বিবর্ণ বাংলাদেশের বড় হার

বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের জন্য ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা হয়ে পড়েছিল বেশ কঠিন। প্রথম দল হিসেবে আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জেতার চ্যালেঞ্জ ছিল সফরকারীদের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়া তো বহু দূর, খুব একটা লড়াইও করতে পারল না বাংলাদেশ। তিন বিভাগেই ব্যর্থতায় বড় হার দিয়ে সিরিজ শুরু করল তামিম ইকবালের দল।    

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2019, 01:26 PM
Updated : 26 July 2019, 07:33 PM

প্রথম ওয়ানডেতে ৯১ রানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা।

সফরকারীদের এলোমেলো বোলিংয়ের সুযোগ সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগান কুসল পেরেরা। দাপুটে ব্যাটিংয়ে খেলেন ৯৯ বলে ১১১ রানের ইনিংস। শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে দলকে এনে দেন ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ।

বিদায়ী ওয়ানডেতে বল হাতে জ্বলে ওঠেন লাসিথ মালিঙ্গা। একের পর এক ইয়র্কার দিয়ে কাঁপিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের ফিফটিতে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে একটু ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তবুও খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। ৪১ ওভার ৪ বলে গুটিয়ে যায় ২২৩ রানে।

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শেষ ৫ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে গড় ৩১৩। উইকেটে প্রচুর রান আছে, তাই দুই অধিনায়কই নিতে চেয়েছিলেন ব্যাটিং। ওয়ানডে নেতৃত্বের অভিষেকে টস হারেন তামিম, বাংলাদেশ পায় ফিল্ডিং।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা নতুন বল। ২১ মাস পর দেশের হয়ে খেলতে নামা শফিউল ইসলামের হাত ধরে তৃতীয় ওভারে মেলে প্রথম সাফল্য। বিশ্বকাপে তিন নম্বরে সফল আভিশকা ফার্নান্দো ব্যর্থ ওপেনিংয়ে নেমে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়েন স্লিপে।

শুরুর সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। কুসল পেরেরা ক্রিজে গিয়ে শট খেলতে শুরু করতেই বেরিয়ে পড়ে নতুন বলে বাংলাদেশের দৈন্য। কোন লাইন-লেংথে বল করবেন যেন বুঝতেই পারছিলেন না বোলাররা। প্রথম ৪ ওভারে ১৩ রান নেওয়া লঙ্কানরা পরের ৬ ওভারে যোগ করেন ৬৪।

এমনিতে ধীর-স্থির ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত হলেও এদিন দিমুথ করুনারত্নে রান তোলেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আক্রমণে ফিরে স্বাগতিক অধিনায়ককে ফিরিয়ে ৯৭ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ।

নতুন ব্যাটসম্যান কুসল মেন্ডিস শুরুতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তবে সুযোগটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই কুসলের জুটির রান পঞ্চাশ পার হওয়ার পর একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন সৌম্য সরকার। মেন্ডিসের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।

পরে সৌম্যই ভাঙেন দুই কুসলের জুটি। ওয়ানডেতে পঞ্চম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান পেরেরা। ২০১৪ সালের পর এই মাঠে প্রথম লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ১১১ রানের দাপুটে ইনিংস গড়া ১৭ চার ও ১ ছক্কায়। ভাঙে ১০০ রানের জুটি।

ছবি: ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা

রুবেল হোসেনের বলে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যান কুসল মেন্ডিস। নয় বলের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ে একটু কমে রানের গতি। 

পুরান বলে নিয়মিত উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ খুব বেশি বড় করতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। লাহিরু থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে ৬০ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরে বিদায় করেন এই জুটির আরেক ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। মুস্তাফিজের দুই উইকেটের মাঝে বিপজ্জনক থিসারা পেরেরাকে দ্রুত বিদায় করেন শফিউল। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট।

তুমুল করতালির মধ্যে ব্যাটিংয়ে আসেন মালিঙ্গা। নিজের সবশেষ ওয়ানডে ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ৬ রানে।

বিদায়ী ওয়ানডেতে মালিঙ্গা মনে করিয়ে দিলেন তার সেরা সময়কে। সেই ‘ট্রেডমার্ক’ ইয়র্কারে উইকেট নিলেন প্রথম ওভারেই। রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড তামিম। নবম ওভারে আরেকটি দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান অন্য ওপেনার সৌম্যও।

দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের মাঝে নুয়ান প্রদিপের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাজে এক শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন সাব্বির। শুরুতে সময় নেন মুশফিক। ধীরে ধীরে জমে যায় তাদের জুটি। বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। থিতু হওয়ার পর মুশফিকও শট খেলতে শুরু করায় দ্রুত এগোচ্ছিল সফরকারীরা।

জুটির রান ছুঁয়েছিল তিন অঙ্ক। এক-দুই নিয়ে ইনিংস আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল মুশফিক-সাব্বিরের দায়িত্ব। এমন সময়ে হুট করেই বেরিয়ে এসে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান সাব্বির। ভাঙে ১১১ রানের জুটি।

৭ চারে ৫৬ বলে ৬০ রান করে সাব্বির ফেরার পর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ৫ চারে ৬৭ রান করা মুশফিককে থামান প্রদিপ। নিশ্চিত হয়ে যায় সফরকারীদের বড় হার।

মালিঙ্গাকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দেন বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ। এই উইকেট দিয়ে শেষ হল অসাধারণ এক পেসারের বর্ণাঢ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের। মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং-ফিংল্ডিংয়ে আলো ছড়ালো শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ডুবল সব বিভাগেই ব্যর্থতার হতাশায়।

৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন মালিঙ্গা। প্রদিপ ৩ উইকেট নেন ৫১ রানে।

দারুণ সেঞ্চুরিতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া কুসল পেরেরা জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

আগামী রোববার একই ভেন্যুতে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩১৪/৮ (আভিশকা ৭, করুনারত্নে ৩৬, কুসল পেরেরা ১১১, মেন্ডিস ৪৩, ম্যাথিউস ৪৮, থিরিমান্নে ২৫, থিসারা ২, ডি সিলভা ১৮, মালিঙ্গা ৬*, প্রদিপ ০*; শফিউল ৯-০-৬২-৩, মিরাজ ৯-০-৫৬-১, রুবেল ৯-০-৫৪-১, মোসাদ্দেক ৭-০-৪৫-০, মুস্তাফিজ ১০-০-৭৫-২, সৌম্য ৫-০-১৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)

বাংলাদেশ: ৪১.৪ ওভার ২২৩ (তামিম ০, সৌম্য ১৫, মিঠুন ১০, মুশফিক ৬৭, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাব্বির ৬০, মোসাদ্দেক ১২, মিরাজ ২, শফিউল ২, রুবেল ৬*, মুস্তাফিজ ১৮; মালিঙ্গা ৯.৪-২-৩৮-৩, প্রদিপ ৯-১-৫১-৩, থিসারা ৬-০-৩৬-০, কুমারা ৭-০-৪৫-১, ডি সিলভা ১০-০-৪৯-২)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৯১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল পেরেরা