ছন্নছাড়া বাংলাদেশ পাত্তাই পেল না ইংল্যান্ডের কাছে

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় লড়াইও করতে পারল না বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল মাহমুদউল্লাহর দল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2021, 09:34 AM
Updated : 27 Oct 2021, 01:19 PM

ব্যর্থতায় ভরা ম্যাচ

শুরুতে ব্যর্থতা ব্যাটিংয়ে, এরপর ষোলোকলা পূর্ণ বোলিংয়ে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ধুঁকতে ধুঁকতে বাংলাদেশ করতে পারে ১২৪ রান। সেটিও শেষদিকে স্পিনার নাসুম আহমেদ ব্যাট হাতে ৯ বলে ১৯ রান করতে পারায়।

উইকেট ব্যাটিংয়ে জন্য সহজ ছিল না। বোলিং-ফিল্ডিং ভালো করলে অন্তত লড়াই করা যেত। কিন্তু হতাশাময় দিনে বাংলাদেশের বোলিংয়েও দেখা গেল না ন্যূনতম ধার। শরীরী ভাষায় ফুটে উঠল না লড়াইয়ের মানসিকতাই। সব মিলিয়ে তাই জুটল বড় পরাজয়।

সুপার টুয়েলভে দুই ম্যাচের দুটিই হারল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর বাংলাদশকেও অনায়াসে হারাল ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (লিটন ৯, নাঈম ৫, সাকিব ৪, মুশফিক ২৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯, আফিফ ৫, সোহান ১৬, মেহেদি ১১, নাসুম ১৯*, মুস্তাফিজ ০; মইন ৩-০-১৮-২, ওকস ৪-০-১২-১, রশিদ ৪-০-৩৫-০, জর্ডান ২-০-১৫-০, মিলস ৪-০-২৭-৩, লিভিংস্টোন ৩-০-১৫-২)।

ইংল্যান্ড: ১৪.১ ওভারে ১২৬/২ ( রয় ৬১, বাটলার ১৮, মালান ২৮*, বেয়ারস্টো ৮*; সাকিব ৩-০-২৪-০, মুস্তাফিজ ৩-০-২৩-০, শরিফুল ৩.১-০-২৬-১, নাসুম ৩-০-২৬-১, মেহেদি ২-০-২১-০)।

৮ উইকেটের জয়

রান তাড়ায় কোনো হোঁচট নয়, কোনো উত্তেজনা নয়, বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ দেওয়া নয়, ইংল্যান্ড জিতে গেল অনায়াসেই। এক প্রান্তে জেসন রয়ের আগ্রাসন, আরেক প্রান্তে দাভিদ মালানের ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিংয়ে ইংলিশরা জিতে গেল ৮ উইকেটে। লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল তারা ৩৫ বল বাকি রেখেই।

৩৮ বলে ৬১ করে রয় আউট হওয়ার পর কাজ শেষ করেন মালান ও জনি বেয়ারস্টো। ২৫ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মালান।

শেষ সময়ে আউট রয়

দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিং করছিলেন জেসন রয়, সেই পথে হেঁটেই জয়ের কাছে গিয়ে হারালেন নিজের উইকেট। তাকে ফিরিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ উইকেটের স্বাদ পেলেন শরিফুল ইসলাম।

শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বল একটু জায়গা বানিয়ে র‌্যাম্প শট খেলেন রয়। বল উড়ে যায় থার্ডম্যানে। সেখানে দারুণ ক্যাচ নেন নাসুম আহমেদ।

৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬১ করে আউট রয়। ইংল্যান্ড ১২.৫ ওভারে ২ উইকেটে ১১২।

রয়ের ফিফটি

প্রথম বলে চার মেরে শুরু হয়েছিল যে ইনিংস, দারুণ খেলে সেই ইনিংস পৌঁছে গেল ফিফটিতে। নিজের ৫০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে জেসন রয় করলেন পঞ্চাশ।

নাসুমের বলে ৯১ মিটার লম্বা ছক্কায় তিনি ফিফটি স্পর্শ করলেন ৩৩ বলেই। ইংল্যান্ডের হয়ে যেটি তার সপ্তম। ইনিংসে চার ৫টি, ছক্কা ২টি।

১০ ওভারেই জয়ের কাছে

একটি উইকেটেই থমকে আছে বাংলাদেশের বোলিং সাফল্য। জেসন রয়ের দারুণ ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ভাগেই লক্ষ্যের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তারা। ১০ ওভারে রান তাদের ১ উইকেটে ৯০।

রয় ব্যাট করছেন ২৮ বলে ৪৪ রান নিয়ে, দাভিদ মালান অপরাজিত ১৪ বলে ১৭ করে।

পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ

১২৫ রান তাড়ায় যেমন শুরু হওয়া দরকার, ইংল্যান্ড তা করতে পারল অনেকটাই। ৬ ওভারেই তাদের রান হয়ে গেছে ৫০। উইকেট অবশ্য একটি হারাতে হয়েছে। তবে বড় রান তাড়ার চাপ নেই, তাই কাজটাও আপাতত সহজ।

রয় খেলছেন ১৬ বলে ২৩ রান করে, ২ বলে ১ মালান।

রিভিউ হারাল বাংলাদেশ

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বল জেসন রয়ের ব্যাটের কাছ ঘেঁষে যায় কিপারের গ্লাভসে। কট বিহাইন্ডের আবেদন করে বাংলাদেশ। আউট দেননি আম্পায়ার। অনেকটা ভেবে রিভিউ নেন মাহমুদউল্লাহ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগেনি ব্যাট। বাংলাদেশ হারাল একটি রিভিউ।

প্রথম উইকেট নাসুমের

অবশেষে ব্রেক থ্রু পেল বাংলাদেশ। নিজের প্রথম ওভারেই দলকে উইকেট এনে দিলেন নাসুম আহমেদ।

ইনিংসের সেটি পঞ্চম ওভার। নাসুমের মিডল স্টাম্পে পিচ করা লেংথ বল টার্ন না করে সোজা যায় একটু থমকে। বাটলার চেষ্টা করেন জায়গা বানিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে তুলে মারতে। জোর হয়নি যথেষ্ট। লং অফ থেকে কিছুটা দৌড়ে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

১৮ বলে ১৮ করে ফিরলেন বাটলার। ইংল্যান্ড ৪.৫ ওভারে ১ উইকেটে ৩৯।

নতুন ব্যাটসম্যান দাভিদ মালান।

ইংল্যান্ডের ভালো শুরু

১২৪ রানের পুঁজিতে ম্যাচ জয়ের জন্য প্রয়োজন শুরুতে দ্রুত উইকেট। বাংলাদেশ ব্যর্থ এখানে। ধরা দেয়নি উইকেট, খুব একটা আটকে রাখা যায়নি রানের গতিও। ৪ ওভারে ইংল্যান্ড তুলে ফেলেছে ৩৭ রান।

ইনিংসের প্রথম বলেই সাকিব আল হাসানকে চার মেরে শুরু করেন জেসন রয়। পরের ওভারে মুস্তাফিজকে মারেন তিনি দুটি বাউন্ডারি। সাকিবের পরের ওভারে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন জস বাটলার।

১১ বলে ১৭ রান নিয়ে ব্যাট করছেন রয়, ১৩ বলে ১৬ বাটলার।

প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানরা যা পারেননি, ৯ নম্বরে নেমে সেটিই করে দেখালেন নাসুম আহমেদ। ম্যাচের প্রথম ছক্কা এলো তার ব্যাট থেকে। পরে মারলেন আরেকটি। আদিল রশিদের ওই ওভারে আরেকটি চারও আদায় করলেন তিনি। ওভারটি থেকে ১৭ রান নিয়ে একটু ভদ্রস্থ হলো বাংলাদেশের রান। শেষ ওভারে যদিও রান এলো না বেশি।

শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৯ উইকেটে ১২৪ । নাসুম অপরাজিত ৯ বলে ১৯ রান করে।

উইকেট বেশ মন্থর বলেই মনে হয়েছে। বল উঠানামা করেছে, গতিও দুই রকমের। ব্যাটিং করা খুব সহজ নয়। তবে সবকিছুর পরও, ইংল্যান্ডের সামনে এই রান যথেষ্ট হওয়ার কথা নয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: *২০ ওভারে ১২৪/৯ (লিটন ৯, নাঈম ৫, সাকিব ৪, মুশফিক ২৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯, আফিফ ৫, সোহান ১৬, মেহেদি ১১, নাসুম ১৯, মুস্তাফিজ ০; মইন ৩-০-১৮-২, ওকস ৪-০-১২-১, রশিদ ৪-০-৩৫-০, জর্ডান ২-০-১৫-০, মিলস ৪-০-২৭-৩, লিভিংস্টোন ৩-০-১৫-২)।

শেষ বলেও উইকেট

শেষটাও দারুণ করল ইংল্যান্ড। ইনিংসের শেষ বলে আরেকটি স্লোয়ারে টাইমাল মিলস বোল্ড করে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমানকে।

শেষ ওভারে সোহানের বিদায়

বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে থেকেও বড় শট খেলতে না পেরে নুরুল হাসান সোহান শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ইনিংস শেষ হওয়ার আগের বলে।

টাইমাল মিলসের জোরের ওপর করা শর্ট বল সজোরে পুল করার চেষ্টা করেন সোহান। ব্যাটে-বলে হয়নি। ইংলিশরা কট বিহাইন্ডের আবেদন করলেও আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল লাগছে সোহানের গ্লাভস।

১৮ বল খেলে সোহান আউট ১৬ রানে। নেই কোনো বাউন্ডারি।

পারলেন না মেহেদিও

দুটি বাউন্ডারিতে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ঝড় তুলতে পারলেন না শেখ মেহেদি হাসান। টাইমাল মিলসের ব্যাক অফ দা হ্যন্ডি স্লোয়ারে স্কুপ করতে গিয়ে তিনি সহজ ক্যাচ দিলেন শর্ট ফাইন লেগে।

১০ বলে ১১ রান করে থামলেন তিনি। বাংলাদেশ ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ৯৮।

লিভিংস্টোনের আরেকটি

অনিয়মিত স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোনের স্পিনেই খাবি খাওয়া অবস্থা বাংলাদেশের। এবার তাকে উইকেট দিয়ে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক পারলেন না দলকে উদ্ধার করতে।

লিভিংস্টোনের নিয়ন্ত্রিত স্পিনে রান বের করার পথই পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ তাই বেছে নেন বড় শটের পথ। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলেন। কিন্তু যেতে পারেননি বলের পিচ পর্যন্ত। তেড়েফুঁড়ে খেললেও জোর পাননি মারে। পয়েন্টে ক্যাচ নেন ক্রিস ওকস।

মাহমুদউল্লাহ থামলেন ২৪ বলে ১৯ রানের হতাশাজনক ইনিংস খেলে। বাংলাদেশ ১৪.৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৩।

নতুন ব্যাটসম্যান শেখ মেহেদি হাসান।

রান আউট আফিফ

কথায় আছে, মিসফিল্ডিংয়ে কখনও রান নিতে হয় না। সবসময় সত্যি না হলেও তা এবার সত্যি হলো আফিফ হোসেনের জন্য। তার রান আউটে আরও বিপদে বাংলাদেশ।

লিভিংস্টোনের লেগ স্টাম্পে থাকা বল লেগ সাইডে আলতো ব্যাটে খেলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম রানটি অনায়াসেই হয়ে যায়। মিসফিল্ডিং থেকেই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে বিপত্তি। টাইমাল মিলস প্রথম বলে ধরতে না পারলেও দ্রুত আবার কুড়িয়ে গুলির বেগে থ্রো করেন। দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানই তাকিয়ে ফিল্ডারের দিকে। মাহমুদউল্লাহ নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে অনেকটা ছুটেও ‘নো’ কল করলেন। আফিফ সেটা পরে দেখে চেষ্টা করলেন ক্রিজে ফিরতে, কিন্তু পারলেন না।

৬ বলে ৫ রান করে আউট আফিফ। বাংলাদেশ ১২.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৩।

নতুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান।

রিভার্স সুইপে উইকেট উপহার

মন্থর উইকেটে জুটি ভাঙতে অনিয়মিত স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোনকে আক্রমণে আনেন ওয়েন মর্গ্যান। সাফল্য মেলে প্রথম ওভারেই। লেগস্পিনার লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় আউট মুশফিকুর রহিম।

লিভিংস্টোন বলটি করেন স্টাম্প সোজা। বল পিচ করে টার্ন না করে এগোয় সোজাই। মুশফিক রিভার্স সুইপ ঠিক করে রেখেছিলেন আগেই। সেই চেষ্টায় ব্যর্থ ব্যাটে-বলে করতে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল ইংল্যান্ড। বল লাগছিল মিড স্টাম্পে।

৩০ বলে ২৯ করে আউট মুশফিক। থামল ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি।

নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন।

বেঁচে গেলেন মুশফিক

চোখধাঁধানো আরেকটি ক্যাচ প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। তবে অল্পের পর জন্য রক্ষা পেলেন মুশফিকুর রহমান।

আদিল রশিদের বল রিভার্স সুইপ করেন মুশফিক। মারে জোর ছিল বেশ। পয়েন্টে (আসলে তখন তা হয়ে গেছে স্কয়ার লেগের মতো) দারুণ ডাইভে তা হাতে জমানোর চেষ্টা করেন। দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে বলে হাত ছোঁয়াতে পারলেও মুঠোবন্দী করতে পারেননি টাইমাল মিলস। মুশফিকের রান তখন ৯।

পাওয়ার প্লেতে বিধ্বস্ত টপ অর্ডার

প্রথম ওভারে লিটনের দুটি বাউন্ডারিতে ১০ রান। এরপর দুই ওপেনারের বিদায় এবং রানের গতি থমকে যাওয়া। আরেকটি বাউন্ডারির দেখা মেলে পঞ্চম ওভারে, মইনের বলেই মাথার ওপর দিয়ে চার মারেন মুশফিক। ব্যস, পাওয়ার প্লেতে বাউন্ডারি ওই তিনটি, উইকেটও পতন হয় তিনটি। সব মিলিয়ে হতাশার পাওয়ার প্লে বাংলাদেশের জন্য। ৬ ওভারের রান ৩ উইকেটে ২৭।

এবার গেলেন সাকিব

ক্রিস ওকসকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে আনলেন ওয়েন মর্গ্যান, সেই আশা পূরণ হলো দারুণভাবে। সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দিলেন ওকস।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভার এটি। ওকসের লেগ স্টাম্পে থাকা লেংথ বল একটু দেরিতে পুলের মতো খেলে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে পাঠাতে  চেয়েছিলেন সাকিব। ফাইন লেগ ফিল্ডার ছিল বৃত্তের ভেতরে। কিন্তু সাকিব যেতে পারেননি বলের নিচে। তাই বল ওঠেনি খুব ওপরে। তার পরও ফিল্ডার আদিল রশিদের একটু ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল বল। কিন্তু দুহাত বাড়িয়ে ছোবল দিয়ে তা দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করেন রশিদ।

৭ বলে ৪ রান করেই শেষ সাকিব। বাংলাদেশের রান ৫.২ ওভারে ৩ উইকেটে ২৬।

নতুন ব্যাটসম্যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

লিটনের পথ ধরে নাঈম

উদ্বোধনী জুটির সঙ্গীকে হারানোর পর একটি বলও টিকলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিনিও উইকেট উপহার দিয়ে এলেন মইন আলিকে।

লিটনের বিদায়ের পরের বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মইনকে উড়িয়ে মারেন নাঈম। কিন্তু সেটা খেয়াল করেই লেংথ একটু টেনে দেন। তাই শটে টাইমিং পাননি নাঈম। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন ক্রিস ওকস।

নাঈম আউট ৭ বলে ৫ রানে। বাংলাদেশ ২.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৪।

উইকেটে এখন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।

সবার আগে বিদায় লিটনের

একাদশে টিকে গেলেও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকলেন না লিটন কুমার দাস। আউট হয়ে গেলেন তৃতীয় ওভারেই।

শুরুটা লিটনের ছিল দারুণ আশা জাগানিয়া। ম্যাচের প্রথম ওভারে মইন আলিকে টানা দুটি চার মারেন ডাউন দা উইকেটে খেলে। শরীরী ভাষা তার মনে হচ্ছিল দারুণ ইতিবাচক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সেটির প্রতিফলন ফেলতে পারলেন না। তৃতীয় ওভারে মইনকে একটু শাফল করে সুইপ খেলার চেষ্টা করলেন। বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লিগে সহজ ক্যাচ গেল স্কয়ার লেগে। বল হাতে জমালেন লিয়াম লিভিংস্টোন।

লিটনের দুঃসময় দীর্ঘায়িত হলো আরও। ৯ বলে ৮ রানে আউট হলেন তিনি। ২.২ ওভারে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ১৪।

একই দল নিয়ে ইংল্যান্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো ম্যাচের একাদশ ধরে রেখেছে ইংল্যান্ড। তাদের একাদশ নিয়ে সত্যি বলতে ভাবনার জায়গা ছিল একটিই, দাভিদ মালান নাকি মার্ক উড? শেষ পর্যন্ত বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোর কৌশলই আরেকবার বেছে নিয়েছে তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট।

ইংল্যান্ড একাদশ: জেসন রয়, জস বাটলার, জনি বেয়ারস্টো, দাভিদ মালান, ওয়েন মর্গ্যান (অধিনায়ক), মইন আলি, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ, টাইমাল মিলস।

একাদশে শরিফুল

চোট নিয়ে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ছিটকে পড়ায় বাংলাদেশ একাদশে একটি পরিবর্তন অবধারিতই ছিল। শেষ পর্যন্ত বদল সেই একটিই। সাইফের জায়গায় এসেছেন শরিফুল ইসলাম। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা বাঁহাতি পেসারের এবার অভিষেক হচ্ছে বড়দের বিশ্বকাপে।

ব্যাটিং ফর্ম বাজে এবং গত ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে দুটি ক্যাচ ছাড়ার পরও একাদশে টিকে গেছেন লিটন দাস। সৌম্য সরকারকে তাই থাকতে হচ্ছে বাইরেই।

বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ।

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

আবারও টস ভাগ্যকে পাশে পেলেন মাহমুদউল্লাহ। বেছে নিলেন ব্যাটিং। এই নিয়ে বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই টস জিতলে বাংলাদেশ অধিনায়ক। টস জেতেননি কেবল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

টসের পর মাহমুদউল্লাহর বললেন, উইকেট তার কাছে ব্যাটিং সহায়ক বলেই মনে হচ্ছে। স্কোরবোর্ডে বড় রান জমা করতে চান বলেই আগে ব্যাটিং নিয়েছেন তিনি।

ইংলিশ অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান বললেন, খুশি মনেই রান তাড়ায় রাজি তারা। তিনিসহ দলের বেশ কজন এই মাঠে আইপিএল খেলেছেন, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান তারা।

সাইফের চোটের ধাক্কা

এমনিতেই চাপে থাকা বাংলাদেশ দল ম্যাচের আগের দিন বড় ধাক্কা হজম করেছে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে হারিয়ে। চোট নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন এই অলরাউন্ডার। রিজার্ভ থেকে মূল দলে যুক্ত করা হয়েছে অভিজ্ঞ পেসার রুবেল হোসেনকে।

দুই প্রান্তে দুই দল

বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর ইংল্যান্ড। এই সংস্করণে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল তারা। প্রথম ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে দারুণ জয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার ছাপ তারা রেখেছে। বড় দুই তারকা জফ্রা আর্চার ও বেন স্টোকস না থাকার পরও দারুণ ব্যালান্সড দল তারা।

বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। প্রথম রাউন্ডেও তাদের শুরুটা ছিল প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে। পারফরম্যান্সের অধারাবাহিকতার সঙ্গে আছে মাঠের বাইরের নানা বিতর্কম কথার লড়াই ও সমালোচনার ঝড়। সব মিলিয়ে প্রবল চাপে থেকে মাঠে নামছেন মাহমুদউল্লাহরা।

প্রথমবার মুখোমুখি ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়েই প্রথমবার পরস্পরের বিপক্ষে এই সংস্করণে খেলতে নামছে দুই দল।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের মাঠে একটি সিরিজ হওয়ার কথা ছিল বটে। তবে তা পিছিয়ে চলে গেছে আগামী বছরে।