ব্যাটিং কোচ সিডন্সের প্রথম দিন

চেনা আঙিনা, পুরনো কিছু মুখ, নতুন দায়িত্ব আর নতুন চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার একবিন্দুতে মিশে গেল জেমি সিডন্সের অতীত আর বর্তমান। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান কোচ কাজ শুরু করলেন নতুন ব্যাটিং কোচ হিসেবে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2022, 02:19 PM
Updated : 22 Feb 2022, 02:42 PM

তাকে ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অবশ্য এখনও দেয়নি বিসিবি। গত ২ ফেব্রুয়ারি এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ যখন ঢাকায় পা রাখেন, তার পরিচয় তখন ছিল বিসিবির ব্যাটিং পরামর্শক। সুনির্দিষ্ট কাজের জায়গা তখনও ঠিক হয়নি। তবে অ্যাশওয়েল প্রিন্স জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সেই দায়িত্ব সিডন্সের পাওয়া হয়ে ওঠে অবধারিত।

বাংলাদেশে এসে তিনি বিপিএলের খেলা দেখতে ঘুরে বেড়ান মিরপুর থেকে সিলেট। এই প্রক্রিয়ায় কোভিডের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হয়ে যায়। ব্যাটিং কোচ হিসেবে যখন কাজ শুরুর কথা, তখন তিনি ঘরবন্দী। ১০ দিন আইসোলেশনে থেকে কোনো উপসর্গ না থাকায় প্রটোকল অনুযায়ী অবশেষে তিনি কাজ শুরু করেন মঙ্গলবার থেকে।

২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচ থাকার সময় সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমদের সঙ্গে কাজ করেছেন সিডন্স। সাকিব-তামিমদের তখন চলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পায়ের নিচের জমিন শক্ত করার লড়াই। সিডন্স সেখানে আসেন বড় সহায় হয়ে। প্রধান কোচ হলেও তার কোচিংয়ের মূল শক্তির জায়গা ছিল ব্যাটিং। সেই সময়ের প্রতিভাবান এই তরুণরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দাবি মেটানো ও টিকে থাকার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠে সিডন্সের নিবিড় পরিচর্যায়।

সেই সময়টায় অবশ্য প্রধান কোচ হিসেবে তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নও উঠতে থাকে অনেক, বিশেষ করে তার ম্যান ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ২০১১ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর আর তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি বিসিবি। তবে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা নানা সময়েই বলেছেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে তাদের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন সিডন্স।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পরও সাকিব-তামিমদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ ছিল সিডন্সের। বিশেষ করে তামিম তার ব্যাটিংয়ের যে কোনো সমস্যায় অনেক দিন পর্যন্ত সিডন্সের পরামর্শেই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখতেন। নিউ জিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসের কোচ থাকার সময় সিডন্স সেই দলে খেলতে নিয়ে যান তামিমকে।

বিদায়ের প্রায় ১১ বছর পর সিডন্সের আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসার যোগসূত্রও এই সাকিব-তামিমরা। সিনিয়র ক্রিকেটারদের পরামর্শেই তাকে আবার কোচ করে আনে বিসিবি।

নতুন অভিযানে প্রথম দিনে স্বাভাবিকভাবেই সাকিব-তামিমদের সঙ্গে কিছুটা বাড়তি সময় কাটাতে দেখা গেল সিডন্সকে। সিরিজ শুরুর আগের দিন নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে সামান্যই। তবু সাকিবকে ব্যাটিং স্টান্স নিয়ে কিছু একটা দেখালেন তিনি। সতর্ক নজর রাখলেন তামিমের নেট সেশনে। এছাড়া নেট থেকে নেট ঘুরে দেখলেন তরুণদের ব্যাটিং।

তামিম পরে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, সিডন্সের কাছ থেকে মূল উপকার তরুণ ব্যাটসম্যানদেরই হবে।

“জেমি বাংলাদেশে অনেক বড় প্রভাব রাখতে পারে। তার যে অভিজ্ঞতা আছে বা তার সঙ্গে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল... আমরা সিরিজের মধ্যে আছি তাই এই সময়টা ওর জন্য একটু কঠিন। কম-বেশি যতটুক পারছে, চেষ্টা করছে ওর মতো করে। আমি নিশ্চিত তরুণরা ওর কাছ থেকে অনেক উপকৃত হবে।”

“তবে আমি সবসময় একটা কথা বলি, একজন কোচ ১০টা অপশন দেবে, আপনার দায়িত্ব নিয়ে বুঝতে হবে কোন ২-৩টি আপনার কাজে লাগবে। সবকিছু শুনলে কাজ না-ও হতে পারে। সিনিয়র-জুনিয়র যে-ই হোক, নিজের দায়িত্বে বুঝতে হবে কোনটা কাজে লাগবে।”

ব্যাটিং কোচের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে প্রধান কোচের সঙ্গে রসায়নও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার প্রধান কোচরা সাধারণত নিজেদের পছন্দের সাপোর্ট স্টাফ রাখতে চান নিজের পাশে। কিন্তু সিডন্সের দায়িত্ব পাওয়া মূলত বোর্ডের আগ্রহেই।

মঙ্গলবার দলের অনুশীলনে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় কাটাতে দেখা গেছে সিডন্সকে। তারা নিজেরা যেমন কথা বলেছেন আলাদা করে, তেমনি সাকিব-তামিমদের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা গেছে একত্রে। এই দুজনের রসায়ন সামনের পথচলায় দলের জন্য হবে গুরুত্বপূর্ণ।

সেই রসায়ন না জমলে শঙ্কা কিছুটা থাকছে, তা মানছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে আশার ছবিটাই তিনি দেখছেন আপাতত।

“আমরা একটা দল। রাসেল (ডমিঙ্গো) প্রধান কোচ হিসেবে সেই দলের অংশ। জেমিও এই দলের অংশ, ব্যাটিং কোচ। আমার মনে হয় না এটা আমাদের আলাদাভাবে চিন্তা করার বা দেখার কোনো দরকার আছে। যারা এই সেটআপে আছে, তারা মিলেই বাংলাদেশ দল। ম্যানেজমেন্ট বলুন, খেলোয়াড় বলুন, আমরা সবাই এক।”

“এভাবেই আমরা এগোতে চেষ্টা করব। কারণ দূরত্ব থাকলে এটা কাজ করবে না, ভালো কিছু হবে না। খেলোয়াড়- স্টাফ আমরা সবাই জানি আমরা একটি দল। ভালো খেলি খারাপ খেলি, একসঙ্গেই থাকব আমরা।”