ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবালের মতে, ফাইনালের শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের প্রথম ছক্কা ছিল ‘গেম চেঞ্জার’, দ্বিতীয় ছক্কাও ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ।
Published : 08 Feb 2025, 09:29 AM
শেষ তিন-চার ওভারের দুর্দান্ত বোলিং, রান তাড়ায় নিজের বিধ্বংসী শুরু, তাওহিদ হৃদয়ের ইনিংসের বিশেষত্ব, এরকম অনেক কিছুই বলছিলেন তামিম ইকবাল। যে ফুলগুলো একসঙ্গে গাঁথা হয়েই জয়ের মালা হয়েছে। তবে এরপরই ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক বললেন, “অনেকজনের ব্যাপারে অনেক কিছু বলতে পারি, তবে রিশাদের দুটি ছক্কা ছিল টার্নিং পয়েন্ট…।”
এটুকু বলেই হাসলেন তামিম। তখন তার হাসারই কথা। কিন্তু ঘটনা যখনকার, তখন তার ভেতরে ছিল দুর্ভাবনা। রিশাদের ওই দুটি ছক্কার আগে ভড়কে গিয়েছিলেন বরিশাল অধিনায়ক।
বিপিএলের ফাইনালে শুক্রবার চিটাগং কিংসের ১৯৪ রান তাড়ায় নানা মোড় পেরিয়ে একসময় সহজ জয়ের পথে ছিল বরিশাল। তামিমের আগ্রাসী ফিফটি, কাইল মেয়ার্সের ঝড়ো ইনিংস আর কিছু কার্যকর অবদানে জয়ের কাছাকাছি এগোয় তারা। শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ২৫ রান। উইকেট বাকি তখনও ছয়টি। খুবই সহজ সমীকরণ।
সেটিই জটিল হয়ে ওঠে পরের ওভারে। শরিফুল ইসলামের করা ওই ওভারের তৃতীয় বলে মেয়ার্সকে (২৮ বলে ৪৬) হারায় বরিশাল। এক বল পরই বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। মন্থর শুরুর পর শেষটায় পুষিয়ে দিতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান (১১ বলে ৭)।
ওই ওভার থেকে আসে স্রেফ পাঁচ রান। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২০ রানের।
১৯তম ওভারে প্রথম তিন বলে বিনুরা ফার্নান্দো রান দেন কেবল তিন। ৯ বলে তখন লাগে ১৭ রান। চতুর্থ বলে ক্রিজের অনেক গভীরে গিয়ে দারুণ শটে ছক্কা মেরে দেন রিশাদ। পরের বলে মিসফিল্ডিংয়ের সুযোগে আসে তিন রান।
এরপর আরেক পশলা নাটক। ওই ওভারের শেষ বলে স্লোয়ার ডেলিভারিতে মিড অফে ক্যাচ নেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নাবি।
ব্যাটিং জানা কেউ তখন আর অবশিষ্ট নেই। ক্রিজে রিশাদের সঙ্গী তানভির।
যা করার, করতে হতো রিশাদকেই। তিনি করলেন। শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন আট রান, হুসাইন তালাতের প্রথম ডেলিভারিতেই আরেকটি ছক্কা মেরে দেন রিশাদ।
ম্যাচের পর তামিম বললেন, রিশাদের ওই দুটি ছক্কার আগে তিনিও ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অনেকটা।
“তখন একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে, রিয়াদ ভাই যখন আউট হন এবং নাবি যখন আউট হন শেষ বলে। কারণ, এক ওভারে আট রান লাগত। রিশাদ ছিল, কিন্তু বাকিরা সব বোলার। ৯ নম্বর-১০ নম্বরে কাকে পাঠাব, এটাই বুঝতে পারছিলাম না। ওরা বলাবলি করছিল যে, ‘একে পাঠা, ওকে পাঠা।’ ওদের অবস্থা এরকমই ছিল।”
“তবে আমার মনে হয়, (রিশাদের) প্রথম ছক্কাই ছিল গেম চেঞ্জার। কারণ, যদি ১৫ রান লাগত (শেষ ওভারে), পুরো ভিন্ন ব্যাপার হতো। এরপর শেষ ওভারের প্রথম বলের ছক্কাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রিশাদের ওপর আমাদের ভরসা রাখার মূল কারণগুলির একটি এটি। হ্যাঁ, তার বোলিং তো অবশ্যই আছে, কিন্তু ব্যাটিংটাও দারুণ গুরুত্বপূর্ণ।”
ব্যাটিংয়ে যেমন শেষের নায়ক রিশাদ, বোলিংয়ে তেমনি শেষের নায়ক মোহাম্মদ আলি। আগের ম্যাচে এক ওভারে বিপিএল রেকর্ড চারটিসহ পাঁচ উইকেট শিকারি আলি শেষ দু ওভারে যে বোলিং করেন, সেটিকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়।
শেষ চার ওভারে একটি ছক্কা ও একটি চার ছাড়া আর বাউন্ডারি মারতে পারেনি চিটাগং। এই চার ওভারের দুটি করেন আলি। তার এই দুই ওভারে রান আসে মাত্র ১০, বাউন্ডারি হয়নি একটিও।
তামিম বললেন, ওই চার ওভারের বোলিং শুধু লক্ষটাই ছোট করেনি তাদের জন্য, বরং দলকে আত্মবিশ্বাসীও করে তোলে।
“ওরা যেভাবে শুরু করেছিল এবং যেভাবে যাচ্ছিল, একটা সময় মনে হচ্ছিল যে, ২২০-২২৫ রান তাড়া করতে হবে আমাদের। কিন্তু আমাদের যে বোলাররা শেষের তিন-চার ওভার বল করেছে, এটা অসাধারণ ছিল। আমরা খুব বেশি বাউন্ডারি দেইনি, খুব বেশি রান দেইনি। যেভাবে ওদের শুরুটা ছিল, আমার হিসেবে ওরা ২০টা রান কম করেছে।”
“আমরা যখন ড্রেসিং রুমে যাই, এটিই আলোচনা করছিলাম যে, ওদের ২০ রানের ঘাটতি আছে। যে ধরনের উইকেট, আমরা যদি ভালো শুরু করতে পারি, তাহলে সম্ভব (রান তাড়া করা)।”