মাশরাফির দুঃস্বপ্নের মাঠে তাসকিনের শুরু

তাসকিন আহমেদকে মাশরাফি বিন মুর্তজা ডাকেন ‘হিরো’ বলে। তাসকিন আবার ফাস্ট বোলার হয়েছেন মাশরাফিকে ‘হিরো’ মেনেই। ক্রিকেটে বা মাঠের বাইরে, দুজনের মিলের শেষ নেই। এবার দুজনকে মিলিয়ে দিচ্ছে তাসকিনের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটাও। চোটের সঙ্গে মাশরাফির সখ্যের যেখানে শুরু, সেই মাঠেই শুরু হচ্ছে তাসকিনের টেস্ট ক্যারিয়ার।

ক্রীড়া প্রতিবেদক ওয়েলিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 04:56 AM
Updated : 11 Jan 2017, 10:39 AM

বেসিন রিজার্ভের নানা প্রান্তে নানাভাবে সংরক্ষণ করা আছে এই মাঠের সবগুলো টেস্টের স্মারক। মূল ভবনে ঢুকতেই যেমন সিঁড়ির মাথায় বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড টেস্টের স্কোরকার্ড বাঁধাই করে দেয়ালে সাঁটা। সেটি ২০০১ সালের ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট।

আগের মাসেই দেশের মাটিতে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মাশরাফির। গতির ঝড় তুলে সাড়া জাগানো অভিষেক। বিদেশের মাটিকেও স্পর্শ করল সেই ঝড়। হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টে নিলেন ৪ উইকেট। তবে একটি অমিত সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের অপূর্ণতার গোড়াপত্তন ওখানেই। বৃষ্টিবিঘ্নিত এক দিনে ৬৮ ওভারের মধ্যে মাশরাফিকে একাই ২৩ ওভার বোলিং করিয়েছিলেন অধিনায়ক।

১৮ বছরের শরীরটা বিদ্রোহ করেছিল। নানাপ্রান্তে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল ব্যথা। তার পরও থামানো হয়নি মাশরাফিকে। তবে আসল সর্বনাশ হয় এর পরের টেস্টে। প্রচণ্ড ব্যথা থাকলেও বেসিন রিজার্ভে মাঠে নামানো হয় মাশরাফিকে। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ১৬ ওভার বোলিং করার পর ভেঙে পড়েন। ছিটকে যান চোট নিয়ে। চোট জর্জর ক্যারিয়ারের প্রথম চোট।

সেই যে শুরু হলো, চোট আর পিছু ছাড়েনি মাশরাফিকে। খেয়ে নিয়েছে সম্ভাবনার অনেকটাই। সেই মাঠেই শুরু হচ্ছে তাসকিনের ক্যারিয়ার। মাশরাফির মত তিনিও চোট-প্রবণ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগেই পেরিয়ে এসেছেন বড় চোটের ধাক্কা।

তাসকিনের গতি ও আগ্রাসন নিয়ে রোমাঞ্চ যেমন আছে, থাকল চোট নিয়ে শঙ্কাও। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১০টি, সবশেষটি ২০১৩ সালে। মাত্র মাস তিনেক আগেই কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, এখনই টেস্টে নামিয়ে ছেলেটির ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চান না।

সেই তাসকিনেরই টেস্ট অভিষেক হচ্ছে বৃহস্পতিবার। কোচের ভাবনা পাল্টে গেল এত দ্রুত? তার শরীর তৈরি তো টেস্টের জন্য? অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বললেন, তাসকিনের সময় এখনই।

“তাসকিনকে পাওয়া শুধু অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই রোমাঞ্চকর। ওর মত একটা বোলার যদি তিন ফরম্যাটেই খেলতে পারে, যে কোনো দলের জন্যই বড় পাওয়া। তবে শুরুতেই খুব বেশি আশা করা ঠিক হবে না। কারণ সে লংগার ভার্সন খুব বেশি খেলেইনি সেভাবে। সীমিত ওভারে যেমন বোলিং করে, সেটি লম্বা সময় ধরে রাখতে পারলেই হবে। আমি মনে করি, টেস্ট শুরু করার এটিই সেরা সময় ওর।”

কিন্তু মাশরাফির স্মৃতি যে দুঃস্বপ্ন হয়ে হানা দেয় এখনও! সেই সময়ের অধিনায়ক খালেদ মাসুদকে কাঠগড়ায়ও তোলেন অনেকে। মুশফিক আশ্বাস দিলেন, তেমন কিছুর পুনরাবৃত্তি হবে না।

“ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে একটু হলেও অভিজ্ঞতা হয়েছে ওর। সেটা কাজে লাগবে। আর অধিনায়ক হিসেবে আমি অবশ্যই চেষ্টা করব যেন ওকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমি জানি, ওকে ম্যানেজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।”

এই জায়গাটায় দুজনের বাস্তবতা অবশ্য খানিকটা আলাদা। মাশরাফির শুরু ছিল টেস্ট দিয়েই। ছিলেন একদমই নবীন, কাঁচা। গতির ঝড় তোলার সামর্থ্য থাকলেও শরীর পোক্ত ছিল না একটুও। তাসকিন সেখানে আড়াই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছেন। চোটমুক্ত রাখতে এবং শরীর শক্তপোক্ত করে গড়ে তুলতে আলাদা ট্রেনিং প্রোগ্রাম দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে তাকে। বয়সটাও সেই সময়ের মাশরাফির চেয়ে ৩ বছর বেশি। শঙ্কা তাই একটু কম। 

তাসকিনকে নিয়ে রোমাঞ্চটুকুই থাকুক। উড়ে যাক শঙ্কাগুলো!