রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে হেরে দ. আফ্রিকায় হোয়াইটওয়াশড ভারত

বারবার দিক পাল্টানো ম্যাচে শেষটায় জয়ের পাল্লা হেলে ছিল ভারতের দিকে। শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল কেবল ১০ রান, হাতে ছিল ৩ উইকেট। পঞ্চাশ ছুঁয়ে দলকে টানছিলেন দিপক চাহার। তার লড়াই থামিয়ে রোমাঞ্চকর এক জয়ে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করেই ছাড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 05:12 PM
Updated : 23 Jan 2022, 09:48 PM

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৪ রানে হেরেছে ভারত। ২০০৯ সালের পর এটাই রানের দিক থেকে তাদের সবচেয়ে ছোট ব্যবধানে হার।

শেষটায় জমে ওঠা ম্যাচে শুরুতে আলো ছড়ান কুইন্টন ডি কক। ১৩০ বলে দুই ছক্কা ও ১২ চারে ১২৪ রানের ইনিংসে দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি। ওয়ানডেতে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের এটি ১৭তম সেঞ্চুরি। সঙ্গে রাসি ফন ডার ডাসেনের ফিফটির পরও ২৮৭ রানে থমকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি ও চাহারের ফিফটিতে ২৮৩ পর্যন্ত যেতে পারে ভারত। 

কেপ টাউনে রোববার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ইয়ানেমান মালানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সবে বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ওপেনার চাহারের বলে ধরা পড়েন রিশাভ পান্তের গ্লাভসে।

রান আউট হয়ে দ্রুত ফিরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। দুই অঙ্ক ছুঁয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি এইডেন মারক্রাম। একদিকে দ্রুত উইকেট পড়লেও অন্য প্রান্তে নিজের মতো খেলে যান ডি কক।

চতুর্থ উইকেটে ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে গড়েন চমৎকার এক জুটি। বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ডি কক। তাকে সঙ্গ দিয়ে যান ফন ডার ডাসেন।

৫৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ১০৮ বলে ডি কক পৌঁছান তিন অঙ্কে, ভারতের বিপক্ষে তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। দেশটির বিপক্ষে এর চেয়ে একটি বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়ার।

সেঞ্চুরির পর ডি কক বেশিদূর যেতে পারেননি ডি কক। ডিপ স্কয়ার লেগে বুমরাহর বলে ধরা পড়েন ধাওয়ানের হাতে। ভাঙে ১৪৪ রানের জুটি। এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

৭৩ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তিনশর আগেই। পঞ্চাশ ছুঁয়েই বিদায় নেন ফন ডার ডাসেন। ৫৯ বলে খেলা তার ৫২ রানের ইনিংস গড়া চারটি চার ও এক ছক্কায়। শেষ দিকে ৩৮ বলে ৩৯ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন ডেভিড মিলার।

৫৯ রানে ৩ উইকেট নেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দুটি করে উইকেট নেন বুমরাহ ও চাহার।

রান তাড়ায় লোকেশ রাহুলকে দ্রুত হারানো ভারত দৃঢ় ভিত পায় ধাওয়ান ও কোহলির ব্যাটে। দুই ব্যাটসম্যান দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে গড়েন ৯৮ রানের জুটি। ৫৮ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ধাওয়ান, ৬৩ বলে কোহলি।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। এই মিডিয়াম পেসারের শর্ট বলে হুক করে সীমানায় ধরা পড়েন ধাওয়ান। ৭৩ বলে খেলা তার ৬১ রানের ইনিংস গড়া ৫ চার ও ১ ছক্কায়।

গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান পান্ত। কেশভ মহারাজের টার্ন ও বাউন্সে চমকে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় কোহলির চমৎকার ইনিংস। ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক ৫ চারে ৮৪ বলে করেন ৬৫ রান।

থিতু হয়ে ফিরেন শ্রেয়াস আইয়ার। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩২ বলে ৩৯ রান করে সূর্যকুমার ফিরে গেলে ম্যাচ হেলে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে।

টি-টোয়েন্টি ঘরানার ব্যাটিংয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরান চাহার। ৩৪ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৫৪ রানের ইনিংসে জয়কে নিয়ে আসেন দৃষ্টি সীমানায়। কিন্তু লুঙ্গি এনিগিডির বলে ড্রাইভের চেষ্টায় তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে আর পেরে ওঠেনি ভারত। শেষ উইকেটে জয়ের জন্য শেষ ওভারে মেলাতে পারেনি ৬ রানের সমীকরণ।

তাই হোয়াইটওয়াশড হওয়াও এড়াতে পারেনি সফরকারীরা।

ফেলুকওয়ায়ো ৪০ রানে নেন ৩ উইকেট। এনগিডি ৩ উইকেট নেন ৫৮ রানে।

সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ডি কক। আগের ম্যাচে ফিফটি করা এই কিপার-ব্যাটসম্যানই জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৫ ওভারে ২৮৭ (ডি কক ১২৪, মালান ১, বাভুমা ৮, মারক্রাম ১৫, ফন ডার ডাসেন ৫২, মিলার ৩৯, ফেলুকওয়ায়ো ৪, প্রিটোরিয়াস ২০, মহারাজ ৬, মাগালা ০, এনগিডি ০*; চাহার ৮-০-৫৩-২, বুমরাহ ১০-০-৫২-২,কৃষ্ণা ৯.৫-০-৫৯-৩, জয়ন্ত ১০-০-৫৩-০, চেহেল ৯-০-৪৭-১, শ্রেয়াস ৩-০-২১-০)

ভারত: ৪৯.২ ওভারে ২৮৩ (রাহুল ৯, ধাওয়ান ৬১, কোহলি ৬৫, পান্ত ০, শ্রেয়াস ২৬, সূর্যকুমার ৩৯, চাহার ৫৪, জয়ন্ত ২, বুমরাহ ১২, চেহেল ২, কৃষ্ণা ২*; এনগিডি ১০-০-৫৮-৩, প্রিটোরিয়াস ৯.২-০-৫৪-২, মাগালা ১০-০-৬৯-১, মহারাজ ১০-০-৩৯-১, ফেলুকওয়ায়ো ৭-০-৪০-৩, মারক্রাম ৩-০-২১-০)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক

ম্যান অব দা সিরিজ: কুইন্টন ডি কক