আপাতত ঘটনার তদন্তের ফল না আসা পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবেন রবিনসন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের বিবেচনায় তাকে রাখা হচ্ছে না। দল ছেড়ে নিজ কাউন্টি সাসেক্সে যেতে বলা হয়েছে তাকে।
রোববার ড্রয়ে শেষ হওয়া লর্ডস টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নেন ২৭ বছর বয়সী রবিনসন, ব্যাট হাতে একমাত্র ইনিংসে ৪২ রান করার পথে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন ররি বার্নসের সঙ্গে।
গত বুধবার রবিনসনের টেস্ট অভিষেকের দিনই বিতর্কের শুরু। বল হাতে যখন তিনি নজর কাড়া পারফরম্যান্স করছিলেন, তখনই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে তার পুরনো কিছু টুইট। ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত তার সেসব টুইটে ছিল সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত, এশিয়ান বংশোদ্ভূত ও নারীদের প্রতি ছিল অবমাননাকর মন্তব্য।
রবিনসনের বয়স তখন ছিল ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। সেই সময়টায় তিনি খেলছিলেন লেস্টারশায়ার, কেন্ট ও ইয়র্কশায়ারের দ্বিতীয় দলের হয়ে।
এমন এক দিনে রবিনসনের এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে, যেদিন খেলা শুরুর আগে দুই দলই লিঙ্গবৈষম্যসহ ক্রিকেটে সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানায়। ইংল্যান্ড দল একটি ট্রেনিং জার্সি উন্মোচিত করে, যেখানে লেখা আছে বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী নানা স্লোগান।
দিনের খেলা চলার সময় রবিনসনকে কিছু জানায়নি ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট। দিনের খেলা শেষে লিখিত ও ভিডিও বিবৃতিতে ক্ষমা চান রবিসন। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তখনই ঘোষণা দেয় তদন্তের।
“ব্যাট হাতে সে ভালো অবদান রেখেছে, বল হাতে পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। উঁচুমানের স্কিলের প্রমাণ সে রেখেছে এবং দেখিয়েছে, টেস্ট ক্রিকেটে সফল হওয়ার উপকরণ তার আছে। কিন্তু মাঠের বাইরে যা হয়েছে, আমাদের খেলায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সবাই তা জানি।”
“সে ড্রেসিংরুমে সরাসরিই কথা বলেছে। সংবাদমাধ্যমেও কথা বলেছে, মুখোমুখি হয়েছে। তখন সে যথেষ্টই অনুতপ্ত ছিল। দলের ভেতর আমরা বুঝতে পেরেছি, তার সেই অনুশোচনা সত্যিই ভেতর থেকে ছিল।”
রুটের মতে, রবিনসনের ঘটনা সবার জন্যই শিক্ষা।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে টুইটগুলো বিশ্বাসই করতে পারিনি। বুঝতে পারছিলাম না, এসব কীভাবে নেওয়া উচিত। ওই সময়টায় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অলি আমাদের ড্রেসিং রুমের অংশ ও তার পাশে থাকতে হতো আমাদের।”
“ এই ঘটনা আমাদের সবার জন্যই বড় শিক্ষা যে খেলাটায় আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। নিজেদের শিক্ষিত করে যেতে হবে আমাদের, সবার জন্য আরও ভালো পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যতটা সম্ভব ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং অসাধারণ এই খেলাটায় সবাইকে স্বস্তির আবহ দিতে হবে।”
টেস্ট অভিষেকের দিন খেলা শেষে ক্ষমা চেয়ে রবিনসন বলেছিলেন, ঘটনার সময় তিনি অপরিণত ছিলেন।
“এখনও পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় দিনটিতে আমি বিব্রত আট বছর আগের বর্ণবাদী ও সেক্সিস্ট টুইটের জন্য, যা আজকে প্রকাশ্য হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, আমি বর্ণবাদী ও সেক্সিস্ট নই। নিজের কাজের জন্য আমি ভীষণভাবে অনুতপ্ত ও এমন মন্তব্যের জন্য লজ্জিত।”
“আমি অবিবেচক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম এবং তখন আমার মানসিক অবস্থা যেমনই থাকুক, তা কোনো অজুহাত হতে পারে না। তবে ওই সময়ের পর আমি মানুষ হিসেবে পরিণত হয়েছি ও ওই টুইটগুলোর জন্য পুরোপুরি দুঃখপ্রকাশ করি। গত কয়েক বছরে জীবনকে নতুনভাবে গড়তে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং যথেষ্ট পরিণত হয়েছি বলে মনে করি।”