নেতৃত্বের জ্বালানিতে উদ্দীপ্ত মাহমুদউল্লাহ

নেতৃত্বের ভার কাউকে নুইয়ে দেয়। আবার কারও কাঁধ করে দেয় চওড়া। ভেতরে জন্ম দেয় স্ফুলিঙ্গ, উজ্জীবনের জ্বালানি হয়ে জোগায় অনুপ্রেরণা। মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় দলে। অধিনায়কত্ব যাকে নাড়িয়ে দেয় প্রবল ভাবে। তার বিশ্বাস, দায়িত্ব তাকে প্রেরণা জোগায় আরও ভালো পারফর্ম করতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2018, 09:34 AM
Updated : 2 Nov 2018, 10:07 AM

স্বপ্নটা তার শৈশব লালিত। দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন যখন থেকে দেখতেন, স্বপ্নের সীমানা স্পর্শ করত অধিনায়কত্বও। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মাহমুদইল্লাহর। যদিও যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে হয়নি। আরেকজনের দুর্ভাগ্য তার জন্য বয়ে এনেছে সৌভাগ্য। এরপরও, বাংলাদেশ অধিনায়ক তকমা তো গায়ে লেগেছে!

২০১১ সালে শুরু হওয়া সহ-অধিনায়কত্বের প্রথম দফায় একটি ম্যাচেও অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ হয়নি। অথচ এই দফায় নিয়মিত অধিনায়কের চেয়ে সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশি। সাকিব আল হাসানের চোটে বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্টে নেতৃত্ব দিলেন। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির প্রথম তিন ম্যাচেও ছিলেন অধিনায়ক।

পরে সাকিব ফিরেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন মৌসুম শুরু হতে হতে আবারও সাকিব মাঠের বাইরে চোট নিয়ে। আবারও তাই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নেতৃত্ব দেবেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্টেই।

বাড়তি দায়িত্বে ভারাক্রান্ত হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার নজির ক্রিকেটে আছে অসংখ্য। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ বরং নিজেকে আরও বেশি করে খুঁজে পান অধিনায়কত্বের ছোঁয়ায়। যদিও এ রকম ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, গুছিয়ে কাজ করা কঠিন। সেই চ্যালেঞ্জটাকেও তিনি দেখেন নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ হিসেবে।

“অধিনায়কত্ব সব সময় আমাকে ভালোভাবে নাড়া দেয়। দায়িত্বটা আমি সবসময় উপভোগ করার চেষ্টা করি। কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করছি। দলের সবাই কমবেশি সাহায্য করে। এখন আমি ভালো খেলার অপেক্ষায় আছি।”

“এটা বলতে পারি যে, দায়িত্ব আমার খেলায় বড় প্রভাব ফেলে। আমাকে সেই চ্যালেঞ্জ দেয় যেন নিজের সেরাটা দলের জন্য দিতে পারি। অবশ্য আগে খেলোয়াড় হিসেবে চিন্তা করতে হবে যে দলকে কিভাবে সার্ভিস দিচ্ছি। এটাও চিন্তা করি। পাশাপাশি দায়িত্বটা উপভোগ করি এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পছন্দ করি। আমার মনে হয় এটা আমার খেলায়ও সাহায্য করে।”

ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে সবচেয়ে কঠিন হলো অধিনায়ক হিসেবে নিজের ছাপ রাখা। সব অধিনায়কেরই আলাদা ধরন আছে। সেটি ফুটিয়ে তুলতে সময় লাগে, সুযোগ লাগে। ড্রেসিং রুমে সেই শ্রদ্ধার জায়গায় থাকতে হয়, সতীর্থদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে হয় সম্মান।

এমনিতে দলে বেশ জনপ্রিয় চরিত্র মাহমুদউল্লাহ। সতীর্থদের কাছে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সমীহের জায়গা তার আছে। তবে এরকম বদলি দায়িত্বে, সীমিত সময়ে নিজের ছাপ রাখার সুযোগ কমই।

মাহমুদউল্লাহ জানালেন, তবু তিনি চেষ্টা করবেন তার মতো করে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে বহুবার। অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে পেরেছেন যেমন, তেমনি মাঠে আগ্রাসী নেতৃত্বের প্রমাণ রেখেছেন অনেকবার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তার চাওয়া সেটি ধরে রাখা। সতীর্থদের কাঁধে আস্থার হাত রেখে ভরসা জোগাতে চান নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে।

“আমি সবসময় ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা দিলে যে যার জায়গা থেকে পারফর্ম করার সুযোগটা বেশি থাকে। আমি সবসময় সেটিকে গুরুত্ব দেই।”

“অনেক সময় অধিনায়কত্ব গাট ফিলিংয়ের উপর নির্ভর করে। আবার অনেক সময় গাট ফিলিং কাজে নাও লাগতে পারে। আবার অনেক সময় পরিস্থিতি অনেক কিছু দাবি করে। তখন সেই দাবি অনুযায়ী কাজ করতে হয়।”

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দায়িত্বটা মাহমুদউল্লাহর জন্য এসেছিল অনেকটাই আচমকা। এবার সাকিবের না থাকা বেশ আগে থেকেই নিশ্চিত বলে তার মানসিক প্রস্তুতিও একটু বেশি। হয়তো এই সিরিজই হবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে আরও ভালো করে চেনার মঞ্চ।