প্রথমে অবসর, এরপর অবসর ভেঙে ফেরার সিদ্ধান্ত, অতঃপর না খেলেই আবার অবসর! এক বছরের কিছু বেশি সময়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা নিয়ে বার বার সিদ্ধান্ত বদলের পর মইন আলি এবার জানিয়ে দিলেন, সাদা পোশাকে আর দেখা যাবে না তাকে। ইংল্যান্ডের অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার বলেন, তিনি আর এই সংস্করণে খেলার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ পাচ্ছেন না।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মইন। তখন বলেছিলেন, ক্লান্তি-শ্রান্তি অনুভব করায় মূলত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই সংস্করণে খেলা খুব একটা উপভোগও করছিলেন না বলে উল্লেখ করেন ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ মইন গত জুনে টেস্টে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি বলেন, এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি আবার ইংলিশদের হয়ে সাদা পোশাকে ফেরার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
মইনের টেস্টে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রাখা নিউ জিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের কোচ হন গত গ্রীষ্মে। গত অ্যাশেজসহ টেস্টে টানা ব্যর্থতায় ইংল্যান্ড ক্রিকেটে আনা হয় আমুল পরিবর্তন। ম্যাককালামকে কোচ করার পাশাপাশি জো রুটের জায়গায় নতুন অধিনায়ক করা হয় বেন স্টোকসকে।
এর আগে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান রব কি। টেস্টে ম্যাককালাম কোচ ও স্টোকসকে অধিনায়ক করে তিনি বলেছিলেন, এটি হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের ‘নতুন যুগের সূচনা।’
এই জুটির হাত ধরে সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক একের পর এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও ম্যাককালামের কোচিংয়ে খেলার ইচ্ছা থেকেই টেস্টের দরজা খুলে দিয়েছিলেন মইন। ইংল্যান্ডের পরবর্তী টেস্ট সিরিজ আগামী ডিসেম্বরে, পাকিস্তানের বিপক্ষে। ধারণা করা হচ্ছিল, এই সিরিজ দিয়েই ফিরবেন তিনি।
দেশটিতে সদ্য সমাপ্ত ৭ ম্যাচের ২০ ওভারের সিরিজে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন মইন।ইংলিশরা সিরিজ জেতে ৪-৩ ব্যবধানে।
ডেইলি মেইলে গত সোমবার নিজের কলামে মইন লিখেছেন, পাকিস্তানে ফিরতি সফরে তাকে পাওয়া যাবে না। শারীরিক ধকল ও টেস্টে শতভাগ উজাড় করে দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় থেকে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“এটা এমন একটি (পাকিস্তান) সফর, যেখানে দুঃখজনকভাবে আমি যাব না। এটি (টেস্ট ক্রিকেট) আর এমন কিছু নয়, যেখানে আমি খেলার আগ্রহ বোধ করছি। এই সফর নিয়ে আমি বাজের (ব্রেন্ডন ম্যাককালাম) সঙ্গে সততা নিয়ে কথা বলেছি এবং আমি আসলেই নিজেকে আরও এক মাস হোটেলে কোয়ারেন্টিন আটকে থাকতে এবং আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী টেস্ট ক্রিকেট খেলতে দেখতে পাচ্ছি না।”
“বাজ আমাকে ফোন করেছিল এবং আমরা দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছি এবং আমি শুধু বলেছি, 'নাহ, দুঃখিত, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি' এবং সে এটা বুঝতে পেরেছে। সে অনুভূতিটি জানে। হ্যাঁ, গ্রীষ্মে বলেছিলাম যে আমি অবসরপ্রাপ্ত নই এবং যখন ছেলেদের (খেলা) দেখছিলাম, তখন অনুভব করেছি যে আমি এটিকে ভালোভাবেই মিস করেছি এবং এইভাবে আমি সবসময় খেলাটা খেলতে চেয়েছি।”
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেটে লিগগুলোতে পরিচিত এক নাম মইন। আইপিএলে নিয়মিত মুখ তিনি। পিএসএল, বিপিএল, আবুধাবি টি-১০ সহ খেলেছেন অন্যান্য লিগেও। খেলতে যাচ্ছেন আগামী বছরের শুরুতে হতে যাওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন টি- টোয়েন্টি লিগের প্রথম আসরেও। ফলে তিন সংস্করণেই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা কঠিন হতো তার জন্য।
টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য রোমাঞ্চিত হলেও তাই বাস্তবতা উপলদ্ধি করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মইন। গুরুত্ব পেয়েছে পরিবারকে সময় দেওয়ার বিষয়টিও।
“আমি এটা নিয়ে যত বেশি ভেবেছি এবং কাছের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, আমি তত গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি যে কেন আমার সময় ফুরিয়ে গেছে। টেস্ট ক্রিকেট কঠিন কাজ। আমার বয়স এখন ৩৫ এবং কিছু বাদ দিতে হবে।”
“আমি আমার ক্রিকেট উপভোগ করতে চাই এবং সিদ্ধান্ত বদল করে ফেরার পর নিজের শতভাগ দিতে সংগ্রাম করলে সেটা ভালো হতো না। সীমিত ওভারের ব্যস্ত সূচির ব্যাপার আছে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর সঙ্গেও আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর যে কোনো সুযোগ আমার জন্য মূল্যবান।”
ইংল্যান্ডের জার্সিতে টেস্টে ৬৪ ম্যাচে ২ হাজার ৯১৪ রানের পাশাপাশি হাত ঘুরিয়ে ১৯৫ উইকেট নিয়েছেন মইন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের তৃতীয় সফলতম স্পিনার তিনি। জানালেন, জাতীয় দলকে টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পেরে গর্বিত তিনি।
“যাই হোক, ছেলেদের খুব ভালো করতে দেখে দারুণ লাগছে এবং আমি নিশ্চিত যে টেস্ট সফরটি এই (পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি) সিরিজের মতোই দর্শনীয় হবে। ছেলেরা যখন টেস্ট খেলতে যাবে তখন তাদের জন্য সত্যিই একটি রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ হবে।”
“কিন্তু আমার জন্য, আমার ক্যারিয়ারের জন্য এই দরজা বন্ধ করার সময় হয়েছে। ইংল্যান্ডের হয়ে ৬৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলা একটা বিশেষ প্রাপ্তি এবং এতে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”