আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে গতিময় শুরুর পর মন্থর ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, তবে আড়াইশ ছাড়ানো পুঁজি নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরানোর আশা জাগিয়েছে দল।
Published : 09 Nov 2024, 08:23 PM
ফিফটি করার পর সেভাবে উদযাপনই করলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। ধারাভাষ্যকার বললেন, “খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হচ্ছে তাকে দেখে, বড় কিছু করতে চান তিনি…।” তার ব্যাটিংয়েও ছিল সেই ছাপ। বেশ গতিময়তায় শুরুর পর নিজেকে অনেকটাই দমিয়ে রেখে লম্বা ইনিংস খেলায় মনোযোগ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত যদিও ইনিংসটিকে পূর্ণতা দিতে পারেননি তিনি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শারজাহতে শনিবার ১১৯ বলে ৭৬ রান করেন শান্ত।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর তিনি বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, আমার উইকেটই আজকের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।” সেই দায় ঘোচাতে এবার দায়িত্ব নিয়ে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু ছক্কার চেষ্টায় যখন আউট হয়ে গেলেন, তখনও প্রায় ১০ ওভার বাকি ইনিংসের।
দলের সর্বোচ্চ রান অবশ্য অধিনায়কের ব্যাট থেকেই এসেছে। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৭ উইকেটে ২৫২। তবে সেখানে বড় অবদান আছে সাতে নামা অভিষিক্ত জাকের আলি ও আটে নামা নাসুম আহমেদের দুটি ক্যামিও ইনিংসের।
শান্তর ইনিংসটাকে পরিষ্কার দুটি ভাগে আলাদা করা যায়। প্রথম ৩০ রান করেন তিনি ৩৫ বলে। বাউন্ডারি তখন তার তিনটি, ছক্কা একটি। পরের ৪৬ রান আসে ৮৪ বলে। রান-বলের সমীকরণ যেমনটি বলছে, তার ব্যাটিংয়ের ধরনও ছিল তেমনই।
উইকেটে যান তিনি ম্যাচের শুরুর দিকেই। উদ্বোধনী জুটি বড় না হলেও ততক্ষণে বেশ ইতিবাচক শুরু পেয়ে গেছে দল। তানজিদ হাসানের ১৭ বলে ২২ রানের সৌজন্যে চতুর্থ ওভারে রান তখন ২৮। শান্ত উইকেটে গিয়েও সেই ধারাটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন।
ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ফাজালহাক ফারুকির বলে পুল করে চার মারেন তিনি। একটু পরে আরেকটি চার মারেন মোহাম্মদ নাবিকে, গুলবাদিন নাইবের প্রথম ওভারেও পুল করে আদায় করেন বাউন্ডারি। নাবির একটি ডেলিভারি একটু খাটো লেংথের পেয়ে উড়িয়ে দেন ছক্কায়।
সৌম্য সরকার মন্থর শুরুর পর তখন ছন্দ পেতে শুরু করেছেন। দুজনের জুটিও জমে উঠেছিল ভালোই। কিন্তু সৌম্যর পথচলা থামে ৩৫ রানে। জুটি শেষ হয় ৭১ রানে।
ওই ছক্কার পর থেকেই একটু গুটিয়ে গিয়েছিলেন শান্ত। সৌম্যর বিদায়ের পর আরও সাবধানী হয়ে ওঠেন তিনি। গত ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো অনুভব করতে পারছিলে, এই উইকেটে টিকে থাকা এবং দলের ইনিংসের হাল ধরা জরুরি।
সেভাবেই আর কোনো ঝুঁকি তিনি নেননি। পঞ্চাশে পা রাখেন ৭৫ বলে। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি। এই জুটির ৫৩ রান আসে ৮৩ বলে।
রাশিদ খানের দুর্দান্ত গুগলিতে মিরাজ ২২ রানে বোল্ড হলেও শান্ত ফিফটি পেরিয়ে একইরকম সতর্ক ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন শান্ত।
রান-বলের ব্যবধান কমিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল শেষ দিকে। কিন্তু ৪০ ওভার শেষ হতেই হুট করে ধৈর্য হারিয়ে বসেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার নানগেলিয়া খারোটেকে আক্রমণে দেখেই হয়তা বড় শট খেলার সুযোগ দেখেন তিনি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারেন। কিন্তু বেশি জোরে শট খেলার চেষ্টাতেই হয়তো টাইমিংয়ে একটু গড়বড় হয়ে যায়। লং অফ সীমানায় ধরা পড়েন নাবির হাতে।
আউট হয়ে ফেরার পর নিজের ওপরই প্রচণ্ড বিরক্তি দেখা যায় তার শরীরী ভাষায়।
শান্তর পর ওই ওভারেই মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে হঠাৎ বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে দলকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন নাসুম আহমেদ ও জাকের আলি। গত বিশ্বকাপের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে ২৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলেন নাসুম।
২৭ বলে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে জাকের ছক্কা মারেন তিনটি। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে ওয়ানডেতে তিনটি ছক্কা মারতে পেরেছেন আর কেবল সাব্বির রহমান।
আগের ম্যাচে ২৩৫ রান করেই বড় ব্যবধানে জিতেছে আফগানিস্তান। খেলা হচ্ছে একই পিচে। ২৫২ রানের পুঁজি নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরানোর আশা তাই বাংলাদেশ করতেই পারে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সত্যিই জিতে গেলে, শান্তর ইনিংসটিই হবে জয়ের ভিত্তি। তবে দলের এই পুঁজি যদি যথেষ্ট না হয়, মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য তখন আঙু্ল উঠবে অধিনায়কের দিকেই!