৪৫ বছরের ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন চ্যাপেল

বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ধারাভাষ্যেও নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির উচ্চতায়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 12:38 PM
Updated : 15 August 2022, 12:38 PM

ইয়ান চ্যাপেল আর ধারাভাষ্য, প্রায় যেন সমার্থক। মাঠের ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবে চার দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার তার। মাইক্রোফোন হাতে ক্ষুরধার ক্রিকেট বিশ্লেষণ আর খোলামেলা মন্তব্য দিয়ে তৈরি করেছেন স্বকীয় অবস্থান। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য সেই অধ্যায়ের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি।

৭৮ বছর বয়সী চ্যাপেল সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ধারাভাষ্যকক্ষে তার ৪৫ বছরের বর্ণিল উপস্থিতির ইতি ঘটল এতে।

কয়েক বছর ধরেই চ্যাপেলের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে তার স্কিন ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। একবার মাইনর স্ট্রোকও হয়েছিল। অবসর ভাবনায় এই বিষয়গুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানালেন চ্যাপেল।

“সেই দিনটির কথা মনে পড়ছে, যখন বুঝে গিয়েছিলাম, যথেষ্ট ক্রিকেট খেলে ফেলেছি। ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখি ১১ টা ৫ বাজে। তখনই মনে হলো, খেলার এই সময়েই যদি ঘড়ি দেখতে হয়, তার মানে আমার বিদায়ের সময় হলো।”

“ধারাভাষ্যের ক্ষেত্রেও আমি এরকমই ভাবছিলাম। কয়েক বছর আগে আমার ছোট্ট স্ট্রোক হয়েছিল, ভাগ্য ভালো যে বেঁচে গেছি। কিন্তু এরপর সবকিছুই কঠিন হয়ে ওঠে। এত এত ভ্রমণের কথা ভেবেছি শুধু, এছাড়া সিড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা এবং ধরনের ব্যাপারগুলো, সবই কঠিন হয়ে উঠছিল।”

চ্যাপেলের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারও ছিল দারুণ সমৃদ্ধ। ৭৫ টেস্টে ১৪ সেঞ্চুরিতে ৫ হাজার ৩৪৫ রান তার ৪২.৪২ গড়ে। ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন স্রেফ ১৬টি। তাতেই ফিফটি ৮টিতে। অস্ট্রেলিয়াকে ৩০ টেস্ট ও ১১ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়া।

ব্যাটিংয়ে তিনি ছিলেন আগ্রাসী, সেটি প্রভাব ফেলেছিল তার নেতৃত্বেও। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সেরা অধিনায়কদের একজন মনে করা হয় তাকে।

খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিকে ধারাভাষ্যে নাম লেখান তিনি। পরে এখানেও এত সফল ক্যারিয়ার যে অনেক সময় তা ছাপিয়ে গেছে যেন তার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারকেও।

ধারাভাষ্যে যে মানদণ্ড তিনি তৈরি করেছেন নিজেকে দিয়ে, সেখানে কোনো কালির আঁচড় পড়তে দিতে চান না বলেও অবসরের এই সিদ্ধান্ত, জানালেন চ্যাপেল।

“অবসর নিয়ে র‌্যাবিটসের (কিংবদন্তি রাগবি ধারাভাষ্যকার) একটি লেখা পড়লাম, এটা আমাকে আরও ভাবিয়ে তুলল। তিনি বলেছেন, ‘ভুল করা থেকে কেবল একটি বাক্যই দূরে আছেন আপনি।’”

তার ৪৫ বছরের ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারের তিন দশকের বেশি কেটেছে চ্যানেল নাইনের সঙ্গে। রিচি বেনো, বিল লরি, টনি গ্রেগের মতো কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে চ্যাপেলও ছিলেন ক্রিকেটের সবচেয়ে পরিচিত কণ্ঠগুলোর মধ্যে।

চ্যানেল নাইনের সঙ্গে দীর্ঘ এই পথ চলা বেশ উপভোগ্য হলেও মাঝে মধ্যে যে তিক্ততা হয়নি, তা নয়। বিদায় বেলায় চ্যাপেল অকপটেই বললেন তা।

“ক্যারি প্যাকার (চ্যানেল নাইনের মালিক ও ক্রিকেট সম্প্রচারে বিপ্লব ঘটানো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব) আমাকে কয়েকবার ছাঁটাই করতে চেয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটের গুণগান গাওয়া ছিল তার চাওয়া, কারণ এটি ছিল তার কাছে সন্তানের মতো। আমি ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে হয়তো কিছু বলতাম। ক্যারির ব্যাপারটি ছিল ঝড়ের মতো, পরেরটি আসার আগ পর্যন্ত বইয়ে দিতে যেতে হতো।”

ধারাভাষ্যকার চ্যাপেলকে কীভাবে মনে রাখবে মানুষ, এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

“এটা লোকের ওপরই নির্ভর করবে, তারা আমার সম্পর্কে কীভাবে ভাবে। কেউ কেউ বলবে আমি ভালোই করেছি, কেউ বলবে আমি ছিলাম হাস্যকর। এসব আমাকে একটুও ভাবায় না।”