সাফল্যের পথে যাত্রা শুরুর আশা

বাংলাদেশ দল তখন সবে অনুশীলনে এসেছে। একজন-দুজন করে মাঠে পা রাখতে শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা। হঠাৎ কেঁপে উঠল বেসিন রিজার্ভ। ভূমিকম্প! গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মুহূর্তখানেকের জন্য মনে হলো, দালানটিই যেন ভেঙে পড়বে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিওয়েলিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 10:55 AM
Updated : 11 Jan 2017, 11:20 AM

এই মাঠের জন্মসূত্রও কিন্তু ভয়াবহ একটি ভূমিকম্পে। এক সময় এটি ছিল বিশাল এক লেক। বেসিন লেক। খাল কেটে সাগরের সঙ্গে সংযোগের পরিকল্পনা চলছিল। কিন্তু ১৮৫৫ সালে অন্তত ৫০ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া তীব্র ঝাঁকুনিতে পাল্টে যায় ওয়েলিংটনের ভৌগলিক চিত্র। বেসিন লেক রূপ নেয় স্রেফ একটি জলাভূমির। প্রকৃতির ধ্বংসলীলাকেই উপহার ধরে নিয়ে ওই জলাকে রূপ দেওয়া হয় চোখ জুড়িয়ে দেওয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

এই ইতিহাস বাংলাদেশ দলের জানা থাকার কারণ নেই। বুধবার দুপুরের ভূমিকম্পও দলকে স্পর্শ করেনি ততটা। তবে ভূমিকম্পে রাতারাতি বদলে যাওয়ার মতো অনুভূতি ঠিকই টের পাচ্ছে দল।

সবশেষ টেস্টেই বাংলাদেশ খেলেছে মিরপুরের টার্নিং উইকেটে। বেসিন রিজার্ভে প্রস্তুত সবুজাভ ২২ গজ। মিরপুরে বা বাংলাদেশের কোথাও, ক্রিকেট মাঠে বাতাস কখনই বড় কোনো ব্যাপার নয়। এখানে সবার আগে ভাবতে হয় বাতাসের কথা, তীব্রতায় মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়। উড়িয়ে নিতে চায়। গায়ে কাঁপন ধরায়।

সবশেষ টেস্টে বাংলাদেশের একাদশে ছিল চার স্পিনার, এক পেসার। এখানে তিন পেসার তো নিশ্চিত, আরেকজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারও বিবেচনায় আছেন। সবশেষ টেস্টের ম্যাচ সেরা, সিরিজের সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ খেলছেন বটে, তবে না খেলানোর ভাবনাও ছিল! সবশেষ টেস্টেই বাংলাদেশ হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। অনেকের মতেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য। অথচ এখন ভাবতে হচ্ছে লড়াই করার কথা। সাফল্যের পথে হাঁটা শুরুর কথা!

সেটি বাস্তবতার তাগিদেই। টার্নিং উইকেটে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেও বাস্তবতা বলছে, টেস্টে বাংলাদেশের পায়ের নীচে জমিন এখনও শক্ত নয়। দেশের বাইরে তো আরও বেশি নরম। আর নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তো বাংলাদেশ মাটিই খুঁজে পায় না! রঙিন পোশাকে কখনও স্বাগতিকদের হারাতে পারেনি, সাদা পোশাকে তো জমেনি লড়াইও!

এবার আবার বাংলাদেশ দেশের বাইরে টেস্ট খেলছে দুই বছরের বেশি সময় পর। বাস্তবতাগুলো জানেন বলেই মুশফিকুর রহিমের প্রত্যাশা আকাশে ওড়েনি, থাকছে জমিনেই।

“ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতেছি মানে এই নয় যে আমরা খুব ভালো টেস্ট দল হয়ে গেছি। দেশে আমরা যে রকম কন্ডিশন-উইকেট পাই, বাইরের দলের জন্য কঠিন হয়। এখন আমরা বাইরে খেলছি। লক্ষ্য একটাই যে দেশের মাটিতে যে ধারাবাহিকতা, বাইরে যেন সেটা অন্তত শুরু করতে পারি। লক্ষ্য থাকবে, টেস্টে যেন আমরা লম্বা সময় খেলায় থাকতে পারি এবং লড়াই করতে পারি।”

“এখানে ব্যক্তিগত ভাল স্মৃতি আছে আমাদের। এখন দল হিসেবে করতে হবে। ক্যারেক্টারটা শো করতে হবে। লম্বা সময় ধরে কষ্ট করে যেতে হবে। সেশন বাই সেশন করতে হবে। কঠিন হবে, তবে অসম্ভব নয়।”

এক কঠিন কাজটুকু যদি করে ফেলতে পারে বাংলাদেশ, সামনে পথচলা হবে আরও সহজ। এই বছর দেশের বাইরে বাংলাদেশের অনেক খেলা। এটি যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি সুযোগও, দেশের মাটির সাফল্য দেশের বাইরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার। সবচেয়ে কঠিন দিয়েই শুরু সবার আগে। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে ভালো কিছু করতে পারলে মিলবে গোটা বছরের অনুপ্রেরণার রসদ।

মুশফিকের চাওয়াটা তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও তীব্র আকাঙ্ক্ষা। দেশের বাইরে সাফল্যের পথে যাত্রাটা অন্তত শুরু হোক!