জয়ের সমান ড্র নয়, জয়ই চায় বাংলাদেশ

প্রাপ্তি ড্র, কিন্তু তৃপ্তি জয়ের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পর থেকে বাংলাদেশ দলের আবহ এরকমই। দুঃসময়ের আঁধার এতটাই নিকষ ছিল, ড্রয়ের আলোও এই দলে এসেছে জয়ের ঝলকানির মতো। কিন্তু এই আলো উষ্ণ করতে পারেনি রাসেল ডমিঙ্গোর মন। অল্পতে তুষ্ট হওয়ার মধ্যবিত্ত মানসিকতা নয়, বাংলাদেশের প্রধান কোচ দলে দেখতে চান চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহসী তাড়না।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2021, 02:12 PM
Updated : 28 April 2021, 02:12 PM

কোচের চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া কতটা মিলবে, জানা যাবে বৃহস্পতিবার থেকে। পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।

প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ায় সিরিজ জয়ের সুযোগ দুই দলেরই আছে। দেশের বাইরে সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। তবে বাস্তবতা বলছে, সিরিজ ড্র করে ফিরতে পারলেও সেটা বিবেচিত হবে বড় সাফল্য হিসেবে। দলের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর এই ফলও তো অভাবনীয়!

তবে এমন ভাবনার সঙ্গে তাল মেলাতেই আপত্তি ডমিঙ্গোর। দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বললেন, ড্রয়ের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ফিল্ডিং অনুশীলনে সাইফ হাসান। দ্বিতীয় টেস্টেও সুযোগ পাচ্ছেন তরুণ এই ওপেনার। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

“এটা হতাশার, যখন একটি ড্র টেস্টকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। আমি এখানে টেস্ট ড্র করতে আসিনি। আমরা অবশ্যই টেস্ট হারতে চাই না। তবে মানসিক একটি পরিবর্তন আমাদের প্রয়োজন। স্রেফ ড্রয়ে খুশি থাকলে চলবে না, জয়ের জন্য খেলতে হবে আমাদের।”

দেশের বাইরের টেস্টে সাধারণত বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য থাকে হার এড়ানো। জয়ের ভাবনা সেখানে পাত্তা পায় না নানা বাস্তবতার খাতিরেই। কিন্তু এই মানসিকতার শেষ দেখতে চান ডমিঙ্গো।

“দলের সঙ্গে এখন আমার ছয়-সাত টেস্ট হয়ে গেল, মনে হয় দলকে ও দলের সংস্কৃতি এখন বুঝি। আমি জানি কোন জায়গাগুলোয় আমাদের উন্নতি করতে হবে, বিশেষ করে টেস্টে মানসিকতার জায়গায়। পথের এখনও অনেক বাকি এখানে। টেস্টে হারের ভয় কাজ করে এখনও, সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।”

“জয়ের জন্য খেলতে হবে আমাদের। আমার মনে হয়, এখন আমরা খেলছি না হারার জন্য। এই মানসিক বাধা দূর করতে হবে। এটার জন্য সময় লাগবে। ছেলেরা টেস্টে সাফল্য পায়নি। মানসিকতার বদল না এলে, এই গড়পড়তা মান নিয়েই আমরা স্বস্তিতে থাকব। আমি এমন কিছুর অংশ হতে চাই না।”

মানসিক পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গাও দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশ কোচ।

“আমরা দলকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই এবং জয়ের জন্য খেলতে চাই। কঠিন কন্ডিশনে আগে ব্যাটিং করতে হবে। প্রতিপক্ষকে অলআউট করার যথেষ্ট সময় নিজেদের দিতে হলে সময়মতো ইনিংস ঘোষণা করতে হবে আমাদের। সত্যিকারের ভালো টেস্ট জাতি হয়ে উঠতে হলে এসব মানসিক পরিবর্তনগুলো দরকার।”

টেস্টের আগের দিন ফুরফুরে মেজাজে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে, পেসার লাকমল ও অন্যরা। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

ডমিঙ্গো যা বলছেন, প্রথম টেস্টে সেসবের অনেকগুলোই দেখা গেছে। পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলেছে দল, বাংলাদেশে যা খুব কম সময়ই দেখা যায়। ইনিংস ঘোষণার ক্ষেত্রেও ছিল জয়ের চেষ্টার ইঙ্গিত। যদিও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পারেনি সম্ভাবনা জাগাতেও। তাতে নিষ্প্রাণ উইকেটের ভূমিকা যেমন ছিল, বাংলাদেশের স্কিলের সীমাবদ্ধতাও ছিল বড় কারণ।

দ্বিতীয় টেস্টের উইকেট একইরকম থাকবে না বলেই ইঙ্গিত মিলছে। শ্রীলঙ্কা দল বাড়তি স্পিনার যুক্ত করেছে স্কোয়াডে। তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানোর আভাসও দিয়েছে তারা। তবে বাংলাদেশের স্কোয়াডে বাড়তি কোনো স্পিনার যোগ করা হয়নি। স্পিনার তাই নিশ্চিতভাবে থাকছেন দুজনই-মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। পেস আক্রমণে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামকে দেখা গেলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। তবে মূল পরিকল্পনা আগের টেস্টের মতোই হবে বলে সঙ্কেত মিলছে।

পরিকল্পনা যেমনই হোক, লক্ষ্য যে একটিই, সেটি পরে আবার স্পষ্ট করে দিলেন ডমিঙ্গো।

“আমরা সিরিজ জয়ের চেষ্টা করতে চাই। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জয় হবে বাংলাদেশের জন্য দারুণ অর্জন। যে লক্ষ্যগুলো আমরা ঠিক করেছি, সেসবের মধ্যে একটি দেশের বাইরে সিরিজ জয়। পাঁচ দিন ধরে ভালো খেলতে হবে আমাদের। শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাঠে হারানো কঠিন কাজ। আমাদের মনোযোগ হলো শুরুটা ভালো করা এবং সেশন ধরে ধরে এগোনোয়।”