বিশ্বকাপে ফেভারিট না থাকায় রোমাঞ্চিত মুরালিধরন

কাছাকাছি শক্তির দল আছে বেশ কিছু। আর স্রেফ ২০ ওভারের ক্রিকেট বলে শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা দলও চমকে দিতে পারে যে কাউকে। তাই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই দৃশ্যমান কোনো ফেভারিট। আর এ কারণেই এবারের আসরকে বেশি রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে মুত্তিয়া মুরালিধরনের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2021, 01:28 PM
Updated : 15 Oct 2021, 01:28 PM

টেস্ট ও ওয়ানডের মতো পরে পুষিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় টি-টোয়েন্টিতে মেলে না। একবার মোমেন্টাম পেয়ে গেলে হতে পারে যেকোনো কিছুই। তাই রোববার শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্ট নিয়ে মুরালিধরনের আগ্রহ এবার একটু বেশি। শ্রীলঙ্কার এই কিংবদন্তি অফ স্পিনার শুক্রবার আইসিসির ওয়েবসাইটে নিজের কলামে লিখেছেন, তিনি এগিয়ে রাখতে পারছেন না কাউকেই।

“২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ব্যাপার হলো, এবার কোনো পরিষ্কার ফেভারিট নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের এই প্রতিযোগিতায় মনে হচ্ছে, শক্তির বিচারে কোনো দলই খুব এগিয়ে নেই। সম্ভাবনাময় অনেকগুলো দলের যে কোনো একটি শিরোপা জিততে পারে।”

খেলা ছাড়ার পর থেকে ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন মুরালিধরন। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলিং কোচ তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়েই কাটে অনেকটা সময়। সেই অভিজ্ঞতায় পাওয়ার প্লে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে তার কাছে। ডেথ ওভারের জন্য বেশি কাজ ফেলে না রাখারই পরামর্শ দিলেন মুরালিধরন।

“গুরুত্বপূর্ণ হবে প্রথম ছয় ওভার। ব্যাটিং বা বোলিং যাই হোক, এখানটায় দলগুলোর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আমার ধারণা, ম্যাচের ভাগ্য ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রথম ছয় ওভারের ওপর নির্ভর করে। সেখানে যে যেমন করে, ম্যাচের ফল হয় এর ভিত্তিতে।”

“কেউ কেউ শেষের ওভারগুলোর দিকেও নজর দেয়। অবশ্য সেই ওভারগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি শুরুটা ভালো না হয় তাহলে সেটা পুষিয়ে নিতে খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। এটা ওয়ানডে বা টেস্টের মতো না, এখানে ভালো শুরুর ওপর সব কিছু নির্ভর করে। এই বিশ্বকাপকে আমার উন্মুক্ত মনে হওয়ার এটাও একটা কারণ।”

নিজে ইতিহাসের সেরা স্পিনারদের একজন। নিশ্চিতভাবেই সবসময়ের সেরা অফ স্পিনার। তাই স্পিনারদের দিকে একটা নজর তার থাকেই। এক সময়ের শঙ্কা পেছনে ফেলে বিশ্ব জুড়ে যেভাবে টি-টোয়েন্টিতে দাপট দেখাচ্ছে স্পিনাররা, তাতে ভীষণ খুশি তিনি।

“শুরুর দিকে অনেকেই ভেবেছিল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শিকার হবে স্পিনাররা। ব্যাটাররা ওদের ওপর চড়াও হবে। কিন্তু এটা এখন পরিষ্কার, বলে গতি যত কম হবে, সেটাতে চড়াও হওয়া তত কঠিন হবে। স্পিনাররা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোলারে পরিণত হয়েছে, এমনকি পেসারদেরও এখন স্লোয়ার বা অন্য সব ডেলিভারি দিতে হয়। কারণ, সবাই বলের ব্যাটে যাওয়া যতটা সম্ভব ঠেকাতে চায়। ব্যাটারকে বানিয়ে খেলতে এবং ঝুঁকি নিতে বাধ্য করার জন্যই এই কৌশল।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইপিএলের শেষ অংশ হচ্ছে সংযুক্ত আমিরাতে। এই টুর্নামেন্টে খেলা উইকেটেই হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মুরালিধরনের ধারণা, এখানে স্পিনারদের থাকতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

“আইপিএলের জন্য আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলাম। উইকেটগুলো দেখেছি। এটা পরিষ্কার, বিশ্বকাপে স্পিনারদের অনেক বড় ভূমিকা থাকবে। তবে এটা অনেকটা নির্ভর করবে কিউরেটররা কীভাবে উইকেট প্রস্তুত করেন এর উপর। তবে দেখে মনে হচ্ছে, স্পিনাররা হবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটসম্যানদের জন্য টাইমিং করা কঠিন হবে। হয়তো কিছু লো স্কোরিং ম্যাচ হবে।”

তাই বলে তো বল ফেললেই উইকেট মিলবে না। বল করতে হবে মাথা খাটিয়ে। চোখ রাখতে হবে ব্যাটসম্যানের ওপর। ব্যবহার করতে হবে নিজের বৈচিত্র্য, নইলে বিপদ আছে মনে করিয়ে দিয়েছেন মুরালিধরন।

“কখনও কখনও টেস্টের লেংথ টি-টোয়েন্টিতে স্পিনারদের জন্য সঠিক লেংথ নয়। গুড লেংথের একটি বলে ছক্কা হতে পারে। তাই দেখতে হবে ব্যাটসম্যান কি করছে। ফুলার লেংথে কিংবা ব্যাটসম্যান থেকে দূরে কখনও কখনও খুব শর্ট বলও করতে হবে। কখনও শরীর তাক করে বল করতে হবে। কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে এইসব ব্যাপার এদিন-সেদিক করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হবে আর সেটা অর্জন করতে পারলে টি-টোয়েন্টিতে বড় সাফল্য মিলবে।”  

এখানে জেতার জন্য কৌশল কি হওয়ার সেটাও নিজের কলামে জানালেন মুরালিধরন।

“টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় এবং কোচ বা মেন্টর হিসেবে আমার যে অভিজ্ঞতা তাতে, এই সংস্করণে (বোলিংয়ে) রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে এগোনো প্রয়োজন। ওয়ানডে বা টেস্টে লক্ষ্য থাকে উইকেট নেওয়া। আমার মতে, টি-টোয়েন্টিতে রক্ষণই আক্রমণ। আমার মনে হয়, লক্ষ্যটা হওয়া উচিত ওভার প্রতি রান ৬ কিংবা সাড়ে ছয়ের মধ্যে রাখা তাহলে এক-দুইটা উইকেটও মিলতে পারে।”