চট্টগ্রামের দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে ফিফটি করলেন তামিম ইকবাল, দর্শকদের দারুণ সমর্থন নিয়ে জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু করল বরিশাল।
Published : 16 Jan 2025, 05:23 PM
খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। প্রথম বল মাঠে গড়াতে গড়াতে প্রায় পূর্ণ জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের গ্যালারি। বেশিরভাগ দর্শকের গায়েই ফরচুন বরিশালের লাল জার্সি। সমর্থকদের হতাশ করেনি দলটি। চমৎকার সম্মিলিত বোলিং পারফরম্যান্সের পর তামিম ইকবালের ফিফটিতে জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু করল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
তানজিদ হাসান ছাড়া ব্যর্থ হন ঢাকা ক্যাপিটালসে সব ব্যাটসম্যান। টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৬২ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু অন্যদের সমর্থন না পাওয়ায় মাত্র ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ঢাকার ইনিংস।
রান তাড়ায় তামিমের সঙ্গে দাভিদ মালানের শতরানের জুটিতে ৮ উইকেটের জয় পায় বরিশাল। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও বাকি ছিল ২৪ বল।
ছয় ম্যাচে বরিশালের এটি চতুর্থ জয়। পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে তারা। আট ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে তলানিতেই ঢাকা।
খোলসবন্দী লিটন, হতাশায় শুরু ঢাকার
সিলেটে সবশেষ দুই ম্যাচে ৭৩ ও ১২৫ রানের ইনিংস খেলা লিটন কুমার দাস চট্টগ্রামে এসে যেন ছন্দই খুঁজে পেলেন না। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে করতে ড্রেসিং রুমের পথ ধরলেন তিনি। একাদশে ফেরা রিপন মণ্ডলের বলে আউট হলেন ১৭ বলে ১৩ রান করে।
তিন নম্বরে নেমে মুনিম শাহরিয়ারও কিছু করতে পারেননি। অন্য প্রান্তে তানজিদও শুরুতে রানের গতি তেমন বাড়াতে পারেননি। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৭ রান করতে পারে ঢাকা।
দলের পঞ্চাশ হওয়ার আগে লিটন-মুনিমের পথ ধরেন আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা নামিবিয়ার ব্যাটসম্যান জেপি কোটজে।
তানজিদের লড়াই, বাকিদের ব্যর্থতা
বাজে শুরুর পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ঢাকা। একপ্রান্ত ধরে রেখে দলের রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন তানজিদ হাসান। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে কোনো সহায়তা পাননি বাঁহাতি ওপেনার।
দশম ওভারে তানভির ইসলামের বল ছক্কায় ওড়ান তানজিদ। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন সাব্বির রহমান। তবে দুই বল পরই তাকে ফিরিয়ে দেন তানভির।
ওই ওভারের শেষ বল ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন থিসারা পেরেরা। দারুণ ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
পঞ্চদশ ওভারে ৩৯ বলে পূর্ণ হয় তানজিদের পঞ্চাশ। পরের ওভারে তানভিরের প্রথম বলে ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক হোসেন। পরে অদ্ভুত এক শট খেলে ক্যাচ দেন তিনি।
পরের চার বলে একটি করে ছক্কা মারেন ফারমানউল্লাহ শাফি ও তানজিদ। ২০ রানের ওভারে প্রথমবার সাতের বেশি হয় ঢাকার রান রেট।
ফাহিম আশরাফের বলে ওয়াইড লং দিয়ে নিজের চতুর্থ ছক্কা মারেন তানজিদ। পরের বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৪৪ বলে ২ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় করেন ৬২ রান।
শেষ দিকে ১ চার ও ২ ছক্কায় ১৬ বলে ২২ রান করেন শাফি।
খরুচে তানভিরের ৩ উইকেট
বরিশালের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পেলেও ৩ ওভারে ৩৯ রান খরচ করে ফেলেন তানভির। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন ফাহিম।
ফের ব্যর্থ শান্ত
টানা তিন ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হওয়ার পর রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪১ রানের ইনিংসে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু ঢাকার বিপক্ষে আবার হতাশ করলেন তিনি (৩ বলে ২ রান)।
তামিম-মালানের জুটি, বরিশালের জয়
শুরুতে শান্তকে ফেরানোর পর আর আনন্দের উপলক্ষ পায়নি ঢাকা। দ্বিতীয় উইকেটে ৮০ বলে ১১৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান তামিম ও দাভিদ মালান।
মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম দুই ওভারে একটি করে বাউন্ডারি মারেন তামিম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার বলে মারেন আরেকটি চার। প্রথম ৬ ওভারে বরিশাল করে ৪৭ রান।
এরপর একই ছন্দে এগোতে থাকেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। রানের কোনো চাপ না থাকায় তাড়াহুড়ো না করে সাবলীল ব্যাটিংয়েই বড় জুটি গড়েন তারা। ত্রয়োদশ ওভারে পূর্ণ হয় বরিশালের একশ রান।
পরের ওভারে চলতি টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন তামিম ৪৪ বলে। পঞ্চাশ করার পর পেরেরার বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে বড় ছক্কা মারেন বরিশাল অধিনায়ক। দুই বল পর সোজা ব্যাটে মারেন বাউন্ডারি।
ওভারের শেষ বলে পেরেরার ইয়র্কার লেংথ ডেলিভারি পায়ে লেগে বোল্ড হন তামিম।
পরে জাহান্দাদ খানকে নিয়ে মাত্র ৬ বলে বাকি থাকা ১৫ রান করে ফেলেন মালান। ২ ছক্কায় ৪ বলে ১৩ রান করেন জাহান্দাদ। মাত্র ১ রানের জন্য পঞ্চাশ করতে পারেননি আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মালান। ৪১ বলের ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা ক্যাপিটালস: ১৯.৩ ওভারে ১৩৯ (তানজিদ ৬২, লিটন ১৩, মুনিম ০, কোটজে ৮, সাব্বির ১০, পেরেরা ০, মোসাদ্দেক ১১, শাফি ২২, চাতুরাঙ্গা ১, আবু জায়েদ ১, মুস্তাফিজ ১*; জাহান্দাদ ৩.৩-০-১৫-১, রিপন ৪-০-২৭-১, নাবি ৪-০-২৯-০, ফাহিম ৪-০-২৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৩৯-৩)
ফরচুন বরিশাল: ১৬ ওভারে ১৪৫/২ (তামিম ৬১, শান্ত ২, মালান ৪৯*, জাহান্দাদ ১৩*; মুস্তাফিজ ২-০-১৪-০, আবু জায়েদ ৩-০-২৮-১, শাফি ২-০-১৭-০, চাতুরাঙ্গা ২-০-১৮-০, মোসাদ্দেক ৪-০-৪৩-০, পেরেরা ৩-০-২৫-১)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল