হাসিতে আড়াল মাশরাফির কষ্ট
আরিফুল ইসলাম রনি, মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Jan 2017 06:12 PM BdST Updated: 08 Jan 2017 08:08 PM BdST
“বলটা হাতে এসে লাগল, সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আঙুল বুঝি উড়িয়ে নিয়ে গেছে! প্রচণ্ড ব্যথা, সত্যিই ভেবেছি আঙুল আর নেই। একটু পরই আর আর ব্যথার অনুভূতি নেই, অবশ হয়ে গেল যেন…।” টিম হোটেলের লবিতে বসে বলছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। হাতে ব্যান্ডেজ, গলায় ঝোলানো ডান হাত। কথা বলছেন আর শব্দ করে হাসছেন। কষ্টের কথাও হাসতে হাসতে বলা বুঝি তার পক্ষেই সম্ভব!
কোরি অ্যান্ডারসনের ব্যাট থেকে গোলার মতো আসা বল হাতে লাগা মাত্রই মাশরাফি বুঝে গিয়েছিলেন, সাধারণ চোট নয়। নিশ্চিতভাবেই চিড়। তবে স্ক্যানে যা ধরা পড়ল, দেখে শিওরে উঠেছিলেন নিজেই। বুড়ো আঙুলের ওপরের হাড় প্রায় পুরোটা ভেঙে আলাদা হওয়ার অবস্থা। শেষ দিকে কোনোরকমে একটু জোড়া লেগে ঝুলে আছে!
পরে অবশ্য নিজের সেই ভাঙা আঙুল নিয়ে নিজেই মজা করছেন নানা রকম। স্ক্যানের ছবিটা ফোনে নিয়ে এসেছেন। নানা জনকে দেখাচ্ছেন ভাঙা আঙুল। একেকজন দেখে চমকে উঠছেন, আর মাশরাফি হাসছেন!
বিসিবির আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বলছে, চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে ফিরতে। তবে মাশরাফি নিজেই বলছেন, ছয় থেকে আট সপ্তাহ। আপাতত দুই সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রাম। এরপর টুকটাক জিম শুরু করতে হবে। তবে চার থেকে ছয় সপ্তাহ হাত গলার সঙ্গে ঝুলিয়েই রাখতে হবে। আঙুলের ইনজুরির একটি স্বস্তির ব্যাপার হলো, জোড়া লাগা মাত্র মাঠে নামা যাবে। আলাদা করে পুনর্বাসনের কিছু নাই।
আড্ডার মাঝখানেই ফিজিও ডিন কনওয়ে ও ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন এলেন কথা বলতে। সঙ্গে সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল। ফিজিও আশ্বস্ত করলেন যে চিন্তার কিছু নেই। মানসিকভাবে শক্ত থাকার পরামর্শ দিলেন। মাশরাফি আবারও হাসেন। চোট পেলে কী করতে হবে, এসব তার চেয়ে ভালো আর কে জানে!
নিজেকে খুব ভালো করে জানেন বলেই তিনি একটু শঙ্কিত। ক্যারিয়ারে জুড়ে অসংখ্য চোটের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজেই মোটামুটি একজন চোট বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। ডাক্তার-ফিজিও হিসাবের বাইরেও তার নিজের একটি হিসাব আছে। সেই হিসেব থেকেই মনে বিঁধছে অস্বস্তির চোরকাঁটা। যদি অস্ত্রোপচার করাতেই হয়!


“সিডনিতে আঙুলের স্পেশালিস্ট আছেন একজন, বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাকে একটু দেখিয়ে নিতে চাই। সেখানে সম্ভব না হলে অকল্যান্ডেই ভালো কাউকে দেখিয়ে নেব। এখানে ডাক্তার-ফিজিও বলছেন অস্ত্রোপচার লাগবে না। তবে আমি আরেকটু নিশ্চিত হয়ে নিতে চাই।”
এমনিতে ১৩ জানুয়ারি অকল্যান্ড থেকে সিডনির টিকিট করা আছে। তবে এখন আর ঠিক ছুটি কাটানোর মানসিক অবস্থায় নেই। তাই চেষ্টা করছেন টিকিট এগিয়ে এনে আগেই সিডনি গিয়ে বিশেষজ্ঞ দেখানোর। টিকিট এগিয়ে আনা সম্ভব না হলে অকল্যান্ডেই দেখাবেন আগে। পরে সিডনিতে দেখাতে পারেন। দেশে ফেরার কথা ১৯ জানুয়ারি। তবে এখন ফিরতে পারেন আগেই।

ওয়ালশ এসেই জড়িয়ে ধরলেন। কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “কোনো চিন্তা করো না। ছুটি মজা করে কাটাও আর নিজের খেয়াল রাখো।”
ছুটি মজা করে কাটানোর অবস্থা অবশ্য এখন আর নেই। স্ত্রী, ভাই সবার মন খারাপ স্বাভাবিকভাবেই। পারলে সবাই এখনই দেশে ফিরে যান। মাশরাফি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে তবেই ফিরতে চান।
কথা বলছেন। আর কিছুক্ষণ পরপরই হাসছেন খিলখিল করে। তবে চোখে-মুখে বিষাদের ছাপ বোঝা যায় একটু গভীর হয়ে তাকালেই। ক্যরিয়ার জুড়েই যেমনটি করে আসছেন, মনকাড়া হাসিতে মনের কষ্ট আড়াল করার চেষ্টা!
সর্বাধিক পঠিত
- পাঁচটি প্রিয় বিকাশ নম্বরে ‘সেন্ড মানিতে’ খরচ নেই
- আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: সামিয়া
- অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’ প্রদর্শনযোগ্য নয়: সেন্সর বোর্ড
- বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি বার্তোমেউ ‘আটক’
- ভিনিসিউসের শেষের গোলে রক্ষা রিয়ালের
- বার্সেলোনায় যাচ্ছে গার্সিয়া: গুয়ার্দিওলা
- ‘এত বড় দেশে কোথাও জায়গা হল না’
- এশিয়া কাপ পেছানোর ভাবনা
- বিদেশিদের উদ্বেগ ‘তাজ্জবের’ ব্যাপার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- খুলনায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি কৈবল মাছ বিক্রি