত গড়ে উদ্বোধনী জুটিতে। শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মান্ধানা শুরুটা করেন সাবধানে। দ্বিতীয় ওভারে জাহানারা আলমের বলে স্মৃতি দুটি চার মারলেও পরে একটু গুটিয়ে যান। বিধ্বংসী বলে পরিচিত শেফালি শুরুতে ১৩ বলে করেন ৪ রান।
বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের দেখা পায় ১৫তম ওভারের শেষ বলে। নাহিদার একটি নিরীহ শর্ট বলে টাইমিং ঠিক করতে না পেরে ক্যাচ দেন স্মৃতি (৫১ বলে ৩০), ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে নিচু হয়ে ক্যাচ নেন ফারজানা হক।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই আরেকটি সাফল্য। এবার রিতু মনির বলে শেফালি স্টাম্পড হন ৪২ বলে ৪২ রান করে। পেসারের বলেও স্টাম্প ঘেঁষে কিপিং করতে থাকা নিগার দারুণ দক্ষতায় উড়িয়ে দের বেলস।
পরের বলেই আবার উল্লাসে ভাসেন রিতু। মেয়েদের ক্রিকেটের মহাতারকা ও ৭ হাজার ওয়ানডে রান করা একমাত্র ব্যাটার মিতালি রাজ প্রথম বলেই সহজ ক্যাচ দেন কাভারে।
বিনা উইকেটে ৭৪ থেকে ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ৭৪।
স্বস্তিকা ভাটিয়া ও হারমানপ্রিত কৌরের ব্যাটে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে ভারত। সেই চেষ্টাও সফল হতে দেয়নি বাংলাদেশ। ফারজানা হকের দারুণ সরাসরি থ্রোয়ে অভিজ্ঞ হারমানপ্রিত ফেরেন ৩৩ বলে ১৪ রান করে।
১০৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করে স্বস্তিকা ও রিচা ঘোষের জুটি। পঞ্চম উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৬৯ বলে ৫৪ রান।
রিচা ২৫ রানে নিগারের হাতে জীবন পেলেও ২৬ রানে ধরা পড়েন নিগারের হাতেই। স্বস্তিকা ফিফটি ছুঁয়েই রান বাড়ানোর চেষ্টায় আউট হয়ে যান রিতু মনির বলে (৮০ বলে ৫০)। শর্ট ফাইন লেগে ভালো ক্যাচ নেন নাহিদা।
শেষ দিকে পুজা ভাস্ত্রাকার ও স্নেহ রানার ব্যাটে দ্রুত রান বাড়ায় ভারত। ৩৮ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। ২৩ বলে ২৭ রান করে স্নেহ রানা আউট হন শেষ ওভারে। পুজা অপরাজিত থেকে যান ৩৩ বলে ৩০ রানে। শেষ ৫ ওভারে ভারত তোলেন ৪৫ রান।
৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার পেসার রিতু মনি। তবে অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা পারেননি ভালো করতে, ফারিহা তৃষ্ণার জায়গায় সুযোগ পেয়ে লতা মণ্ডলও পারেননি প্রভাব রাখতে।
ভারতের যে বোলিং আক্রমণ, তাতে ২২৯ রানের পুঁজি জয়ের মতোই। তবে বাংলাদেশের নাগালের বাইরেও ছিল না স্কোর। ফারজানা-নিগারদের ব্যাটিংয়ে অবশ্য সেটির প্রমাণ মেলেনি।
এরপর নিয়মিত উইকেট হারাতেও শুরু করে বাংলাদেশ। রাজেশ্বরি গায়কোয়াড়ের বলে স্লিপে ধরা পড়েন শারমিন আক্তার। বড় ভরসা ফারজানা হক ১১ বল খেলে শূন্য রানে ফেরেন পুজা ভাস্ত্রাকারকে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে।
অধিনায়ক নিগার সুলতানা আউট হন স্নেহ রানাকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায়। এক প্রান্ত আগলে রাখা মুর্শিদা ধরা পড়েন প্রিয় ইনসাইড আউট শটের চেষ্টায় (৫৪ বলে ১৯)। এরপর অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ যখন ব্যর্থ হলেন আরও একবার, ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন বাংলাদেশের সম্ভাবনার মৃত্যু হয়ে গেছে।
সালমা খাতুন ও লতা মন্ডলের ব্যাটে এরপর কিছুটা কমে ব্যবধান। নিজের সেরা সময়ের কিছুটা ঝলক দেখিয়ে ৩৫ বলে ৩২ করেন সালমা। লতা ৪৬ বলে করেন ২৪। বোলিংয়ে সাফল্যের পর ব্যাট হাতে রিতু মনি করেন ১৬ রান। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৫৭ বল বাকি রেখেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ২২৯/৭ (স্মৃতি ৩০, শেফালি ৪২, স্বস্তিকা ৫০, মিতালি ০, হারমানপ্রিত ১৪, রিচা ২৬, পুজা ৩০*, স্নেহ রানা ২৭, ঝুলন ২*; সালমা ৮-১-২৩-০, জাহানারা ৮-০-৫২-১, নাহিদা ৯-০-৪২-২, রিতু মনি ১০-২-৩৭-৩, রুমানা ৮-১-২৭-০, লতা ৪-০-২০-০, ফাহিমা ৩-০-২২-০)
বাংলাদেশ: ৪০.৩ ওভারে ১১৯ (মুর্শিদা ১৯, শারমিন ৫, ফারজানা ০, নিগার ৩, রুমানা ২, লতা ২৪, সালমা ৩২, রিতু ১৬, ফাহিমা ১, নাহিদা ০, জাহানারা ১১*; ঝুলন ৭.৩-১-১৯-২, রাজেশ্বরি ১০-৪-১৫-১, পুজা ৬-০-২৬-২, স্নেহ রানা ১০-২-৩০-৪, পুনম ৭-০-২৫-১)
ফল: ভারত ১১০ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: স্বস্তিকা ভাটিয়া