টেস্টে ফেরার রোমাঞ্চ আর ১২০ পয়েন্টের আশা

বাংলাদেশ দলের অনুশীলন তখন শেষ দিকে। বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনকে ক্যাচিং অনুশীলন করাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। সেটি নিয়ে সবার সে কী হাসাহাসি! অধিনায়ক মুমিনুল হক তখন বসে আছেন মাঠের মাঝখানে উইকেটের পাশে, সঙ্গে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। হয়তো দুজন কথা বলছিলেন সম্ভাব্য একাদশ নিয়ে, কৌশল নিয়ে। একটু পর নেটের পাশে চেয়ারে গোল হয়ে বসলেন দলের প্রায় সবাই। চলল আড্ডা, হাসি, মজা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2021, 02:38 PM
Updated : 2 Feb 2021, 02:51 PM

টেস্ট সিরিজ শুরুর আগের দিন অনুশীলনে বাংলাদেশ দলের সবাইকে দেখা গেল বেশ ফুরফুরে। প্রায় ১ বছর পর টেস্ট ম্যাচ, রোমাঞ্চ নিশ্চয়ই আছে সবারই। তবে নিজেদের আঙিনায় প্রতিপক্ষ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেটিও খর্বশক্তির, মুমিনুল-তামিমদের স্বস্তিতেও থাকার কথা বেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের দেখা হয়তো মিলতে যাচ্ছে!

ক্রিকেট খেলায় আগে থেকেই কোনো কিছু ধরে নেওয়া সবসময়ই ঝুঁকির। তবে যে দলকে সবশেষ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ, এবার তারা আরও খর্বশক্তির, তাদের বিপক্ষে দুই টেস্টেই জয়ের প্রত্যাশায় বাড়াবাড়ি খুব একটা নেই। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৩ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট শূন্য, এই সিরিজ শেষে সেখানে ১২০ পয়েন্ট যোগ হওয়ার আশা করাই যায়।

বাংলাদেশ দলের এই অভিযান শুরু হচ্ছে বুধবার। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি। ম্যাচ শুরু সকাল সাড়ে ৯টায়।

যথারীতি স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে জড়তা। গত ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের পর এই প্রথম টেস্ট খেলতে নামছেন মুমিনুলরা। এই লম্বা সময়ে কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলার সুযোগ হয়নি। গত কিছুদিনে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি হয়েছে বেশ কিছু। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে তাই সময় লাগতে পারে।

ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মুমিনুল অবশ্য ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বললেন, এটিকে তিনি দেখছেন নতুন সুযোগ হিসেবে।

“এক বছর পর ক্রিকেটে ফেরা (টেস্টে) এটা সত্যি। আমার কাছে মনে হয়, এক বছর পর যেহেতু ফিরছি, নতুন করে আরেকটা সুযোগ এসেছে টেস্ট ক্রিকেট নতুনভাবে শুরু করার। এটাকে সুযোগ হিসেবেই দেখছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। ওটার চাইতে আমি যে জিনিসটা ভাবছি, আমরা দল হিসেবে ভালো পারফর্ম করার, নতুন করে শুরু করার সুযোগ পাচ্ছি।”

নতুন শুরুর জন্য এই খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের চেয়ে আদর্শ প্রতিপক্ষ আর কে হতে পারে! যদিও কদিন আগে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়া দলটির তুলনায় বেশ ভালো ক্যারিবিয়ানদের টেস্ট স্কোয়াড। জেসন হোল্ডার ও রোস্টন চেইস ছাড়া খুব বড় কাউকে তারা মিস করছে না টেস্ট দলে।

ব্যাটিংয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, জন ক্যাম্পবেল, জার্মেইন ব্ল্যাকউডরা মূল দলেরই অংশ। বোলিং আক্রমণ তো যথেষ্টই ধারাল। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচররা এখানকার মন্থর উইকেটেও যথেষ্ট ভোগাতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। অফ স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল তো বড় হুমকিই হতে পারেন। পাশাপাশি দুই বাঁহাতি স্পিনার জোমেল কর্নওয়াল ও ভিরাসামি পেরমলও হতে পারেন কার্যকর।

আরেকটি জায়গায়ও কিছুটা এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোভিড বিরতির পর বাংলাদেশের এটি প্রথম টেস্ট হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মধ্যেই খেলে ফেলেছে ৫টি টেস্ট!

এই সিরিজ দিয়ে নিষেধাজ্ঞার পর টেস্টেও ফিরছেন সাকিব আল হাসান।

তবে সমীকরণ সবশেষে ঠেকছে গিয়ে এখানকার কন্ডিশন ও উইকেটে। এটিই এগিয়ে রাখছে বাংলাদেশকে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ম্যাচের আগের দিন বললেন, উইকেট শুষ্ক এবং দুই দলের গতবারের সিরিজের মতোই। সেই সিরিজে বাংলাদেশের চার স্পিনার সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান মিলে ৪০ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ানদের। ওই চারজন আছেন এবারও। এই সিরিজ দিয়েও নিষেধাজ্ঞার পর টেস্টেও ফিরছেন সাকিব।

এবার অবশ্য একাদশে চারজনেরই জায়গা হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য। এখনকার টিম ম্যানেজমেন্ট ঘরের মাঠের টেস্টেও অন্তত দুজন পেস বোলার খেলাতে খুবই আগ্রহী। স্পিনার তাই সাকিবসহ তিনজনই হয়তো হবেন।

সেই তিনজন বাছাইয়েও বড় ভূমিকা থাকবে সাকিবের চোটের অবস্থার। কুঁচকির চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও বোলিংয়ে এখনও শতভাগ ফিট নন সাকিব। ম্যাচের দিন সকালেও অস্বস্তি অনুভব করলে সাকিবের সঙ্গী হবেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। বাইরে থাকতে হবে দুই অফ স্পিনারের একজনকে। সাকিব পুরো ফিট হলে বাইরে থাকবেন তাইজুল, খেলবেন নাঈম-মিরাজ দুজনই।

বাংলাদেশের একাদশে আরেকটি জায়গা নিয়েই থাকবে কৌতূহল। তামিম ইকবালের ওপেনিং জুটির সঙ্গী কে? এমনিতে সম্ভাবনায় এগিয়ে সাদমান ইসলাম। তবে টপ অর্ডারে বাঁহাতিদের প্রাধান্য বেশি বলে ডানহাতি সাইফ হাসানকে খেলানোর সম্ভাবনাও কিছুটা আছে।

একাদশ শেষ পর্যন্ত যেমনই হোক, মুমিনুল জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য কেবলই জয়।

“জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নয়। আমরা সবসময়ই জয়ের জন্য মাঠে নামি, এবারই একই থাকবে। আর ঘরের মাঠে সবসময় স্বাগতিকরা ফেভারিট থাকে। তার মানে এই নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুর্বল হিসেবে দেখছি। তবে আমরা আমাদের দিকেই মনোযোগ রাখছি বেশি। নিজেদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব আমরা।”

বাস্তবতা বলছে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সেরাটা খেললে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেরে ওঠার সম্ভাবনা সামান্যই!

টেস্ট সিরিজের বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ চৌধুরি, ইবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, ইয়াসির আলি চৌধুরি, সাদমান ইসলাম, সাকিব আল হাসান।