বিসিবি সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তামিম ইকবাল বেশ কিছু দিন ধরেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আরও অনেক নতুন সম্ভাবনার হাতছানি আছে তার সামনে।
Published : 11 Jan 2025, 06:48 PM
ধারাভাষ্যে তামিম ইকবালের অভিষেক হয়ে গেছে আগেই। দেশের বাইরে ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তার হয়ে গেছে। এই পরিচয় কি এখন পাকাপোক্তভাবে লেগে যাবে গায়ের সঙ্গে? নাকি সামনে তাকে দেখা যাবে ক্রিকেট প্রশাসনে! সম্ভাবনা আছে এমন অনেক কিছুরই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণার পর নতুন অনেক সম্ভাবনাই তৈরি আছে বাংলাদেশের সফলতম ওপেনারকে স্বাগত জানাতে।
আগে অবশ্য মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেনও খেলা এখনও পুরোপুরি ছাড়েননি তামিম। চলতি বিপিএলে ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। গত আসরের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক ও টুর্নামেন্টসেরা ক্রিকেটার এবারও চাইবেন সাফল্যের এই যুগলবন্দির স্বাদ আবার পেতে।
আগামী মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলবেন তিনি। গত মৌসুমে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবে খেলা ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন তার পুরোনো ঠিকানা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি এবার দারুণ শক্তিশালী দল গড়েছে ক্রিকেটের শিরোপার ভুলে যাওয়া স্বাদ ফিরে পেতে।
আগামী বিপিএলে তাকে খেলতে দেখা যাবে কি না, এটি অবশ্য নিশ্চিত নয়। ঘনিষ্ঠজনদের তিনি বলেছেন, পরের বিপিএল খেলার ব্যাপারটি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি সময়ের হাতে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা এখন দিলেও বিরতি ছিল প্রায় ১৫ মাস ধরে। তবে তখনও ‘সাবেক’ না হওয়ায় সাবেকদের ক্রিকেটে তাকে দেখা যায়নি। এখন আর কোনো মানসিক বা অন্য বাধ্যবাধ্যকতা নেই। ‘লেজেন্ডস লিগ’ এখন ক্রিকেটবিশ্বে বেশ কটি হয় নিয়মিতই। তামিম সবকটিতে না খেললেও দু-একটি আসরে খেলবেন নিশ্চিতভাবেই।
ধারাভাষ্যে তিনি আলাদা করে নজর কেড়েছেন এর মধ্যেই। দেশে বিপিএলে ধারাভাষ্য দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সিরিজে দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশ দলের ভারত সফরে পুরো সিরিজে ধারাভাষ্য দিয়েছেন এবং দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছেন। ধারাভাষ্যের জন্য অনলাইনে কোর্সও করেছেন তিনি। পেশাদার ধারাভাষ্যকার হওয়ার কোনো ইচ্ছে অবশ্য তার এখনও নেই। তবে অনেক সিরিজেই তাকে দেখা যাবে বা আরেকটু নিয়মিত হবেন তিনি নিশ্চিতভাবেই। বিশেষ করে, বিশ্ব আসরগুলোতে তাকে হয়তো এখন দেখা যাবে ধারাভাষ্যকার কিংবা বিশেষজ্ঞ হিসেবে। আগেও এরকম প্রস্তাব তিনি পেয়েছেন, তবে নানা কারণে করতে রাজি হননি তখন।
খেলোয়াড়-পরবর্তী জীবনে তামিমের সবচেয়ে বড় চাওয়া কিংবা আকাঙ্ক্ষা যেটি, সেই পথেই অবশ্য অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি। প্রকাশ্যে বা আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি কখনও যদিও বলেননি, তবে নানা আড্ডায় ও ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে তিনি কাজ করতে চান এবং বিসিবিতে আসতে চান। সেটা স্রেফ বোর্ড পরিচালক হিসেবেই নয়, একদম শীর্ষ পদে আসার স্বপ্নই আছে তার।
গত অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পথ ধরে বিসিবিতে নাজমুল হোসেনের দীর্ঘ রাজত্বের অবসান হয়। পালাবাদলের ওই সময়টায় তামিমের নামও শোনা গেছে সম্ভাব্য নানা ভূমিকায়। ফারুক আহমেদ যখন বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নিলেন, এর আগে সম্ভাব্য একজন হিসেবে আলোচনায় ছিল তামিমের নামও। বোর্ড পরিচালক হিসেবেও তাকে ভাবা হয়েছিল ওই সময়টায়।
নানা বাস্তবতায় তখন হয়ে ওঠেনি। তামিম নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে ছিলেন, যেহেতু তখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেননি, বিপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন, এমন অনেক প্রশ্নের জালে বন্দি ছিলেন তিনি নিজেই। তবে একদিন তিনি বিসিবি সভাপতি হতে চান, এটা তিনি নানা মহলে নানা সময়ে বলেছেন স্পষ্ট করেই।
সেই ‘একদিন’ আসবে কবে, আপাতত কৌতূহল সেদিকেই। তবে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টেনে সেই দিনটির দিকেই তার হাঁটা শুরু হলো, এটা অন্তত বলা যায়।