পঞ্চাশের আগে নেই ৩ উইকেট। বিপদে পড়া দলকে দায়িত্বশীল ইনিংসে কক্ষপথে ফেরালেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। কার্যকর ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিম। লড়ার মতো সংগ্রহ পেল ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল। পরে আগুনে বোলিং উপহার দিলেন ইবাদত হোসেন, রেজাউর রহমান। তাদের তোপে বিসিবি মধ্যাঞ্চলকে অনায়াসে হারাল তারকা সমৃদ্ধ দলটি।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রোববার বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে সংস্করণের খেলায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মধ্যাঞ্চলকে ১১৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে পূর্বাঞ্চল।
জাতীয় দলের এক ঝাঁক তারকা নিয়ে গড়া পূর্বাঞ্চল থামে ২৫৪ রানে। পরে বোলারদের তিন বোলারের নৈপুণ্যে মধ্যাঞ্চলকে স্রেফ ১৪০ রানে গুটিয়ে দেয় তারা।
৪ চার ও ৫ ছয়ে ৮০ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইয়াসির। ৪ চারে ৪৪ রানের ইনিংসে খেলেন মুশফিক। এদিন তেমন কিছু করতে পারেননি তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, আফিফ হোসেনরা।
প্রতিপক্ষকে দেড়শর আগে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কারিগরদের একজন ইবাদত ৪৬ রানে নেন ৪ উইকেট। রেজাউর ও শেখ মেহেদি হাসানের শিকার ৩টি করে উইকেট।
টস জিতে পূর্বাঞ্চলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। প্রথম ওভারে এলোমেলো বোলিংয়ে ১৪ রান খরচ করেন হাসান মাহমুদ।
দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই মাহমুদুল হাসান জয়ের স্টাম্প ভেঙে দেন রবিউল। তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে সুমনের বলে ফেরেন ইমরুল।
থিতু হওয়ার চেষ্টায় থাকা তামিমকে দারুণভাবে সেট-আপ করে সাজঘরে ফেরান রবিউল। দশম ওভারে টানা অফ স্টাম্পের আশেপাশে বোলিং করে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কে বেঁধে রাখেন ২৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার। শেষ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তামিম ২ চারে ১৮ রান করে।
লাইফ সাপোর্টে থাকা শ্বশুরকে দেখতে একটু পরই চলে যান তামিম। ফিল্ডিং করেননি তিনি।
৪৬ রানে ৩ উইকেট হারায় পূর্বাঞ্চল। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মুশফিককেও ভোগান রবিউল ও সুমন। রানের খাতা খুলতে ২২ বল লেগে যায় তার। রবিউলের বলে এলবিডব্লিউয়ের জোরাল আবেদন থেকে বেঁচে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
চতুর্থ উইকেটে আফিফকে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। ৫ চারে ২৮ বলে ২৭ রান করে আউট হন আফিফ। ইয়াসিরকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিক। ২৯তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
শেখ মেহেদি, রাজা, তানভির ইসলামরাও দ্রুত ফিরলে ১৬৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে পূর্বাঞ্চল। এরপর ইবাদতকে নিয়ে লড়াই করেন ইয়াসির। দুইজনে নবম উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন।
মধ্যাঞ্চলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। রবিউল ও সুমনের শিকার ২টি করে উইকেট।
রান তাড়ায় মধ্যাঞ্চলের শুরুটা খারাপ ছিল না। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৭ রান যোগ করেন সৌম্য সরকার ও আব্দুল মজিদ। সৌম্যকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদি। রেজাউরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মজিদ।
দলকে হতাশ করে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন মুমিনুল হক। দ্রুত বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক। একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
কিন্তু তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি ইবাদত। ৩ চারে ৫৩ বলে ৩৮ রান করা শান্তর বিদায়ে পূর্বাঞ্চলের জয় এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। ২৬ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে স্রেফ ৩৩ ওভারেই গুটিয়ে যায় মধ্যাঞ্চল।
শ্বশুর লাইফ সাপোর্টে দেখে তামিম ফিল্ডিং করেনি। ব্যাটিং করে ওদের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই চলে গেছিল
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল: ৪৯.১ ওভারে ২৫৪ (তামিম ১৮, মাহমুদুল ১, ইমরুল ৪, মুশফিক ৪৪, আফিফ ২৭, ইয়াসির ৮০, শেখ মেহেদি ২০, রাজা ০, তানভির ০, ইবাদত ১১, আশিকুর ১৬*; হাসান ৯-০-৭১-২, রবিউল ১০-১-২৭-২, সুমন ৯-০-৫৪-২, সৌম্য ৮-০-৪২-১, নাহিদুল ৪-০-২০-১, তাইজুল ৯.১-২-৩৯-৪)
বিসিবি মধ্যাঞ্চল: ৩৩ ওভারে ১৪০ (মজিদ ২৭, সৌম্য ১৯, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ০, মিঠুন ২, মোসাদ্দেক ১১, নাহিদুল ১৬, তাইজুল ১, রবিউল ৬, সুমন ০, হাসান ১*; আশিকুর ৬-০-২১-০, ইবাদত ৯-০-৪৬-৪, রাজা ৬-০-২৮-৩, তানভির ৫-১-১৯-০)
ফল: ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ১১৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইয়াসির আলি চৌধুরি