কয়েক মাসের প্রস্তুতির ফসল তাইজুলের ৭ উইকেট

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে রাজা। মিরপুরের বাইরে গেলেই অপেক্ষা সাজা। বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বাস্তবতা এটি। প্রতিকূল উইকেটে প্রাণের সঞ্চার করার গবেষণা তাই বেশ কয়েক মাস ধরেই চলছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে। স্পিন কোচ সোহেল ইসলাম বললেন, দীর্ঘদিনের সেই চেষ্টার ফল চট্টগ্রামের ২২ গজে তাইজুলের ৭ উইকেট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 01:47 PM
Updated : 28 Nov 2021, 04:02 PM

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের কীর্তি গড়ে রোববার ১১৬ রানে ৭ উইকেট নেন তাইজুল। যদিও উইকেট এখানে খুব স্পিন বান্ধব কিংবা টার্নিং নয়। বরং পেসারদের জন্য আছে সহায়তা। ব্যাটসম্যানদের জন্যও সুবিধা আছে যথেষ্ট।

এমনিতে স্পিনারদের এমন দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের মঞ্চ হিসেবে পরিচিত মিরপুর। সেখানে ৩৯ রানে ৮ উইকেট আছে তাইজুলের, টেস্টে বাংলাদেশের যা সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তাইজুলের নিজেরও আরও অনেক দারুণ পারফরম্যান্স আছে সেখানে।

এবার চট্টগ্রামে কিভাবে সম্ভব হলো তাইজুলের এমন বোলিং? দিনশেষে সংবাদ সম্মেলেন তা তুলে ধরলেন স্পিন কোচ।

“খেলাটা দেখলে বুঝতে পারবেন যে, সকাল থেকে উইকেটের যে আচরণ ছিল, এটা খুব যে সহায়ক ছিল স্পিনারদের জন্য, সেটা নয়। যে ধৈর্য নিয়ে সে বল করেছে, ওভারের পর ওভার যে সঠিক নিশানা ছিল, যে শৃঙ্খলা ছিল তার বোলিংয়ে এবং দিনজুড়ে যে মনোযোগ দিয়ে সে বল করেছে, তার সাফল্যের পেছনে এটা বড় কারণ।”

সহায়তা না থাকা উইকেটে এমন ধৈর্য ও শৃঙ্খলা নিয়ে বোলিং হুট করেই হয়নি তাইজুলের। সোহেল ইসলাম জানালেন, দীর্ঘ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ফসলই মিলেছে এবার।

“আমরা অনেকদিন ধরেই এই পরিকল্পনা করছিলাম। মিরপুরে যখন আমাদের স্পিনাররা খেলে, একটা মানসিকতা থাকে যে অনেক আক্রমণাত্মক থাকব বা কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট পাব। কিন্তু এই ধরনের উইকেটে (চট্টগ্রাম টেস্টের মতো) বা দেশের বাইরে উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তা থাকে না অতটা। এজন্যই আমরা গত কয়েক মাস ধরে এটা চেষ্টা করছি যে, এরকম ফ্ল্যাট উইকেটে কিভাবে ধৈর্য ও নিশানা ধরে রেখে ওভারের পর ওভার বল করা যায়।”

“স্পিনারদের মানসিকতায় যে বদলটা এসেছে, এটা একটা বড় ব্যাপার। সব জায়গায় মিরপুরের মতো উইকেট আমরা পাব না। তবে ছেলেরা এই যে শিখছে, এটাই ওদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের মাঝে সোহেল ইসলাম।

মানসিকতায় বদলের আগে বদল এসেছিল তাইজুল ইসলামের বোলিং অ্যাকশনেও। গত বছর শুরুতে সেই সময়ের স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেটোরির পরামর্শে অ্যাকশনে বদল আনেন তাইজুল, মূলত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কার্যকারিতা বাড়াতে। সেই অ্যাকশনে খুব সুবিধা করতে না পেরে আরেক দফা পরিবর্তন আনেন অ্যাকশনে।

অ্যাকশন বদলের এই সময়টায় তিনি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সব সংস্করণেই জায়গা করে নেন। কিন্তু তার বোলিংয়ে ধার ও কার্যকারিতা কিছুটা কমে যায়। পরে ফিরে আসেন পুরনো সহজাত অ্যাকশনে।

অ্যাকশন বদল থেকে শুরু করে আবার ফিরে আসার পুরো প্রক্রিয়াটায় তাইজুল ছিলেন সোহেল ইসলামের তত্ত্বাবধানেই। ৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর ২৮ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত একজন ক্রিকেটার নিজেকে সমৃদ্ধ করতে এত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, সোহেল মুগ্ধ তাতে।

“অনেকে অনেক কথা বলেছে তার অ্যাকশন পরিবর্তন নিয়ে। আমার কাছে সাহসী ছেলে সবসময় পছন্দ। একটা পর্যায় থেকে আরেকটা পর্যায়ে যেতে ঝুঁকি নেবে, এরকম চরিত্র পছন্দ। ওই সময় সে যে এই সাহস দেখিয়েছে…ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল।”

“সেটিতে সফল হয়নি, তার পুরনো অ্যাকশনে চলে এসেছে। পুরনো ছন্দ ফিরে এসেছে। তবে সে যে সুযোগটা নিয়েছিল এবং ঝুঁকি নেওয়ার যে প্রবণতা তার মধ্যে, একটা ছেলের মধ্যে এটা থাকলে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

চট্টগ্রাম টেস্টের ৭ উইকেটে চলতি বছর ৫ টেস্টে ২৭ উইকেট হয়ে গেল তাইজুলের। বাঁহাতি এই স্পিনার নিজেও পরে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, সোহেলের সংস্পর্শেই সম্ভব হয়েছে নিজেকে তার ফিরে পাওয়া।

“এটা সত্যি যে আমি আমার পুরনো অ্যাকশনেই সফল। আসলে একটু চেষ্টা করেছিলাম যে আরও ভালো কিছু করা যায় কিনা। অ্যাকশন বদল করাই যাবে না কিংবা করে বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, এমন নয়।”

“অনেক বড় সাহায্য পেয়েছি তখন সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে। অনেক আগে থেকেই উনার সঙ্গে কাজ করে আসছি। আমি যখন আবার পুরনো অ্যাকশনে ফিরতে চেয়েছি, সোহেল ভাইয়ের কারণেই তা সহজ হয়েছে। কারণ উনি আমার অ্যাকশন সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। তো খুব একটা সমস্যা হয়নি।”