শ্রীলঙ্কায় হোয়াইটওয়াশড বাংলাদেশ

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে লড়াই করতেও পারল না বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশকে উড়িয়ে শ্রীলঙ্কা পেল ৩-০ ব্যবধানে জয়ের স্বাদ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 08:27 AM
Updated : 31 July 2019, 04:03 PM

শ্রীলঙ্কা ৩ : ০ বাংলাদেশ

অনেক আশা নিয়ে শ্রীলঙ্কা গিয়ে বাংলাদেশ ফিরছে খালি হাতে। প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ হেরে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচ থেকে কিছু একটা পাওয়ার আশায় ছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু মেলেনি কিছুই। শেষ ম্যাচেও হেরে বাংলাদেশ ফিরছে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার বিব্রতকর অভিজ্ঞতা নিয়ে।

প্রথম ম্যাচে ৯১ রানে হার, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে হারের পর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হারল ১২২ রানে।

২০১৫ সালের নভেম্বরের পর প্রথমবার ৩-০ ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পেল শ্রীলঙ্কা।

আরেকটি বড় হার

শেষ দিকে থানিকটা বিনোদন দিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ২৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংস ব্যবধান কমাল খানিকটা। এরপরও পরাজয়ের ব্যবধান বাংলাদেশের জন্য যারপরনাই হতাশার।

তাইজুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে গেছেন। রুবেল হোসেনের রান আউটে শেষ হয়েছে ইনিংস। ২৯৫ রান তাড়ায় ৩৬ ওভারেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১২২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯৪/৮ (ফার্নান্দো ৬, করুনারত্নে ৪৬, কুসল পেরেরা ৪২, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ৮৭, শানাকা ৩০, জয়াসুরিয়া ১৩, হাসারাঙ্গা ১২*, দনাঞ্জয়া ০, রাজিথা ০*; শফিউল ১০-২-৬৮-৩, রুবেল ৯-১-৫৫-১, তাইজুল ১০-১-৩৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৯-০, সৌম্য ৯-০-৫৬-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২২-০)

বাংলাদেশ: ৩৬ ওভারে ১৭২ (এনামুল ১৪, তামিম ২, সৌম্য ৬৯, মুশফিক ১০, মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ৯, সাব্বির ৭, মিরাজ ৮, তাইজুল ৩৯*, শফিউল ১, রুবেল ২; জয়াসুরিয়া ৬-০-৪০-০, রাজিথা ৫-০-১৭-২, দনাঞ্জয়া ১০-০-৪৪-১, শানাকা ৬-০-২৭-৩, হাসারাঙ্গা ৪-১-১৬-১, কুমারা ৫-০-২৬-২)।

ঝটপট ফিরলেন শফিউল

উইকেটে এসে ফিরে যেতে খুব একটা সময় লাগল না শফিউল ইসলামের। ভানিদু হাসারাঙ্গার বলে স্টাম্পড হলেন ১ রানে। বাংলাদেশ এগোলো শেষের খুব কাছে। ৯ উইকেটে রান ১৪৯।

শেষ হলো সৌম্যর লড়াই
 
উইকেট পতনের স্রোতে একা বাঁধ দিয়েছিলেন যিনি, সেই সৌম্য সরকার বিভ্রান্ত হলেন আকিলা দনাঞ্জয়ার লেগ ব্রেকে। বোল্ড হয়ে শেষ হলো তার লড়াই।
 
দনাঞ্জয়ার লেগ ব্রেক না বুঝেই বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। পিচ করে বেরিয়ে যাওয়ার বদলে বল ভেতরে ঢোকে অনেকটা। সৌম্যর ব্যাটের নাগালেও ছিল না বল। বোল্ড না হলে স্টাম্পিংও হতে পারতেন। 
 
৮৬ বলে ৬৯ রানে থামল সৌম্যর লড়াই। ৩১.৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ১৪৩।

দ্রুত ফিরলেন মিরাজ
 
একের পর এক উইকেট হারিয়ে দ্রুত শেষের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লড়াইয়ে হার মেনে এবার বিদায় নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
 
বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম দুই ওভারেই উইকেট নিলেন লাহিরু কুমারা। শর্ট অব লেংথ বলটি একটু বাড়তি লাফিয়ে চমকে দেয় মিরাজকে। শরীর আড়াআড়ি করে তিনি শক্ত হতে পেতে দেন ব্যাট। বল ব্যাটে লেগে সহজ ক্যাচ উঠে যায় শর্ট কাভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। 
 
দুটি চার মেরে মিরাজের ইনিংস থামল ৬ বলে ৮ রান করে। বাংলাদেশ আরেকধাপ এগিয়ে গেল হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পথে। ২৬.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ১১৭। 

দারুণ ক্যাচে ফিরলেন সাব্বির

রিভিউ নিয়ে একবার টিকে গেলেও খুব বেশি দূর এগোতে পারলেন না সাব্বির রহমান। বদলি ফিল্ডার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার অসাধারণ ক্যাচ ফেরাল তাকে।

২৫তম ওভারে বল হাতে পেয়ে লাহিরু কুমারা উইকেট নিলেন প্রথম ওভারেই। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিকে ড্রাইভ করেছিলেন সাব্বির। শরীর থেকে একটু দূরে খেলায় মাটিতে রাখতে পারেনি বল। হাওয়ায় ভেসে আসা বলটিকে শর্ট কাভারে নিজের শরীর বাঁ দিকে শূন্যে ভাসিয়ে দুই হাতে মুঠোবন্দী করেন ধনাঞ্জয়া।

সাব্বিরের ইনিংস শেষ হলো ১৭ বলে ৭ রান করে। ২৫তম ওভারে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১০৫।

সৌম্যর ফিফটি

স্রোতের বিপরীতে এক লড়াই করে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার। সেই পথচলায় স্পর্শ করলেন ফিফটি।

সহজাত আগ্রাসী ব্যাটসম্যান সৌম্য এ দিন পুরো ভিন্ন চেহারায়। তিনে নেমে শুরুটা করেছিলেন অনেক মন্থর। প্রথম বাউন্ডারির আগে ৩৫ বলে রান ছিল ১৭। পরে ছক্কা মেরে ইঙ্গিত দেন ছন্দে ফেরার। আরেক পাশে নিয়মিত উইকেট পড়লেও সৌম্য চালিয়ে গেছেন লড়াই। ফিফটি ছুঁয়েছেন ৬১ বলে।

বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ফিফটি করার পর ১০ ইনিংস বিরতি দিয়ে এলো সৌম্যর আরেকটি ফিফটি।

রিভিউয়ে টিকলেন সাব্বির

আকিলা দনাঞ্জয়ার বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন সাব্বির। মিস করেন লাইন। বল তার প্যাডে লাগলে জোরালো আবেদন করেন বোলার। খানিকটা ভেবে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। সাব্বির রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল প্যাডে লাগার আগে সাব্বিরের গ্লাভস ছুঁয়ে গেছে।         

ব্যর্থতার চক্রে মাহমুদউল্লাহ

মাহমুদউল্লাহ রানে ফিরতে পারলেন না তৃতীয় ম্যাচেও। আগের দুই ম্যাচের মতোই দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বিদায় নিলেন আলগা শটে।

দাসুন শানাকার মিডিয়াম পেসই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ৫ ওভারেই এই অলরাউন্ডার নিলেন তৃতীয় উইকেট।

অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা লেংথ বলটি ঠিক ড্রাইভ করার মতো ছিল না। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ চাইলেন ড্রাইভ খেলতেই, সেটিও শরীর থেকে দূরে। উইকেটের পেছনে কুসল পেরেরা প্রথমে দুই হাতে নেওয়ার চেষ্টা করে পরে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নিলেন ক্যাচ।

১২ বলে ৯ রান করে বিদায় নিলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯.৪ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৮৩।

আবারও ব্যর্থ মিঠুন

সিরিজে টানা তৃতীয়বার ব্যর্থ হলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বিদায় নিলেন দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে।

দাসুন শানাকার শর্ট অব লেংথ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে পুল খেললেন মিঠুন। কিন্তু যতটা দ্রুত আশা করেছিলেন, বল স্কিড করে গেল আরেকটু দ্রুত। পুল করার জন্য একটু বেশি উঁচুতেও ছিল বল। তাতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না শট। সীমানা থেকে ছুটে এসে লাহিরু কুমারা প্রথম চেষ্টায় হাতে জমাতে পারেননি বল। তবে ফসকানো বল ঠিকই শেষ পর্যন্ত জমিয়ে নেন মুঠোয়।

পরিস্থিতির বিবেচনায় বেশ দৃষ্টিকটু শটে মিঠুন ফিরলেন ১১ বলে ৪ রান করে। ১৫.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৬০।

এবার পারলেন না মুশফিকও

নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে বড় ধাক্কা দিলেন দাসুন শানাকা। বিদায় করে দিলেন মুশফিকুর রহিমকে।

সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। আগের দুই ম্যাচে করেছিলেন ৬৭ ও অপরাজিত ৯৮। কিন্তু এবার আর পারলেন না বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করতে। বরং আলগা শটে বিদায় নিলেন তিনিও।

মিডিয়াম পেসার শানাকার বলটি ছিল একদমই নিরীহ। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে। মুশফিক বলের লাইনে পা যথেষ্ট না বাড়িয়ে চালিয়ে দিলেন ব্যাট। কানায় লেগে বল গেল স্লিপে কুসল মেন্ডিসের হাতে।

১৫ বলে ১০ রান করে আউট হলেন মুশফিক। ২৯৫ রান তাড়ায় বাংলাদেশের রান ১২ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৬।

পারলেন না এনামুল

টানা দুটি বাউন্ডারিতে জেগে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এনামুল হক। কিন্তু আরেকটির চেষ্টায় বিদায় নিলেন। পারলেন না দলে ফেরার সুযোগটি কাজে লাগাতে।

দ্বিতীয় ওভারে তামিমের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে একদম আটকে রেখেছিল শ্রীলঙ্কান বোলাররা। হাত খোলার কোনো সুযোগ আসেনি। এনামুলের ব্যাট থেকে দলের প্রথম বাউন্ডারি আসে অষ্টম ওভারে। পরের বলে মারেন আরেকটি বাউন্ডারি।

পরের বলটি ছিল লেগ স্টাম্পে। ফ্লিকে ওড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন এনামুল। ব্যাট চালিয়ে দেন একটু আগেই। বল ওঠে আকাশে। মিড উইকেটে ক্যাচ নেন আভিশকা ফার্নান্দো।

এক বছর পর দলে ফিরে এনামুল বিদায় নিলেন ২৪ বলে ১৪ রান করে। ৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ২৯।

আবারও ব্যর্থ তামিম

ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে এবারও বের হতে পারলেন না তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বিদায় নিলেন  দ্বিতীয় ওভারেই।

এমনিতে স্ট্রাইক নিতে পছন্দ করলেও এ দিন শুরুতে স্ট্রাইক নেননি তামিম। কিন্তু পজিশন বদলেও বদল হলো না ভাগ্যে। আউট হলেন দৃষ্টিকটু শটে। সিরিজে প্রথম খেলতে নামা কাসুন রাজিথার বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। তামিম বলের লাইনে না গিয়েই শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে দিলেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল গেল কিপারের গ্লাভসে।

টানা ৬ ম্যাচে বোল্ড হওয়ার পর এবার অন্যভাবে আউট হলেন তামিম। তবে থেকে গেলেন বাজে সময়ের চক্রেই। আউট হলেন ৬ বলে ২ রান করে। দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪।

তিনশর কাছে শ্রীলঙ্কা

শেষ দুই বলে বাউন্ডারি। শেষ ১০ ওভারে ১০৬। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে শ্রীলঙ্কার রান পৌঁছে গেল তিনশর কাছে।

শুরুতে উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় জুটিতে দলকে ভালো ভিত এনে দেন দিমুখ করুনারত্নে ও কুসল পেরেরা। এই দুজন অল্প সময়ের মধ্যে ফেরার পর হাল ধরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও কুসল মেন্ডিস। দলকে এগিয়ে নেন বড় স্কোরের পথে। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলেন শানাকা ও জয়াসুরিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯৪/৮ (ফার্নান্দো ৬, করুনারত্নে ৪৬, কুসল পেরেরা ৪২, কুসল মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ৮৭, শানাকা ৩০, জয়াসুরিয়া ১৩, হাসারাঙ্গা ১২*, দনাঞ্জয়া ০, রাজিথা ০*; শফিউল ১০-২-৬৮-৩, রুবেল ৯-১-৫৫-১, তাইজুল ১০-১-৩৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৯-০, সৌম্য ৯-০-৫৬-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২২-০)।

আরেকটি ক্যাচ মিস

ইনিংসের শেষ বেলায় আরেকটি ক্যাচ ছাড়লেন সাব্বির রহমান। সৌম্য সরকারের লেংথ বল উড়িয়ে মেরেছিলেন ভানিদু হাসারাঙ্গা। লং অন সীমানায় সাব্বিরের জন্য কাজটি ছিল কঠিন। বলে হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। তবে জমাতে পারেননি মুঠোয়। বল মাটি ছুঁয়ে ছাড়িয়ে যায় সীমানা।

সৌম্যর টানা দুই

নতুন ব্যাটসম্যান আকিলা দনাঞ্জয়াকে প্রথম বলেই ফেরালেন সৌম্য সরকার। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে তিনি হ্যাটট্রিকের সামনে।

অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ বলে ইন সাইড আউট খেলে উড়িয়ে মেরেছিলেন দনাঞ্জয়া। ওয়াইড লং অফে ক্যাচ নেন সাব্বির। ৪৯.২ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে ২৮৪।

শেষ ওভারে ফিরলেন ম্যাথিউস

সেঞ্চুরি করতে শেষ ওভারে ১৩ রান প্রয়োজন ছিল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের। কিন্তু তাকে আর কোনো রান করতে না দিয়েই থামালেন সৌম্য সরকার।

অফ স্টাম্পের বাইরে একটু টেনে দিয়েছিলেন সৌম্য। ম্যাথিউসের ড্রাইভে বল তার ব্যাটের কানায় লেগে যায় কিপারের গ্লাভসে। আম্পায়ার সাড়া দেননি আবেদনে। রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

৯০ বলে ৮৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলে ফিরলেন ম্যাথিউস। ৪৯.১ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ২৮৪।

শফিউলের তৃতীয় শিকার জয়াসুরিয়া

দ্রুত রান বাড়ানোর চেষ্টায় শফিউলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হলেন শেহান জয়াসুরিয়া। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুলং লেংথ বলে গায়ের জোরে হাঁকিয়েছিলেন বাঁহাতি জয়াসুরিয়া। কিন্তু ঠিক ছিল না ব্যালান্স। বল উঠে যায় আকাশে। ক্যাচ নেন তামিম।

৭ বলে ১৩ রানে ফিরলেন জয়াসুরিয়া। ৪৮.৪ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে ২৮০।

শানাকার ঝড় থামালেন শফিউল

ঝড়ের গতিতে ছুটতে থাকা দাসুন শানাকাকে থামালেন শফিউল ইসলাম। আগের ওভারে ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া সাব্বির রহমান এবার নিলেন দারুণ ক্যাচ।

শফিউলের বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ। শানাকা চেয়েছিলেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ওড়াতে। টাইমিং হয়নি ঠিকমতো। এবার লং অফ থেকে অনেকটা ছুটে বলের কাছাকাছি গিয়ে সামনে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নেন সাব্বির।

দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রান করে ফিরলেন শানাকা। ৪৬.১ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে ২৫১।

জুটির ঝড়ো পঞ্চাশ

শেষ দিকে দাবি দারুণভাবে মেটাচ্ছেন দাসুন শানাকা। হাত খুলতে শুরু করেছেন ম্যাথিউসও। দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পঞ্চম উইকেট জুটির ফিফটি হয়ে গেছে ২৫ বলেই। শানাকা করেছেন ১২ বলে ২৯।

আবার বাঁচলেন ম্যাথিউস

স্লগ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে এনে খানিকটা চমকে দিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সেই মিরাজই সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন ম্যাথিউসকে ফেরানোর। কিন্তু আবারও বেঁচে গেলেন ম্যাথিউস।

জায়গা বানিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ম্যাথিউস। বিভ্রান্ত হয়েছিলেন মিরাজের ফ্লাইটে। লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে বলের নিচে গেলেও বল হাতে জমাতে পারেননি সাব্বির। বল আঙুল ছুঁয়ে পড়ে যায় মাটিতে।

ম্যাথিউসের ফিফটি

ফর্মে থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস পৌঁছে গেলেন আরেকটি ফিফটিতে। শুরুটা ছিল বেশ মন্থর। তবে সময়ের সঙ্গে বাড়িয়েছেন রানের গতি। ৬৯ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটি। সিরিজে তার টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশ।

মেন্ডিসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন সৌম্য

শতরান ছোঁয়ার পর আর খুব বেশি দূর যেতে পারল না জুটি। কুসল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন সৌম্য সরকার।

সৌম্যর বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ। তবে স্লোয়ার হয়তো বুঝতে পারেননি মেন্ডিস। উড়িয়ে মেরেছিলেন, বল যতটা ওপরে ওঠে, ততটা দূরত্ব পেরোয়নি। লং অনে ভালো ক্যাচ নেন সাব্বির রহমান।

৫৮ বলে ৫৪ রান করে ফিরলেন মেন্ডিস। শ্রীলঙ্কার রান ৪১.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৯। ভাঙল ১০১ রানের জুটি।

শতরানের জুটি

শুরুতে ছিল প্রতিরোধের পালা। পরে উইকেটে জমে যাওয়ার পর এই ম্যাথিউস ও মেন্ডিসের জুটি উল্টো চাপে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

চতুর্থ উইকেটে জুটির ফিফটি হয়েছিল ৭০ বলে, পরের ফিফটি হলো ৪৯ বলেই। জুটিতে মেন্ডিস করেছেন ৫৩, ম্যাথিউস ৪৭।

মেন্ডিসের ফিফটি

আগের দুই ম্যাচে দুটি চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংসের পর কুসল মেন্ডিস পেলেন সিরিজের প্রথম ফিফটি। তাইজুলকে সুইপ করে ছক্কায় উড়িয়ে পঞ্চাশ স্পর্শ করেছেন ৫৫ বলে।

ম্যাথিউসের জীবন

জুটি ভাঙার একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ক্যাচ ছাড়ায় হাতছাড়া হলো সুযোগ। বেঁচে গেলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।

শফিউল ইসলামের নতুন স্পেলের প্রথম বলটিতে চার মেরেছিলেন ম্যাথিউস। পরের বলটি ছিল লেগ স্টাম্পে। ঠিকমতো খেলতে পারেননি ম্যাথিউস। গ্ল্যান্স করতে গিয়ে আলতো করে লাগিয়েছিলেন ব্যাটে। খুব কঠিন সুযোগ না হলেও ক্যাচ নিতে পারেননি মুশফিক। ম্যাথিউসের রান তখন ৩১।

মেন্ডিস-ম্যাথিউস জুটির ফিফটি

জোড়া ধাক্কার পর সামলে নিতে একটু সময় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। কুসল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস বেছে নিয়েছেন ধীরে চলার পথ। তবে দুজন একটু গুছিয়ে নেওয়ার পর বাড়ছে রানের গতি। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটির ফিফটি হয়েছে ৭০ বলে।

জুটিতে বেশি সক্রিয় ছিলেন মেন্ডিস, ৩১ বলে করেছেন ৩০ রান। অভিজ্ঞ ম্যাথিউস ২০ রান করেছেন ৩৯ বলে।

পেরেরাকে ফেরালেন রুবেল

করুনারত্নের বিদায়ে জুটি ভাঙার পর আরেকটি উইকেটও ধরা দিল দ্রুত। এবার রুবেল হোসেনের বলে বাজে শটে আউট হলেন কুসল পেরেরা।

অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা লেংথ বল আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল অ্যাঙ্গেলে। পেরেরার পা ছিল জায়গায় আটকে, বলের লাইনে নড়েননি একটুও। সেখানে দাঁড়িয়েই খেললেন শট। ব্যাটের কানায় আলতো করে ছুঁয়ে বল গেল কিপারের গ্লাভসে।

৫১ বলে ৪২ রান করে ফিরলেন পেরেরা। জোড়া উইকেটে নিয়ন্ত্রণে ফিরল বাংলাদেশ। ২১.২ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ৩ উইকেটে ৯৮।

বাজে শটে করুনারত্নের বিদায়

আগের দুই ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁয়ে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি দিমুথ করুনারত্নে। এই ম্যাচে ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারলেন না। উইকেট দিয়ে এলেন তাইজুল ইসলামকে।

তাইজুল বল ছাড়ার আগেই প্যাডেল সুইপের পজিশনে চলে যাচ্ছিলেন করুনরারত্নে। সেটি দেখে তাইজুল দিলেন একটু ঝুলিয়ে, অফ স্টাম্পের বাইরে। সেখান থেকেই কিপারের ওপর দিয়ে আলতো করে তুলে দিতে চাইলেন করুনারত্নে। কিন্ত বলে ছিল না গতি, মারে ছিল না যথেষ্ট জোর। অনায়াসেই গ্লাভসে জমালেন কিপার মুশফিক।

৬০ বলে ৪৬ রান করে বিদায় নিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। ভাঙল ৮৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ২০.২ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ২ উইকেটে ৯৬।

দ্বিতীয় জুটিতে ফিফটি

শুরুতে উইকেট হারানার ধাক্কা সামলে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নিচ্ছেন দিমুথ করুনারত্নে ও কুসল পেরেরা। তাড়াহুড়ো না করে, ঠাণ্ডা মাথায় ঝুঁকিবিহীন শট খেলার পথে বেছে নিয়েছেন দুজন। গড়ে উঠেছে জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটির ফিফটি হয়েছে ৬৪ বলে।

জুটিতে ৩০ বলে ২৪ করেছেন করুনারত্নে, ৩৪ বলে ২৪ পেরেরা।

শুরুতে শফিউলের আঘাত

শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করতে থাকা শফিউল ইসলাম দলকে এনে দিলেন প্রথম উইকেট। ফিরিয়ে দিলেন আগের ম্যাচে দারুণ খেলা আভিশকা ফার্নান্দোকে।

প্রথম ওভারটি মেডেন নিয়েছিলেন শফিউল। পরের ওভারে দিয়েছিলেন ৩ রান। তৃতীয় ওভারেও ধরে রাখেন ভালো বোলিংয়ের ধারা। তাতেই ধরা দেয় উইকেট।

অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা লেংথ বল সিমে পড়ে ভেতরে ঢোকে অনেকটা। ফার্নান্দো ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে। বলের লাইনের কাছাকাছিও ছিল না ব্যাট। বল লাগে প্যাডে। আবেদনে সাড়া দিতে খুব সময় নেননি আম্পায়ার।

প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ফিরলেন ১৪ বলে ৬ রান করে। পঞ্চম ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেটে ১৩।

‘ব্যাটিং’ উইকেট
 
টস জিতে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে বললেন, তার কাছে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো মনে হচ্ছে। সে কারণেই টস জিতে ভালো উইকেটের ব্যবহার তারা করতে চান। একই কারণে টস জিতে ব্যাটিংয়ের ভাবনা ছিল তামিমেরও। 
 
টস রিপোর্টে রাসেল আরনল্ড জানালেন, খেলা হবে নতুন উইকেট। উইকেট বেশ শক্ত মনে হয়েছে তার কাছে, যেখানে আগের ম্যাচের চেয়ে বেশি রান হবে। সাবেক লঙ্কান ক্রিকেটারের মতে, আগে ব্যাট করে ২৬০-২৭০ রান জয়ের মতো স্কোর হতে পারে। কারণ পরের দিকে বল টার্ন করতে পারে কিছুটা।

কুলাসেকেরার জন্য
 
ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ঘোষণা করেছে, এই ম্যাচটি তারা উৎসর্গ করছে পেসার নুয়ান কুলাসেকেরাকে। কদিন আগেই অবসরে গিয়েছেন ওয়ানডেতে ১৯৯ উইকেট নেওয়া পেসার। তাকে মাঠ থেকে বিদায় জানানো হয়নি। তাই একটি ম্যাচ তাকে উৎসর্গ করে সম্মান জানাচ্ছে বোর্ড। 
 
শ্রীলঙ্কার চার পরিবর্তন

সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বাজিয়ে দেখতে চায় অনেককে। একাদশে পরিবর্তন তাই চারটি। অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে জানালেন, সামনে অনেক দিন আর ওয়ানডে নেই বলে কয়েকজনকে পরখ করে দেখছেন তারা।
 
একাদশের বাইরে গেছেন নুয়ান প্রদিপ, ইসুরু উদানা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও লাহিরু থিরিমান্নে। একাদশে এসেছেন দাসুন শানাকা, শেহান জয়াসুরিয়া, ভানিদু হাসারাঙ্গা ও কাসুন রাজিথা।
 
শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), কুসল পেরেরা, আভিশকা ফার্নান্দো, কুসল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দাসুন শানাকা, শেহান জয়াসুরিয়া, ভানিদু হাসারাঙ্গা, আকিলা দনাঞ্জয়া, কাসুন রাজিথা, লাহিরু কুমারা। 

দুই পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ
 
শেষ ম্যাচের বাংলাদেশ একাদশে আগের ম্যাচ থেকে পরিবর্তন আছে দুটি। একটি পরিবর্তন বাধ্য হয়েই। টসের আগে গা গরমের সময় হালকা চোট পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান, তার জায়গায় একাদশে ফিরেছেন রুবেল হোসেন।
 
আরেকটি পরিবর্তনকে অধিনায়ক তামিম বললেন ‘ট্যাকটিক্যাল’। অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় ফিরেছেন এনামুল হক। এই কিপার ব্যাটসম্যান সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন গত বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। 
 
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, এনামুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, শফিউল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন।

টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
 
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে টস ভাগ্যকে পেল না বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানালেন, টস জিতলে ব্যাটিং নিতে তিনিও।

৩-০ ব্যবধানে জয়ে চোখ লঙ্কানদের

প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেওয়া লঙ্কানরা চায় সিরিজের শেষ ম্যাচেও মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে। লক্ষ্য তাদের ৩-০ ব্যবধানে জয়। তবে সিরিজ জয়ের পর এই ম্যাচে একাদশে দু-একজন নতুনকে বাজিয়ে দেখার ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা।

টানা পাঁচের শঙ্কা

বিশ্বকাপে শেষ দুই ম্যাচে হারের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজেও প্রথম দুই ম্যাচে হার, বাংলাদেশের সামনে এখন টানা পাঁচ হারের শঙ্কা। গত কয়েক বছরে ওয়ানডেতে দারুণ উন্নতি করা বাংলাদেশের জন্য এটি বড় এক ধাক্কা। টানা পাঁচ ওয়ানডে তারা সবশেষ হেরেছিল ২০১৪ সালে। 

কিছু পেতে চায় বাংলাদেশ

প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে খুব একটা বেগ দিতেই পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজ হেরে যাওয়া দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল শেষ ম্যাচের আগের দিন বলেছেন, এই ম্যাচ জিতে কিছু একটা নিয়ে দেশে ফিরতে চায় তার দল। প্রথম দুই ম্যাচে যে পরিকল্পনাগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করতে পারেনি দল, শেষ ম্যাচে অন্তত সেসব করে দেখাতে দলর প্রতি তাগিদ জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।