‘ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলগুলির একটি এই ভারত’

শিরোপার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে এসে সেমি-ফাইনালের আগেই বাদ। কোচ হিসেবে রবি শাস্ত্রীর বিদায়টা হলো না সুখকর। লোকে শেষটা মনে রাখে বলেই কিনা, শাস্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন তার পুরো ভ্রমণই। ভারতের কোচের দায়িত্বে এই পথচলায় তাকিয়ে তৃপ্তিই পাচ্ছেন তিনি। বিদায়বেলায় তাই আবেগ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে, তবে ভারতের বিদায়ী কোচ দারুণ গর্বিত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2021, 05:03 AM
Updated : 9 Nov 2021, 10:55 AM

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায়ের ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলে ভারত। পরের তিন ম্যাচ জিতেও লাভ হয়নি। সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচের আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় সেমি-ফাইনালের আগে তাদের বাদ পড়া। নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সোমবার শেষ হয় কোচ হিসেবে শাস্ত্রীর পথচলা। বিরাট কোহলির নেতৃত্বের অধ্যায়েরও ইতি এই ম্যাচ দিয়ে।

বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেও তার পুরো কোচিং অধ্যায় দারুণ সফল বলেই স্টার স্পোর্টসে আলাপচারিতায় দাবি করলেন শাস্ত্রী।

“দায়িত্ব নেওয়ার সময় নিজেকেই বলেছিলাম, পার্থক্য গড়তে চাই এবং আমি গড়েছি। জীবনে কখনও কখনও চূড়ান্তটাই সবকিছুই নয়, বরং পথচলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছেলেরা গত পাঁচ বছরে যা যা পেরিয়ে গেছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্রমণ করে প্রতিটি প্রান্তে সব সংস্করণে যেভাবে পারফর্ম করেছে, তাতে এখানে (বিশ্বকাপে) ফল যেমনই হোক, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলগুলির একটি এটি।”

“এটা নিয়ে আমার কোনো সংশয়ই নেই। দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা এই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছি। তবে তাতে এই গ্রেট দলের কৃতিত্ব কমে যাচ্ছে না।”

২০১৪ সালে ভারতের কোচিং স্টাফে টিম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন শাস্ত্রী। পরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে দায়িত্ব নেন প্রধান কোচের। সাফল্য পাওয়ায় ২০১৯ সালে বাড়ে তার দায়িত্বের মেয়াদ। সেই মেয়াদ এবার শেষ। সেই সময়টা প্রাপ্তিতে টইটম্বুর দেখছেন সাবেক এই অলরাউন্ডার ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার।

“সব সংস্করণ মিলিয়ে অসংখ্য প্রাপ্তি আছে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, লাল বলে বিশ্বজুড়ে জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজে, শ্রীলঙ্কায়, অস্ট্রেলিয়ায়, ইংল্যান্ডে আমরা এখনও সিরিজে এগিয়ে আছি (একটি টেস্ট স্থগিত হয়েছে, যা হবে আগামী বছর)।”

“দেশের বাইরে গিয়ে এইসব দলকে টেস্টে হারানো, এরপর সাদা বলের ক্রিকেটে, তা টি-টোয়েন্টি হোক বা ৫০ ওভারের, সব দলকে তাদের মাঠে হারানো, এটিই ছিল আমার ও এই দলের লক্ষ্য। কারণ আমাদেরকে বরাবরই দেশের মাটিতে বাঘ মনে করা হতো। দেশের বাইরে ভালো করার রসদ আমাদের ছিল না। কিন্তু এই দল দেখিয়েছে, তাদের রসদ পর্যাপ্ত আছে।”

বিশ্বকাপ নিয়ে শাস্ত্রীর আক্ষেপ, লম্বা আইপিএলের পর মানসিক ও শারীরিক শ্রান্তি কাটিয়ে ওঠার সময় পাননি তারা।

“মানসিকভাবে আমি প্রায় নিঃশেষিত, তবে এই বয়সে সেটা প্রত্যাশিতই। ছেলেরাও মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত। ছয় মাস ধরে আমরা সুরক্ষা বলয়ে আছি। আইপিএল ও বিশ্বকাপের মধ্যে আরেকটু বড় বিরতি থাকলে ভালো হতো। এজন্যই (বিরতি কম ছিল বলে) বড় ম্যাচের আগে যেভাবে জেগে ওঠা প্রয়োজন ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি (বিশ্বকাপে)।”

“এটা অজুহাত নয়। আমরা হারগুলোকেও সঙ্গী করে নেব, কারণ এই দল হারতে ভয় পায় না। জয়ের চেষ্টা করতে গেলে, হারও আসবে। এখানে আমরা জিততে চেষ্টাই করিনি (ভারত-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচে), কারণ তাড়নাটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

তবে বিদায়বেলার আঁধারে পুরো অধ্যায়ের আলো হারাতে দিতে চান না শাস্ত্রী। তাই তার দাবি, শেষ করছেন মাথা উঁচু রেখেই।

“ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেরা দলগুলির একটি এটি। ওদের এই কৃতিত্ব কমে যাচ্ছে না। আমার দিক থেকে, এই ভ্রমণে সঙ্গী হওয়া, ছেলেরা যেভাবে সাড়া দিয়েছে এবং নিত্য মানদণ্ড উঁচুতে তুলে নিয়েছে… ড্রেসিং রুম থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আবেগ অবশ্যই ছুঁয়ে যাচ্ছে, তবে অনেক গর্ব নিয়েও যাচ্ছি।”