আইপিএল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের বার্তা ছড়াতে চান আলি

বড় হয়েছেন রাস্তায় আর বাড়ির ছাদে টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলে। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নও তখন ছিল না। সেই আলি খান এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগগুলোয় পরিচিত নাম। সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে সুযোগ পেয়ে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই ফাস্ট বোলার শোনালেন তার জীবনের বাঁক বদলের গল্প। জানালেন, মাঠে নামার সুযোগ পেলে আইপিএল রাঙিয়ে উজ্জ্বল করতে চান দেশের নাম।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 06:04 AM
Updated : 13 Oct 2020, 06:04 AM

আইপিএলে তার জায়গা করে নেওয়ার খবর বেশ পুরোনো। চোটের কারণে ছিটকে যাওয়া ইংলিশ পেসার হ্যারি গার্নির জায়গায় আলিকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। কদিন আগে খবর ছড়িয়েছিল, চোট পেয়ে আলিরও টুর্নামেন্ট শেষ। তবে পরে জানা গেছে, আপাতত থাকছেন দলের সঙ্গেই। আইপিএলে খেলার সম্ভাবনাও তাই টিকে আছে এখনও।

সিপিএলে দারুণ বোলিং পারফরম্যান্স বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খুলে দিয়েছে তার খেলার দরজা। এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, কানাডা ও পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে। সেই পথ ধরেই পা রেখেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ আইপিএলে।

বিবিসির আইপিএল পডকাস্টে আলি শোনালেন তার জীবন আর ক্রিকেটীয় পথচলার গল্প। 

জন্ম পাকিস্তানে, নতুন জীবন যুক্তরাষ্ট্রে

নিখুঁত নিশানার জন্য ২৯ বছর বয়সী পেসারের নাম হয়েছে ‘দা ইয়র্কার মেশিন।’ সিপিএলের গত তিন আসরেই তিনি ছিলেন ধারাবাহিক পারফরমার। এবারের আসরে আট ম্যাচে ৮ উইকেট নেন ওভারপ্রতি ৭.৪৩ রান দিয়ে। ত্রিনবাগোর শিরোপা জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

আলির জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। পরিবার যখন পাকিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়, তার বয়স ছিল ১৯। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার ভাবনা তার কল্পনাতেও ছিল না।    

“ছোটবেলায় টেপ বলের ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছি, কখনোই ভাবিনি যে আমি পেশাদার ক্রিকেটার হব।”

“রাস্তায়, বাড়ির ছাদে আমার ভাই এবং কাজিনদের সঙ্গে মজা করার জন্য খেলতাম। জানালার কাঁচ ভাঙতাম, সবসময় ঝামেলা পাকাতাম, দেরি করে বাড়ি ফিরতাম। বাবা-মা ছিলেন খুব কঠোর। তাদের কথা ছিল, ‘পড়াশোনা, পড়াশোনা এবং পড়াশোনা করো, স্কুলে যাও, ক্রিকেট খেলার দরকার নেই।”

কিছুদিন আগে সিপিএল খেলে যখন দুবাইয়ের উড়ানে চেপে বসলেন আলি, আকাশপথের দীর্ঘ সময়টায় তিনি পেছনে তাকিয়ে ভাবেন, সবকিছু যেন ঘটে গেল স্বপ্নের মতো।

“বসে বসে ভাবছিলাম, পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পর জীবন কীভাবে বদলে গেল... এখন আমি সুনিল নারাইন ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের (দুজনই কলকাতা নাইট রাইডার্সে) সঙ্গে একই প্রাইভেট বিমানে ভ্রমণ করছি। সব যেন রূপকথার মতো।”

ফেইসবুক বার্তায় বদলে গেল জীবন

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর ওহাইওর স্থানীয় একটি ক্লাবে খেলার সুযোগ পান আলি। কয়েক বছর পর ফেইসবুকে একজনকে পাঠানো এক বার্তায় ঘুরে যায় তার জীবনের মোড়।

“আমি ওহাইও লিগে খেলছিলাম। ২০১৩ সালে সেখানে ম্যাক কুরেশি নামে একজন ছিলেন, তিনি ছিলেন ইউএস ওপেন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রতিষ্ঠাতা, ফ্লোরিডায় যেটা তারা খেলে থাকেন ডিসেম্বরে।”

“ফেইসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছিলাম, আমি একজন ফাস্ট বোলার, ক্রিকেট খেলতে চাই, কোনো সুযোগ আছে কি? তিনি বলেছিলেন, ‘টিকেট কেটে ফেলুন, আমরা দেখব আপনাকে পছন্দ হয় কিনা।”

বলার অপেক্ষা রাখে না, নজর কাড়তে পেরেছিলেন আলি। সেখান থেকেই আলির ক্রিকেট ক্যারিয়ার পেয়ে যায় নতুন মাত্রা। ২০১৫ সালে তিনি ত্রিনিদাদে আইসিসি আমেরিকা ডেভেলপমেন্ট দলের হয়ে খেলেন ৫০ ওভারের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে। এরপর ২০১৬ সিপিএলে ডাক পান গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স দলে।

সেটিই ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার প্রথম পদচারণা। ছাপ রাখতে সময় নেননি একটও। নিজের প্রথম বলেই নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার উইকেট।

ছুটে চলার প্রেরণা রশিদ খান

আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে উঠে এসে এখন বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বড় তারকা রশিদ খান। আরও অনেকের মতো আলি খানের জন্যও এই আফগান লেগ স্পিনার ছিলেন বাতিঘরের মতো।

তবে প্রেরণা মানাই তো সবকিছু নয়। আলি ভালোমতোই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, শীর্ষ পর্যায়ে নিজের জায়গা করে নিতে হবে পারফরম্যান্স দিয়েই।

“ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা একজন হিসেবে সবার দৃষ্টি থাকবে আমার দিকে। তবে আমি এটিকে চাপ নয়, বরং প্রেরণা হিসেবে দেখছি। আমার সামর্থ্য দেখাব। এটি আমাকে দেখাতে সহায়তা করবে যে, যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক প্রতিভা আছে।”

শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে নিয়মিত অংশগ্রহণ থেকে এখনও যোজন যোজন দূরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে ডিভিশন টু-তে খেলে তারা, এখানে ভালো করেই গত বছর প্রথমবারের মতো অর্জন করেছে ওয়ানডে মর্যাদা। তবে সেটা স্থায়ী কিছু নয়। তাদের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নিয়েও ঝামেলা ছিল দীর্ঘ দিন ধরে।

আলি অবশ্য বলছেন, সেখানে ক্রিকেট অবকাঠামোর এখন উন্নতি হচ্ছে। তার মতো অনেক ক্রিকেটারও উঠে আসছেন। আরও বড় স্বপ্ন দেখার সাহসও তাই পাচ্ছেন তিনি।

“আমাদের ভালো সুযোগ-সুবিধা এবং ফ্লোরিডায় একটি জাতীয় স্টেডিয়াম আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেরা স্টেডিয়াম। এখানে সত্যিই এখন ক্রিকেট এগিয়ে চলেছে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ক্যারিবীয় দেশগুলির বড় সম্প্রদায় এখানে আছে, যা ক্রিকেটের উন্নতিতে সহায়তা করছে।”