অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড, জিতেও দ. আফ্রিকার বিদায়

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে মিলেছে জয়ের দেখা। শেষ ওভারে কাগিসো রাবাদা পেয়েছেন হ্যাটট্রিকের স্বাদ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সেমি-ফাইনালে যাওয়ার আশা শেষ হয়ে যায় ম্যাচ শেষের আগেই! অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে চলে গেছে ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2021, 04:03 PM
Updated : 6 Nov 2021, 07:11 PM

সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১ এর শেষ ম্যাচে শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১০ রানে।

২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১৮৯ রান। সেমি-ফাইনালে যেতে ইংল্যান্ডকে ১৩১ বা এর কম রানে আটকে রাখতে হতো তাদের।

১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তা পেরিয়ে যায় ইংলিশরা। তাতে সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার।

ইংল্যান্ডের পরের ধাপের টিকেট নিশ্চিত হয়ে যায় ৮৭ রানে পৌঁছেই। ১৬০ রান পেরিয়ে হয় গ্রুপ সেরা। শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারে ৮ উইকেটে ১৭৯। আসরে পায় প্রথম হারের স্বাদ।  

পাঁচ ম্যাচে চারটি করে জয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমান ৮ পয়েন্ট করে। নেট রানরেটে এগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, রানার্স-আপ অস্ট্রেলিয়া।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৬০ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন রাসি ফন ডার ডাসেন। ৬টি ছক্কার সঙ্গে চার ৫টি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশটির কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি।

মাত্র ২৫ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন এইডেন মারক্রাম। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ১০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি মাত্র ৫২ বলে।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারে অফ স্পিনার মইন আলিকে স্লগ সুইপ করার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন রিজা হেনড্রিকস।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন ফন ডার ডাসেন। শুরুতে তাকে সঙ্গ দেন কুইন্টন ডি কক। ক্রিস ওকসকে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান ডাসেন।

১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৭৩ রান।

৫২ বলে ৭১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ডি ককের বিদায়ে। আদিল রশিদের বলে লং অনে জেসন রয়ের দারুণ ক্যাচে কিপার-ব্যাটসম্যান ফেরেন ২৭ বলে ৩৪ রান করে।

ডাসেন ফিফটি তুলে নেন ৩৭ বলে। ১৩তম ওভারের শেষ বলে মার্ক উডকে ছক্কায় উড়িয়ে দলের রান একশ পার করেন তিনি। ষোড়শ ওভারে ডাসেন পরপর দুই ছক্কা মারেন ওকসকে। সঙ্গে মারক্রামের একটি ছক্কায় ওই ওভার থেকে আসে ২১ রান।

শেষ ওভারে ক্রিস জর্ডানের তিন বলে দুই ছক্কায় মারক্রাম ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ২৪ বলে।

এই সংস্করণে ডাসেনের আগের সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৭৪, গত বছর কেপ টাউনে ইংলিশদের বিপক্ষেই। আর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছিল হার্শেল গিবসের অপরাজিত ৯০, ২০০৭ আসরে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় জস বাটলার ও জেসন রয়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ইংল্যান্ড। তিন ওভারেই দুজন তোলেন ৩৭ রান। পরের ওভারের শুরুতে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়েন রয়। নামেন মইন।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আনরিক নরকিয়াকে ছক্কা মারার পর মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাটলার। ১৫ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় তিনি করেন ২৬ রান। জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউ করে দ্রুত বিদায় করে দেন তাবরাইজ শামসি।

দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মইন ও দাভিদ মালান। শামসিকে ১০২ মিটার বিশাল ছক্কা মারেন মইন। পরের বলেই অবশ্য বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ২৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৩৭।

শেষ ৫ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৬৫ রান। ১৬তম ওভারে রাবাদার প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান কমান লিয়াম লিভিংস্টোন। প্রথমটি ১১২ মিটার, আসরের সবচেয়ে বড় ছক্কা এটি। দ্বিতীয় ছক্কায় বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার।

পরের ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের স্লোয়ারে মালান বিদায় নেন ৩৩ রানে। হাল ধরেন অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান।

২ ওভারে ২৫ রানের প্রয়োজনে প্রিটোরিয়াসের বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন লিভিংস্টোন (১৭ বলে ২৮)। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৪।

নিজের প্রথম তিন ওভারে রাবাদা ছিলেন খরুচে, দেন ৪৫ রান। সেই তিনিই শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ওকস, মর্গ্যান ও জর্ডানকে ফিরিয়ে মাতেন হ্যাটট্রিক আনন্দে।

সেই ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেট লি। পরের পাঁচ আসরে যা করে দেখাতে পারেননি আর কেউ।

এবার এক আসরেই হ্যাটট্রিক হলো তিনটি! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরপর তিন বলে তিন উইকেট নেন আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্পার। তিনি অবশ্য এগিয়ে আরেক ধাপ। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে করেন ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’, টানা চার বলে নেন চার উইকেট।

পরে তালিকায় নাম লেখান শ্রীলঙ্কার ভানিদু হাসারাঙ্গা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বোলার হিসেবে এই স্বাদ পেলেন পেসার রাবাদা। 

শেষ ওভারে ইংল্যান্ড নিতে পারে কেবল ৩ রান। ম্যাচের ফল যদিও কোনো প্রভাব রাখল না সেমি-ফাইনালের সমীকরণে।

গ্রুপ-২ থেকে এরই মধ্যে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। আরেক দল চূড়ান্ত হবে নিউ জিল্যান্ড, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে থেকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৮৯/২ (হেনড্রিকস ২, ডি কক ৩৪, ডাসেন ৯৪*, মারক্রাম ৫২*;মইন ৪-০-২৭-১, ওকস ৪-০-৪৩-০, রশিদ ৪-০-৩২-১, জর্ডান ৪-০-৩৬-০, উড ৪-০-৪৭-০)

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭৯/৮ (রয় ২০ রিটায়ার্ড হার্ট, বাটলার ২৬, মইন ৩৭, বেয়ারস্টো ১, মালান ৩৩, লিভিংস্টোন ২৮, মর্গ্যান ১৭, ওকস ৭, জর্ডান ০, রশিদ ২, উড ১*; মহারাজ ৩-০-২৩-০, নরকিয়া ৪-০-৩৪-১, রাবাদা ৪-০-৪৮-৩, শামসি ৪-০-২৪-২, মারক্রাম ২-০-১৮-০, প্রিটোরিয়াস ৩-০-৩০-২) 

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রাসি ফন ডার ডাসেন