শ্রীলঙ্কার দারুণ জয়ে রঙিন প্রেমাদাসার উৎসব

শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা ও ক্রিকেট বোর্ডের ৭০ বছর পূর্তির আয়োজনে প্রায় ৩৫ হাজার দর্শকে ঠাসা প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। চিৎকার, হুল্লোড়, শব্দ-বাজনায় গোটা স্টেডিয়াম যেন উৎসবের আঙিনা। ম্যাচ জুড়ে চলা উৎসব পরে আরও বর্ণিল হয়ে উঠল শ্রীলঙ্কার দারুণ জয়ে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2018, 05:15 PM
Updated : 6 March 2018, 05:52 PM

ফেভারিট ভারতকে হারিয়ে শুরু হলো ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার পথচলা। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকরা জিতেছে ৫ উইকেটে।

ম্যাচের ঠিক আগে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের উদ্বোধনও হয় ছোট্ট কিন্তু দারুণ আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানে। ড্রামের ছন্দ, বাঁশির সুর; ঐতিহ্যবাহী সিংহলিজ নাচ ও গান। স্কুল ও বিভিন্ন একাডেমির শিশুদের মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে। মাঠে স্বাগতিক ক্রিকেটারদের দারুণ পারফরম্যান্সে সেই আয়োজন ছড়িয়ে যায় গ্যালারিতেও।

কলম্বোয় মঙ্গলবার শিখর ধাওয়ানের ৯০ রানের ইনিংস ভারতকে এনে দিয়েছিল ১৭৪ রানের পুঁজি। কুসল পেরেরার ঝড়ো ব্যাটিং শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে দেয় জয়ের পথে। মাঝে একটু শঙ্কা জাগলেও শেষ দিকে থিসারা পেরেরার ব্যাটে স্বাগতিকরা জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় ৯ বল বাকি থাকতে।

প্রেমাদাসার উইকেট ছিল ঘাসে ভরা। তবে সবই মরা ঘাস। পিচ তাই ব্যাটিং স্বর্গ। তবে ভারতীয় ইনিংসে সেই স্বর্গের সুখটুকু ফুটে উঠল কেবল শিখর ধাওয়ানের ব্যাটে। গোটা ইনিংসে দুই ভাগে আলাদা করা যায় অনায়াসেই। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে ৯০ রান করেছেন ধাওয়ান। অতিরিক্ত ১০ বাদ দিলে বাকিরা মিলে ৭১ বলে করেছেন কেবল ৭৪ রান!

ভারতের শুরুটাই হোঁচট খেয়ে। প্রথম ওভারেই আউট রোহিত শর্মা। দুশমন্থ চামিরার বলে মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে দারুণ ডাইভিং ক্যাচ নিলেন জিবন মেন্ডিস। পরের ওভারে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে নুয়ান প্রদিপের ফুলটসে উড়ল সুরেশ রায়নার বেলস। ভারতের রান ২ উইকেট ৯।

ভারতের তখন প্রয়োজন ছিল একটি জুটির। ধাওয়ানকে সঙ্গ দিয়ে সেই জুটি গড়ে তোলেন মনিশ পান্ডে। তবে শুরুর ধাক্কার কারণেই কিনা, ধাওয়ানের মতো গতিময় ছিল না মনিশের ব্যাট।

তৃতীয় উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। তাতে ধাওয়ানের অবদান ২৯ বলে ৫০, মনিশের ৩৭ বলে ৩৫।

মনিশ ফেরার পর একই গল্প পরের জুটিতেও। রিশাভ পান্তের সঙ্গে ধাওয়ানের জুটি এবার ৪৯ রানের। তাতে ধাওয়ানের অবদান ১৫ বলে ৩৩, পান্ত ১৭ বলে ১৫।

শেষ পর্যন্ত আধ ডজন করে চার ও ছক্কায় ৯০ করে ফিরেছেন ধাওয়ান। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝড় তোলা পান্ত মেটাতে পারেননি শেষের দাবি। ২৩ বলে করেছে ২৩। শেষ দিকে দিনেশ কার্তিক ৬ বলে ১৩ করেছিলেন বলে তবু ১৭৪ পযন্ত যেতে পারে ভারত।

রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় বিস্ফোরক। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচে দুটি ফিফটি করা কুসল মেন্ডিস এবার ফিরেছেন দুটি চার মেরেই। তবে তিনে নেমে তাণ্ডব শুরু করেন কুসল পেরেরা।

চোট কাটিয়ে ফিরেই কুসল পেরেরা এদিন নিজের সেরা আক্রমণাত্মক চেহারায়। তৃতীয় ওভারে শার্দুল ঠাকুরের ওভারে মারেন ৫ চার ও ১ ছক্কা। একটি নো বলসহ সেই ওভার থেকেই আসে ২৭ রান।

আরেক পাশে দানুশকা গুনাথিলাকাও চেষ্টা করেছেন সঙ্গত ধরার। তাতে ৩.৪ ওভারেই শ্রীলঙ্কার রান পঞ্চাশ।

জয়দেব উনাদকাটের স্লোয়ারে ১২ বলে ১৯ রান করে ফেরেন গুনাথিলাকা। কিন্তু কুসল পেরেরার ব্যাট থামেনি। পাওয়ার প্লেতে তাই শ্রীলঙ্কা গড়ে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, ৬ ওভারে ৭৫!

মাঝে থারাঙ্গা-চান্দিমালরা ভালো শুরু করেও ধরে রাখতে পারেননি। কুসল পেরেরার ঝড় থামান ওয়াশিংটন সুন্দর। ৩৭ বলে ৬৬ রান করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হন স্টাম্পড।

ভারত তখন চেষ্টা করছিল ম্যাচে ফেরার। শ্রীলঙ্কা একটু চাপে। গ্যালারির উল্লাসেও একটু ভাটার টান। ৪ ওভারে প্রয়োজন ৩৫ রান।

মঞ্চে আবির্ভাব তখন আরেক পেরেরার। রান-বলের টানাপোড়েন মেটানোর জন্য থিসারা পেরেরার চেয়ে আদর্শ আর কে আছে শ্রীলঙ্কায়! উনাদকাটকে পরপর দুই বলে মারেন চার ও ছক্কা। তার ব্যাটে আরেকটি চারেই লঙ্কানদের জয়। ১০ বলে অপরাজিত ২২।

উৎসবের সুরে দূর হলো রেকর্ডের পাতায় লঙ্কার একটি শঙ্কার টানও। প্রেমাদাসার ভয় হলো জয়। এই ম্যাচের আগে এই মাঠে ১৪ টি-টোয়েন্টির কেবল দুটি জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এবার সেখানেই দারুণ জয়ে শুরু। লঙ্কানরা এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতেই পারে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৭৪/৫ (রোহিত ০, ধাওয়ান ৯০, রায়না ১, মনিশ ৩৭, পান্ত ২৩, কার্তিক ১৩; চামিরা ২/৩৩, প্রদিপ ১/৩৮, দনঞ্জয়া ০/৩৭, থিসারা ০/৩৫, জিবন ১/২১, গুনাথিলাকা ১/১৬)।

শ্রীলঙ্কা: ১৮.৩ ওভারে ১৭৫/৫ (গুনাথিলাকা ১৯, কুসল মেন্ডিস ১১, কুসল পেরেরা ৬৬, চান্দিমাল ১৪, থারাঙ্গা ১৭, শানাকা ১৫*, থিসারা ২২*; উনাদকাট ১/৩৫, সুন্দর ২/২৮, শার্দুল ০/৪৪, যুজবেন্দ্র ২/৩৭, বিজয় ০/১৫, রায়না ০/১৪)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসল পেরেরা